হঠাৎ চাকরি চলে গেলে কি করবেন?

সম্মান দেওয়ার এবং তা কেড়ে নেবার মালিক একমাত্র আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা; যা তিনি পবিত্র মহা গ্রন্থ আল কুরআনের সুরা আল-ইমরানের ২৬ নাম্বার আয়াতে বলে দিয়েছেন।
মজলুম বনাম জালিম
August 9, 2024
হঠাৎ চাকরি চলে গেলে কি করবেন?

অফিস শেষ করে বাসায় ফিরে ফ্রেশ হয়ে হালকা নাস্তা করেই হাঁটতে বের হয়ে গেলাম। আজ সকালে হাঁটতে যায় নাই, আর তাই সন্ধ্যার পর বের হওয়া। আজ ২৮শে কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, আর ইংরেজি নভেম্বর মাস চলছে, শীত শীত অনুভূত হচ্ছে মাত্র। আমি বসুন্ধরার যে রাস্তা ধরে হাঁটছি সেখানে হালকা বাতাস রয়েছে। সারা দিনের ধকল শেষে হাঁটতে বেশ ভালোই লাগছে। আমার আশেপাশে অনেকেই রুটিন মাফিক হাঁটতে এসেছেন। সবাই যে যার মতো করে কানে হেটফোন গুঁজে হাটছেন। আমি মানি ম্যানেজমেন্টের উপর এক ভদ্রলোকের ভিডিও ছেড়ে দিয়ে শুনছিলাম। যা হয় অধিকাংশ সময়, সাবেক সহকর্মী জীবনের ফোন কল।

আচ্ছা বস, এই যে মাঝেমধ্যে শুনি কোম্পানি ওকে ফায়ার করেছে, ওকে ফেলে দিয়েছে এসব নিয়ে একটু বলেন।‌ ওইযে হঠাৎ করে চাকরি চলে যাই, এটা নিয়ে একটু বলেন বস।‌

আপনি ঠিকই বলেছেন জীবন। বেসরকারি চাকরিতে এসব হরহামেশাই এমনটা হয়ে থাকে। তবে সব প্রতিষ্ঠানে এমনটা করে না। ‌ কিন্তু আপনাকে এই বিষয়টাকে কর্পোরেট জবের অংশ হিসেবেই মেনে নিয়েই কাজ করতে হবে।‌ কখনো যদি কোন কারণে আপনি এর মধ্যে পড়ে যান, হতাশ হওয়ার কিছু নেই। ‌ আমি আবারও বলছি হতাশ হওয়ার কিছু নেই। হতে পারে এমন কিছু আপনার সাথে ঘটে গেলে নিশ্চয়ই করে আপনার লজ্জা লাগবে, ইমোশন পেয়ে বসবে, বাসায় যেয়ে কি বলবেন, বন্ধুবান্ধবদেরকে কি বলবেন ইত্যাদি নানারকম চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খেতে পারে। মুহূর্তের মধ্যেই মানসিকভাবে প্রচন্ড প্রেসারে পড়ে যেতে পারেন।
এর কিছুক্ষণ পরেই সবচেয়ে বড় যেটা মনে আসতে পারে সেটা হচ্ছে, বাসা ভাড়া কোত্থেকে দিব তাহলে?  কিংবা বাচ্চার স্কুলের বেতন এবং অন্যান্য পারিবারিক খরচ কত থেকে আসবে? আরো শত শত উদ্বিগ্নতা পেয়ে বসতেই পারে। তারপরেও হতাশ হওয়া যাবে না। এবং কোন ভাবেই নিজেকে দোষারোপ করে কোন রকম আফসোস করা যাবে না।
চুপ করে থাকা জীবন বলে উঠলেন, কি বলেন বস? এত কিছু হয়ে গেলেও হতাশ হওয়া যাবে না?
না জীবন, হতাশ হওয়া যাবে না। বরং নিজেকে সামলে নিয়ে ফ্যামিলি এবং ফ্রেন্ডদেরকে ব্যাপারটা খোলাখুলি ভাবে বলে দেওয়াই ভালো। এরপরে আপনি আপনার কোম্পানির পে-রোল বিভাগের সাথে যোগাযোগ করেবেন। চাকরি থেকে বরখাস্ত হওয়ার পর কি কি বেনিফিট পাচ্ছেন লাইক প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্রাজুইটি, বকেয়া সেলারি, লিভ এনক্যাশম্যান্ট, ইত্যাদি মিলিয়ে কত টাকা পাচ্ছেন সেটা জেনে নিবেন। ‌আপনার ব্যক্তিগতভাবে কোথাও সেভিংস থাকলে সেসবের খোঁজখবর নিয়ে রাখবেন।
এর পরের কাজ হচ্ছে পরবর্তী ছয় মাসের জন্য একটা সার্ভাইভাল ফিনান্সিয়াল বাজেট তৈরি করা। আপনার যদি আগে থেকেই কোন রকম ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট ফান্ড থেকে থাকে তাহলে তো কোন চিন্তা-ই নেই নেই।  আর যদি সেরকম কিছু থেকে না থাকে তবে খুব স্বভাবতই আপনি অনেক খরচ কমিয়ে আনবেন যেহেতু ওই মুহূর্তে হাতে চাকরি নাই। ‌
রপরের কাজ হচ্ছে পরিবার এবং বন্ধুদের কাছ থেকে মানসিক সহায়তা কামনা করা। পরিবারের সাথে সময় কাটানো। এসব খুবই দরকার পজিটিভ ওয়েতে সামনে আগানোর জন্য। এরপর আপনার মেন্টরের সাথে পরবর্তী পরিকল্পনা নিয়ে আলাপ-আলোচনা করবেন, পরামর্শ চাইবেন। মোটামুটি একটা পরিকল্পনা করে ফেলবেন সামনের ছয় মাস আসলে কিভাবে লাগাবেন সেসব নিয়ে।
একটা নির্দিষ্ট পরিকল্পনা সাজানোর পর সম্ভব হলে অল্প কিছুদিনের জন্য কোথাও ট্যুর দিয়ে আসেন। প্রতিদিনকার অফিস রুটিনের বাইরে কিছুদিন একান্তে নিজের সাথে কাটান। সম্ভব হলে প্রাতঃভ্রমণের অভ্যাস না থাকলে এটা শুরু করেন। এটা মানসিক চাপ কমাতে টনিক হিসেবে কাজ করবে। সেই সাথে দৈনিক প্রার্থনা যোগ করেন, যেখানে আপনি বেশ একটা সময় ব্যয় করবেন।
সপ্তাহখানেকের বিরতির পর পরিকল্পনা অনুযায়ী সিভি নিয়ে বসেন। প্রাক্তন সহকর্মী থেকে শুরু করে, বিডি জবস ডট কম, লিংক ইন সহ অন্যান্য জব পোর্টালে আপনার ইন্ডাস্ট্রি রিলেটেড চাকরির খোঁজ নেন। নিয়মিত আবেদন করতে থাকবেন। এবং এসব নিয়মিত চালিয়ে যাবেন। সবচেয়ে ভালো হয় অফিস টাইমের মতো করে দিনের একটা নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করে নিলে। অফিসের মতো করেই সপ্তাহে ৫-৬ দিন নির্দিষ্ট সময় জব খোঁজা এবং আবেদনের পেছনে ব্যয় করবেন।  আপনার যদি মনে হয়ে থাকে কোনরকম দক্ষতার অভাব আছে আপনার মধ্যে, তাহলে সেসব পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় ট্রেনিং নিন। সবচেয়ে ভালো হয় নিয়মিত বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন যা বেশ কাজে দেবে।
আশা করা যায় অল্প কিছুদিনের মধ্যে ইন্টারভিউ ডাক পাওয়া শুরু করবেন। অবশ্যই ইন্টারভিউতে পজিটিভ থাকবেন কারণ আপনার এত বছরের কর্ম অভিজ্ঞতা কেউ নিয়ে যায়নি বরং আপনার কাছেই আপনার অভিজ্ঞতা রয়ে গেছে। অনেক কোম্পানি আছে যারা আপনার অভিজ্ঞতা আর দক্ষতাকে কাজে লাগাতে চায়। সুতরাং হতাশ হওয়ার কিছু নেই। ধৈর্য ধরে চেষ্টা করতে থাকবেন, উপরওয়ালার কাছে নিয়মিত প্রার্থনা করুন; আশা করা যায় খুব দ্রুতই আলোর দেখা মিলবে।
আশা করি উত্তর পেয়ে গেছেন। এবার আমাকে নিশ্চিন্তে হাঁটা শেষ করতে দিন, আরো বেশ কিছুক্ষণ হাটবো তারপর বাসায় ফিরবো।
জি বস, আল্লাহ হাফেজ।
আল্লাহ, হাফেজ। আসসালামু আলাইকুম।
Hossain Joy
Hossain Joy
Hossain Joy is a seasoned professional in the corporate world, bringing a wealth of experience and insights to the table. With a successful career spanning 12 years, he has navigated the intricacies of the corporate landscape with resilience and determination. Hossain Joy is not only an accomplished writer but also a mentor who is passionate about sharing the valuable lessons learned throughout his journey. He has authored the inspiring book "Journey to My First Corporate Job," offering a compelling narrative of his early career experiences, challenges, and triumphs. In addition to his book, Hossain Joy extends his reach through a thought-provoking blog, where he imparts practical advice and wisdom gained from years of corporate life. He aims to guide and inspire young professionals, providing them with the tools to navigate their own paths to success. Whether through the written word or personal mentorship, Hossain Joy remains dedicated to empowering the next generation of professionals, fostering a community of growth, resilience, and achievement. Connect with Hossain Joy on Facebook.com/Hossain.Joy for more insights and updates on his journey and upcoming projects.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *