২০১০ সাল। ব্যবসায় প্রশাসনে সবেমাত্র গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেছি। মার্কেটিং-এ পড়াশোনার সুবাদে ক্যারিয়ার হিসেবে কেন জানি ব্র্যান্ডিংকে বেছে নিয়েছিলাম। তো,কোন এক সুন্দর সকালে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সমেদ নতুন চাকুরীতে যোগদানের জন্যে হাজির হলাম; যথারীতি সবই ঠিকঠাক ভাবেই এগুচ্ছিলো। হঠাৎ সবকিছু টার্ন নিতে শুরু করলো এবং অনেকটা নাটকীয় ভাবে সেলসে সাইন ইন করে বসলাম!!
আসলে দু’ঘন্টার অসাধারণ এক ‘ওয়ান টু ওয়ান সেশন’ ক্যারিয়ার ট্র্যাক পরিবর্তন করে দিলো; সেলস সেক্টরে কাজ করতে কনভিন্সড হলাম। সেই গল্প অন্যদিন করবো!
তো যোগদানের পর বেশ কয়েক দিনের ইন্ডাকশান প্রোগ্রামে অংশ নিয়ে কোম্পানি ও বিভিন্ন ম্যানুফ্যাকচারিং প্রসেস, প্রোডাক্টস, বিভিন্ন ডিপার্টমেন্ট সমূহ কিভাবে কাজ করে সেসব নিয়ে একটি সম্যক ধারণা পেলাম।
এবার পোস্টিংয়ের পালা। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় হতে একসাথে ১২ জন জয়েন করেছিলাম। একে একে সবার পোস্টিং দেয়া হলো। আমার সিরিয়াল আসলো সবার শেষে এবং দেয়া হলো অপরিচিত সিলেট বিভাগে! অথচ আমি প্রত্যাশা করেছিলাম ঢাকা কিংবা চট্টগ্রামের মতো কোন জায়গায় পোস্টিং পাবো।
তখন এটা ভেবে খুব মন খারাপ হয়েছিলো যে অন্য সবাইকে ভালো ভালো জায়গায় পোস্টিং দেয়ার পর আমার ভাগ্যে জুটলো কিনা অপেক্ষাকৃত খারাপ জোন। এমনকি সিলেট শোনার পর অফিসের স্বল্প পরিচিত মানুষটিও জানি কেমন অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকাচ্ছিলো। কিছুটা অসহায়ও বোধ করেছিলাম; আর তাতেই কিনা জোন পাল্টানোর জন্যে বিগ বসদের অনুরোধ করে বসলাম।
অত্যন্ত সাবলীল কন্ঠে উত্তর আসলো – “সিলেটে পোস্টিং দেয়ার জন্যে কোন একদিন ফোন করে ধন্যবাদ জানাবেন, কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবেন; যান মন দিয়ে কাজ করেন, আশা রাখি ভালো করবেন।”
সেবার সিলেট-সুনামগঞ্জ জেলার দায়িত্ব পেয়ে এক বছর কাজ করেছিলাম। বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বে অবস্থিত প্রাচীন জনপদ হিসেবে খ্যাত সিলেট জেলার কানাইঘাট,গোয়াইনঘাট জৈন্তাপুর, কোম্পানগঞ্জ থেকে শুরু করে গোলাপগঞ্জ, ভাদেশ্বর, বালাগঞ্জ, বিশ্বনাথ, উসমানী নগর, দ. সুরমা; ঐদিকে হাসন রাজার জন্মভূমি সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক, বাংলা বাজার, দিরাই,জামালগঞ্জ, সাচনা বাজার, দোয়ারা বাজার, তাহিরপুর, জগ্ননাথপুর বাদ রাখিনি কোন রিমোট এরিয়াও।
বাইক, নৌকা, ট্রলার যাত্রা বাদ যায়নি কোনকিছু। ইউনিয়ন পর্যায়ের পকেট মার্কেটেও কোম্পানির পন্যের উপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্যে মাইলের পর মাইল ভ্রমণ করেছি। এসব করতে যেয়ে চেহারা সুরত পোড়া মবিলে রুপ নিয়েছিলো! যাকগে সেইসব কথা।
এরপরেও সিলেটে অসংখ্যবার কোম্পানির কাজে সিলেটে যাওয়া আসা করা হয়েছে। যতবার ভিজিটে এসেছি নস্টালজিয়ায় পড়েছি; মাঝেমধ্যেই সময় বের করে সেই প্রথমদিককার রিটেইলার ভাইদের সাথে দেখা করে খোঁজ খবর নেবার চেষ্টাও করেছি।
এবার মূল গল্পে ফিরে আসা যাক, গতকাল সিলেটে আসার পথে শ্রদ্ধেয় সেই বিগ বসকে ফোনে ধন্যবাদ জানালাম; ঘটনা স্বরণ করিয়ে দেয়ামাত্র তিনি ঈষৎ হেসে উঠলেন, সেই হাসির মধ্যে এধরনের পরিতৃপ্তির ছাপ স্পষ্ট বোঝা গেল।
আসলে সেলস সেক্টরে কাজ করেন এমন অনেকেই একমত হবেন যে- বাংলাদেশের অন্যান্য এলাকা থেকে সিলেট কিছুটা ক্রিটিক্যাল মার্কেট হিসেবে বিবেচিত বলে সেখানে কাজ করাটা বেশ চ্যালেঞ্জিং; এবং এখান থেকে আশানুরূপ রেজাল্ট বের করে নিয়ে আসাও তুলনামূলক কষ্টসাধ্য।
তো ক্যারিয়ারের একেবারে শুরুতে এমন কঠিন আর চ্যালেঞ্জিং কাজটি যিনি সুচারুরূপে করতে পারবেন পরবর্তীতে তিনি এ থেকে অর্জিত শিক্ষা কাজে লাগিয়ে তুলনামূলক ভাবে দ্রুত নিজেকে সামনে এগিয়ে নিতে সক্ষম হবেন।
তো এই লিখার সারমর্ম দাঁড় করানো যাক-
– সেলস ক্যারিয়ারের শুরুতে অধিক চ্যালেঞ্জ নিতে শিখুন, অহেতুক ঘাবড়ে যাবেন না;
– সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞদের মূল্যবান মতামত নিন,
– সর্বদা কৃতজ্ঞ থাকুন,
– কাজ করতে থাকুন আর ধীরে ধীরে সামনে এগিয়ে যান।।
এইতো!
সেলস লাইফ তথা সিলেটের সেলস নিয়ে আমার স্মৃতি কথন।
সেলস স্মৃতি কথা -২ তে চোখ বুলিয়ে নিন…
Follow me on Facebook . Check out my Website .
3 Comments
[…] […]
[…] […]
[…] পড়ুন সেলস ক্যারিয়ারের শুরুতে কি করব… […]