ইউনিভার্সিটি কিংবা কলেজ লাইফে আমরা অনেকেই খন্ডখন্ড অবসরকে অলসতায় গা ভাসিয়ে দিয়ে, শুয়ে বসে কিংবা অহেতুক আড্ডায় কাটিয়ে দিই যা আমাদের অনেকেরই পরবর্তী ক্যারিয়ার লাইফে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। আড্ডা অবশ্যই দিবেন কিন্তু সেটা যদি হয় দক্ষতা অর্জনের মাধ্যম তবে তো কথাই নেই; সেই সাথে যদি নিজের ক্যারিয়ার প্ল্যানিংটা ঠিকাঠাক রেখে পথ চলা যায় তবে আরো ভালো হয়। আর ক্যারিয়ার প্লানিংয়ের সঠিক সময় হলো ২য় বর্ষ। তাহলে আপনি ক্যারিয়ার গঠনে অধিক সময় পাবেন।
অনেককেই বলতে শুনি যে- সেমিস্টার কিংবা ইয়ার শেষের বিরতিতে বা সেশন জ্যামের সময়টায় কি করে কাটাবো? আদর্শ উত্তর হলো এটা নির্ভর করছে আপনি ভবিষৎে কি করতে চান কিংবা হতে চান অনেকটা তার উপর। তবে আসুন জেনে নিই বিস্তারিতঃ
বিসিএস প্রস্তুতি শুরু করতে পারেনঃ
ধরুন আপনি বিসিএস ক্যাডার হতে চান; তাহলে আজ থেকেই শুরু করে দিননা আপনার প্রস্তুতি! ভর্তি হয়ে যেতে পারেন কোন এক কোচিং-এ কিংবা বইপত্র কিনে পড়া শুরু করে দিতে পারেন। আমি নিশ্চিত আপনি আপনার বন্ধুদের থেকে অনেক এগিয়ে থাকবেন।
ব্যাংকে জব প্রিপারেশনের আদ্যোপান্ত জেনে নিতে পারেনঃ
আপনি কি ব্যাংক সেক্টরে ক্যারিয়ার গড়তে আগ্রহী হোন তবে ধরে নেন আপনাকে লিখিত পরীক্ষা এবং ইন্টার্ভিউর মুখোমুখি হতে হবে। চোখ রাখুন পত্রিকা কিংবা দেশের সবচেয়ে বড় জব পোর্টাল বিডিজবস সহ অন্যসব জব পোর্টালে। দেখতে পারেন কোন ব্যাংক কি ধরণের সিজিপিএ চাচ্ছে, কি কি কাজ করাবে নিয়োগ প্রাপ্তদের দিয়ে, বেতন ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা কেমন দিচ্ছে ইত্যাদি । খোঁজ করুন পাশের কোন বড় ভাই বা আত্মীয়ের যিনি একজন ব্যাংকার; লিখিত পরীক্ষা উৎরাতে উনার পরামর্শ নিন যা আপনার কাজে দেবে। তাছাড়া বই কিনে শুরু করে দিন ম্যাথ সহ অনন্য বিষয়ের উপর প্রস্ততি । চাইলে কোচিং সেন্টারেরও সহায়তা নিতে পারেন।
নামকরা দেশীয় কোম্পানি কিংবা বহুজাতিক কোম্পানীর জন্য প্রস্তুতি শুরু করতে পারেনঃ
যদি আপনি নামকরা দেশীয় কোন কোম্পানি কিংবা বহুজাতিক কোম্পানীতে কাজ করতে চান তবে আপনাকে শুরুতেই টোটাল ইন্ডাষ্টি সম্পর্কে একটি ভালো ধারণা নিতে হবে। জানতে হবে কোন কোম্পানি কিভাবে কর্মী নিয়োগ করেন, কি কি দক্ষতা আর যোগ্যতার প্রয়োজন পড়ে ইত্যাদি। এই সব কিছুর জন্য আপনি গুগলের সহায়তা নিতে পারেন, বিভিন্ন কোম্পানির ওয়েবসাইট ভিজিট করতে পারেন। আবার চাইলে খোঁজ করতে পারেন পাশের কোন বড় ভাই বা আত্মীয়ের যিনি নামকরা দেশীয় বা বহুজাতিক কোম্পানিতে কর্মরত আছেন, উনার প্রয়োজনীয় পরামর্শ নিন কাজে দেবে।
ইংলিশ ক্লাবে জয়েন করতে পারেনঃ
আন্তর্জাতিক ভাষা হিসেবে ইংরেজী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তার নতুন করে বলার কিছু নেই। তাই শুরু করে দিন ইংলিশ চর্চা যা সবচেয়ে বেশি আপনাকে সহায়তা করবে ক্যারিয়ারে এগিয়ে যেতে। অখণ্ড অবসরে ইংরেজিতে কথা বলার জন্য গ্রুপ বানিয়ে নিন, আড্ডা-ইংলিশ চর্চা দুটোই চলবে সমানে। কিংবা চাইলে জয়েন করতে পারেন কোন ইংলিশ ক্লাব, কোচিং অথবা ইংলিশ ডিবেট ক্লাবে।
কম্পিউটারে দক্ষতা অর্জন করতে পারেনঃ
আপনি যে সেক্টরেই কাজ করতে চান না কেন কম্পিউটারে দক্ষতা লাগবেই। তাই অখন্ড অবসরে এক্সেল আর পাওয়ার পয়েন্টের কাজে প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করে নিতে পারেন যা আপনাকে অন্যদের থেকে এগিয়ে রাখবে।
পার্ট টাইম জব শুরু করতে পারেনঃ
অখন্ড অবসরে চাইলে কোন পার্ট টাইম জবও করতে পারেন যাতে করে আপনার অভিজ্ঞতার ভান্ডার সমৃদ্ধ হবে যা পরবর্তী জীবনে কাজে আসবে। এখানে আপনি নিজেকে ম্যানেজ করার পাশাপাশি নিদিষ্ট ইন্ডাষ্টি সম্পর্কে জানার সুযোগ তৈরি হবে, নতুন কাজ শেখার সাথে সাথে নতুন লোকজনের সাথে মেশারও সু্যোগ হবে।
নিজেকে সামাজিক সংগঠনে সম্পৃক্ত করতে পারেনঃ
আপনি চাইলে কোন সামাজিক সংগঠনের সাথে যুক্ত হয়ে কাজ করতে পারেন। এতে করে সামাজিক দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি আত্নার তৃপ্তি যেমন পাবেন তেমনি নানা রকম দক্ষতাও অর্জন করতে পারবেন এবং সেই সাথে বেশ ভালো অভিজ্ঞতাও সঞ্চয় হবে।
ভ্রমণে বেরিয়ে পড়তে পারেনঃ
এসবের বাইরেও ভ্রমন নামে আরো ভিন্ন এক জগৎ রয়েছে আপনার-আমার জন্য। অখণ্ড অবসরে ঘুরতে বেরিয়ে পড়তে পারেন কোন নতুন জায়গাতে। প্রকৃতিকে কাছ থেকে দেখার পাশাপাশি বিভিন্ন সংস্কৃতি আর মানুষের দেখা মিলবে। আর এতে করে আপনার যে শিক্ষা অর্জিত হবে তা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস রুমে নাও পেতে পারেন।
আসলে বসে থাকবেন না, দুনিয়া বসে নেই; আপনিও সময়ের সঠিক ব্যাবহার আর দক্ষতা অর্জন করে সামনে এগিয়ে যান।