আমাদের চারপাশের বিশেষত: গ্রামের অধিকাংশ অবিভাবকগণ ভাবেন যে ছেলে-মেয়েতো ইন্টার / বিএ/ অনার্স পাশ করে ফেলেছে; নিশ্চয়ই এখন সে যে কোন একটা চাকুরী পেয়ে যাবে এবং এখন থেকেই পরিবারের হাল ধরবে। আর পিতা হিসেবে উনি সংসার নামক গ্লানি টানার মেশিন থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি পাবেন। সংসারে আর্থিক স্বচ্ছলতা আসবে আর পিতা হিসেবে উনার সামাজিক মর্যাদাও বৃদ্ধি পেতে শুরু করবে। বাজার কিংবা হাটে যেয়ে ভদ্রলোক এতোদিন পয়সা ওয়ালা স্বচ্ছল ব্যাক্তিবর্গের ভিড়ে আর আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে বিশাল আকৃতির রুই মাছটি উনি ক্রয় করতে পারেননি তা এবার ক্রয় করে সবাইকে চমকে দেবেন! কিন্তু বাস্তবে কিন্তু বেশী ঘটছে ঠিক এর ঠিক উল্টোটা।
গ্রাম প্রধান আমাদের এই দেশে কোনো ভাবে একটু পড়াশোনা করলেই খুব ভালো চাকুরীর ব্যাবস্থা হয়ে যাবে; এই ভাবনাটি আসলে কতখানি যৌক্তিক? যদিও স্বপ্ন কিন্তু কোন যুক্তির ধার ধারেনা।
আবার আমাদের আর্থসামাজিক পেক্ষাপটে যেখানে শিক্ষার আসল উদ্যেশ্যই হলো অর্থ উপার্জন বা আত্ননির্ভরশীল হওয়া তথা পরিবারের হাল ধরা ‚ সেখানে পড়াশোনা করলেই চাকুরী পেয়ে যাবে – এই ভাবনা ভাবা মোটেও অবান্তর কিছু নয়।
প্রশ্ন হচ্ছে: আমাদের শিক্ষা ব্যাবস্থা আসলে কতোটা চাকুরী বা কর্মসংস্থান সহায়ক সেটা নিয়ে। দেশে স্বভাবতই সরকারি চাকুরীর চেয়ে বেসরকারি চাকরির আধিক্য অনেক গুন বেশী। আর সেখানে জব করতে গেলে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি নূন্যতম কি কি যোগ্যতা আর দক্ষতা থাকা প্রয়োজন তা কিন্তু গ্রামের অবিভাবকগণ বুঝবেন না সেটাই স্বাভাবিক। শুধু অবিভাবক কেন‚ আমাদের নীতিনির্ধারকগণও এসব নিয়ে মোটেও মাথা ঘামান কিনা সন্দেহ আছে।
পড়াশোনা শেষ করে যে নিজেই নিজের তথা অন্যের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা যায়; সেটা আমরা বেমালুম ভুলে গেছি। শুধু তাই নয় ‚ ব্রিটিশদের শিখিয়ে যাওয়া কেরানী গিরিকেই সমাজ আজও উচ্চ আসনে বসিয়ে রেখেছে। হাজারো সমস্যা স্বত্বেও কেউ নিজে উদ্যোগী হয়ে কিছু শুরু করতে চাইলে বরং আমরা সবাই নিরুৎসাহিতই করে থাকি।
আবার সরকারি চাকুরীতেও রয়েছে নানান সীমাবদ্ধতা। এক বিসিএস ছাড়া অন্যসব সরকারি চাকুরীর নিয়োগে সাধারণত জনগণ আস্থা রাখতে পারছেন বলে মনে হয়না। ফলে সন্তানের ভবিষ্যৎ ভাবনায় তারা এক শ্রেণীর দালাল আর ফটকাবাজ লোকজনের শরনাপন্নও হচ্ছেন।
একসময় ছিল ‚ বিদেশে নামক দেশে যেতে লক্ষ লক্ষ টাকা লাগে। তার আগে দালাল ধরতে হয়। যিনি পাসপোর্ট বানাতে সহায়তা করতেই হাজার বিশেক টাকা হাতিয়ে নিতেন। সেই বিদেশে যেতে এখনো দালালদের সেই দৌরাত্ম্য আছে আগেরমতোই। বরং দালালদের দৌরাত্ম্যের পরিধি বেড়েছে যারা সরকারি চাকুরীর লোভ দেখিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে অসহায় পিতার কৃষি জমি তথা শেষ সম্বল ভিটেমাটি টুকু। শুধু তা -ই নয় ‚ লোকমুখে শুনেছি ১০/১২ লক্ষ টাকা খরচ করেও নাকি অনেক ক্ষেত্রে মিলছে না সরকারি চাকুরী নামক সোনার হরিণ ! অথচ আমাদের পুরো শিক্ষা ব্যাবস্থাটা কে কর্মমুখী আর পরিপূর্ণ ভাবে ঢেলে সাজালে জনসংখ্যাধিক্য পুরো যুব সমাজকে কাজে লাগিয়ে দেশের শিল্প আর বানিজ্য তথা দেশকে দ্রুত এগিয়ে নেয়া যেতো।
পড়াশোনার পাশাপাশি দরকারি দক্ষতার উন্নয়নও জরুরী।
সো যেহেতু শিক্ষা ব্যাবস্থা ঢেলে সাজানোর কাজটি আমার – আপনার নিয়ন্ত্রের বাইরে , তাই আসুন পড়াশোনার পাশাপাশি নিজেকে চাকুরী বাজারের জন্য যোগ্য হিসেবে গড়ে তুলি ; নিজ নিজ লক্ষ্য অনুযায়ী প্রয়োজনীয় কাজের দক্ষতা অর্জনের পাশাপাশি দরকারি কর্পোরেট নেটওয়ার্ক গড়ে তুলি। কিংবা নিজ উদ্যোগে নিজেই কোন কর্মসংস্থানের দিকে এগুতে চাইলে আগে থেকেই সেজন্য প্রস্তুতি তথা সহায়ক দক্ষতা অর্জনে সচেষ্ট হই , তবে ক্যারিয়ারের সাফল্যের দেখা মিলতে পারে।
শুভ হোক আপনার ক্যারিয়ার পথচলা।
2 Comments
আপনার “স্বপ্ন আর বাস্তবতার” গল্পটা পড়ে ভালো লেগেছে ।আপনার ভালো লিখার ধারাবাহিকতা বজায় রাখবেন ধন্যাবাদ ।
Thank your very much!