ভ্রমণ আপনাকে আসলে কি দেবে ?

কিভাবে একজন ইয়ং লিডার হিসেবে দ্রুত টিমের শ্রদ্ধা অর্জন করবেনঃ 
January 12, 2018
কেন ইন্টার্নশীপ এতোটা গুরুত্বপূর্ণ?
January 14, 2018

ভ্রমন আপনাকে দৈনন্দিন রুটিন কাজ থেকে দূরে থাকার সুযোগ করে দিয়ে আপনার এক ঘেয়েমি দূর করে প্রশান্তি আর আত্নতৃপ্তি এনে দেবে

আমাদের আজকের তরুণেরা ভ্রমণের দিকে ঝুঁকছে আর তাতে তারা প্রকৃতি আর নানা সংস্কৃতির মানুষের সাথে মেশার ও তাদের জীবনাচারের সাথে পরিচিত হবার সুযোগ তৈরী হচ্ছে। আর এসব নিশ্চয়ই আমাদের তরুণদের জ্ঞানের পরিধি বাড়ানোর পাশাপাশি চিন্তা চেতনাকে সুসংহত করে তুলবে এবং সৃজনশীলতাকেও এগিয়ে নেবে।
আসলে ভ্রমণ শব্দটি কানে আসা মাত্রই যা মনে আসে তা হলো “ছুটি”! কর্মব্যাস্ত জীবনে কে না চাই একটু ছুটি, বিশ্রাম আর বিনোদনে ডুব দিতে? তাই সময় পেলেই আমরা বেরিয়ে পড়তে চাই নতুন কোন এক অজানায়। নতুন জায়গায় বেড়াতে যাওয়া শুধুমাত্র মানসিক প্রশান্তিই এনে দেয়না বরং মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষায়ও এর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। আর ভিন্ন সংস্কৃতি তথা নানা রকম মানুষের দেখা পাওয়া, খুব কাছ থেকে মানুষের জীবন আর জীবিকা দেখার এক দুর্লভ সুযোগ কেবল ভ্রমনের মাধ্যমেই সম্ভব। তাইতো এন্থোনি বোরডেইন  তরুণদের  উদ্দেশ্যে বলেছেন “আপনার বয়স যদি ২২ বছর হয়, আপনি যদি শারীরিকভাবে ফিট হোন তবে নতুন কিছু শেখার ক্ষেত্রে ক্ষুধার্ত থাকুন; সেক্ষেত্রে অধিক ভ্রমন করুন, প্রয়োজনে ফ্লোরে ঘুমিয়ে পড়ুন এবং দেখুন কত ভাবেইনা লোকজন জীবন–যাপন আর খাবার সংগ্রহ করে এবং রান্না করেন। তাদের থেকে শিখুন–আপনি যেখানেই যান না কেন।”

ভিন্ন সংস্কৃতি তথা নানা রকম মানুষের জীবন-জীবিকা কাছ থেকে দেখার এক দুর্লভ সুযোগ কেবল ভ্রমনের মাধ্যমেই সম্ভব।

 

ভ্রমণ আপনাকে নব উদ্যম এনে দেবেঃ

ভ্রমন বিশেষতঃ নিজ দেশের বাইরের ভ্রমন যেখানে আপনি নতুনসব অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হবেন যা আপনাকে নব উদ্দ্যেমের পাশাপাশি নিজেকে নতুন করে জানতে আর মূল্যায়ন করতে শেখাবে, এই ভ্রমন আপনাকে নতুন নতুন উপলব্ধি এনে দেবে যা আপনি পূর্বে কখনো ভাবেননি। এই যেমন ট্যাকিং, কায়াকিং, রক ক্লাইম্বিং, রেফটিং, প্যারাগ্লাইডিং করার পর আপনার মধ্যে এক ধরণের আত্নবিশ্বাস যোগাবে যা আপনাকে অসম্ভবকে সম্ভব করতে শেখাবে।

 

আবার আমাদের প্রায় সবার জীবনেই অনেক বাঁক থাকে; কারো দীর্ঘদিনের সম্পর্ক ভেঙ্গে যায়, কেউবা পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়, ব্যবসা বা চাকুরীতে সমস্যা দেখা দেয়, কেউবা কঠিন কোন রোগে আক্রান্ত হয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে থাকেন। এই দুঃসময় গুলো কাটিয়ে নতুন করে জীবন সাঁজাতে একটি সুন্দর ভ্রমণ আপনাকে সহায়তা করতে পারে। ব্যাগ গুছিয়ে নিচিন্তে হারিয়ে যেতে পারেন কোন এক নতুন জায়গায়। চাইলে ট্যাকিং করে আসতে পারেন সপ্তাহ খানেকের জন্য সেক্ষেত্রে নেপালকে বেঁছে নিতে পারেন যেখানে তুলনা মূলক স্বল্প খরচে আপনি অনেক বৈচিত্রের দেখা পাবেন। সবুজে ঘেরা পাহাড়ে ট্যাকিং করতে করতে হিমালয়ের অন্নপূর্ণার দেখা পেতে চলে যেতে পারেন অস্ট্রেলিয়ান ক্যাম্পে কিন্তু সেজন্য আপনাকে আগে কাঠমুন্ডু থেকে বাস ধরে পোখারায় চলে যেতে হবে। পাহাড়ি রাস্তা ধরে বাস চলতে থাকবে আর আপনি প্রকৃতি দেখে বিমোহিত হতে থাকবেন। ভোর বেলা শুরু করা ট্যাকিং আপনাকে সারা দিনই মজার সব অভিজ্ঞতা দিয়ে যাবে। দিনের ট্যাকিং শেষে রাতে গাঁ এলিয়ে দিতে সেখানে কম খরচে ভালো মানের হোটেলের পাশাপাশি ভোজন রসিকদের জন্যও নেপালি স্থানীয় খাবারের ব্যবস্থা আছে। আরো রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা নিতে চাইলে তাবু টানানো ক্যাম্পেও রাত্রি যাপন করতে পারেন।

 

পোখারা যাওয়ার পথে প্রকৃতির রুপ আপনাকে বিমোহিত করবে

 

প্রশান্তি আর আত্নতৃপ্তি  এনে দেবেঃ 

ভ্রমন আপনাকে দৈনন্দিন রুটিন কাজ থেকে দূরে থাকার সুযোগ করে দিয়ে আপনার এক ঘেয়েমি দূর করে প্রশান্তি আর আত্নতৃপ্তি এনে দেবে। নতুন নতুন ঘটনা আর অভিজ্ঞতা আপনার ব্রেইনকে নতুন করে নাড়া দেবে যাতে আপনার মনোভাবে পরিবর্তন আসবে এবং আত্নবিশ্বাসও বাড়বে। স্বাভাবিকভাবেই কারো পক্ষে সারা জীবন একই জায়গায় জীবনভর একই ভাবে কাটিয়ে দেয়া বেশ দুরূহ ব্যাপার। তারচেয়ে ববং নতুন নতুন জায়গায় ভ্রমন জীবনকে বেশ অর্থবহ করে তুলে। আমাদের দেশের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে- পিছিয়ে পড়া অধিকাংশ মা-বোনেরা বছরের পর বছর একই জায়গায় সারা জীবন কাটিয়ে দেয় ফলে একদিকে যেমন পুরো পৃথিবীটা-ই তাদের কাছে অচেনা রয়ে যায় তেমনি এটা তাদের মানসিক স্বাস্থের জন্য বেশ হুমকি স্বরূপ। তাই পরিবারের অন্যদের উচিৎ সাধ্যমতো পরিবারের নারী সদস্যদের একটু ভ্রমনের সু্যোগ করে দেয়া যাতে করে তারাও অজানাকে জানার সু্যোগ পায়।

 

 ভ্রমণ আপনাকে প্রাণবন্ত করে তুলবেঃ

নতুন কোথাও বেড়াতে যাওয়া এবং সেখানে অবস্থান করার ফলে আপনার মনে স্বাভাবিকভাবেই উদ্দীপনা আর সেই সাথে এক অজানা শিহরণ কাজ করবে যা আপনার মানসিক দৃঢ়তা বাড়ানোর পাশাপাশি প্রাণোচ্ছলতায় ভরিয়ে তুলবে। আবার চলতি পথে অপরিচিত পরিবেশে বিভিন্ন কঠিন সমস্যার মুখোমুখি হওয়া, নতুন সব মানুষের সাথে মিলেমিশে চলা আপনাকে অনেক কিছু শিখতে এবং নিজের  কমফোরট জোনের বাইরের বিষয় সমূহ মানিয়ে নিতে বাধ্য করবে। যা আপনাকে আরো নমনীয়, ধৈয্যশীল এবং মানসিক ভাবে শক্ত করে তুলবে। এমনও হতে পারে যে বিদেশ ভ্রমনে আপনি ছিনতাইয়ের শিকার হয়ে অর্থকড়ি আর পাসপোর্ট খুইয়েছেন। কিংবা গাড়ি এক্সিডেন্ট করে হাসপাতালের বিছানায় নিজেকে আবিষ্কার করার পর দেখলেন আপনার দেশে ফেরার জন্য বিমানের টিকেট কেটে রেখে ছিলেন সেই বিমান যাত্রার নিদিষ্ট টাইম পার হয়ে গেছে। এমন সব কঠিন পরিস্থিতিতে নিজেকে সামলে নিয়ে সব কিছু ম্যানেজ করার অভিজ্ঞতাটুকু আপনি অর্জন করতেই পারেন যা জীবনের অন্যসব কঠিন পরিস্থিতি সামাল দিতে কাজে আসবে।

 

ভ্রমণ আপনার সৃষ্টিশীলতা বাড়াবেঃ

আপনি যদি যেকোন দেশে ভ্রমণে গিয়ে স্থানীয় অধিবাসীদের জীবনযাত্রা খুব কাছ থেকে অবলোকন করতে পারেন কিংবা তাদের আচার–অনুষ্ঠান সরাসরি প্রত্যেক্ষ করার সু্যোগ পেয়ে যান তবে নিজেকে ভ্রমণকারী হিসেবে সৌভাগ্যবান ভাবতেই পারেন। এসব আপনার জ্ঞানের পরিধি বাড়ানোর পাশাপাশি চিন্তা চেতনাকে সুসংহত করে তুলবে এবং সৃজনশীলতাকে এগিয়ে নেবে। স্পেশালি আমাদের দেশের নববর্ষ উৎযাপনকে এই ধরণের আচার- অনুষ্ঠানে ফেলা যায়, চায়না নববর্ষে নানান বর্ণিলভাবে পালিত হয়, অনুরুপভাবে নেপালে হলি উৎসব, থাইল্যান্ডে  সংক্রান বা পানি উৎসব, আর ইন্দোনেশিয়াতে স্থানীয় ভাবে অনুষ্ঠিত হয় আসমত কালচারাল ফেস্টিবলসহ অন্যান্য বাৎসরিক অনুষ্ঠান দেখা যায়। স্পেনের ষাড়ের লড়াই কিংবা লা টমাটিনা, ব্রাজিলের রিও কার্নিভাল, ইটালির কার্নিভাল অফ ভেনিস, জার্মানির অক্টোবার ফেস্ট অন্যতম। যত বেশি আপনি ভ্রমণ করবেন আপনার কর্মক্ষমতা আর সমস্যা সমাধানের দক্ষতা ততই বাড়তে থাকবে। এমনকি কেউ কেউ আরো একধাপ এগিয়ে যোগ করেছেন যে অধিক ভ্রমণে শুধু কর্মক্ষমতাই নয় কর্মক্ষেত্রে প্রমোশনের সম্ভাবনাও বাড়িয়ে তুলে। যাইহোক, অবকাশ যাপন মাঝে মাঝে আবার পীড়াদায়কও হয়ে উঠে যদি আপনি খুব স্বল্প সময়ের জন্য দূর দেশে ভ্রমণে বের হোন। তাই ভ্রমণের জন্য আগে থেকেই সঠিক পরিকল্পনা করুন, শেষ মুহূর্তের ঝক্কি ঝামেলা এড়িয়ে চলুন।

 

ভ্রমণের সুবিধাটুকু কিভাবে ধরে রাখবেনঃ

ধরুন আপনি থাইল্যান্ডের স্ট্রীটফুড আপনার ভালো লেগেছে, আপনি শিখে নেন কিভাবে এসব খাবার বানাতে হয় যা আপনাকে পরবর্তীতে নির্মল আনন্দ দেবে। আবার মনে মনে ভ্রমণে থাকাকালীন কিছু সুখ স্মৃতির কথা ভাবতে থাকুন, দেখবেন আপনার মনে এক অজানা পুলক অনুভূত হচ্ছে যা আপনাকে মানসিক প্রশান্তি এনে দেবে। আর তাই এখন তৈরি করে ফেলুন আপনার পরবর্তী ভ্রমণের পরিকল্পনা আর স্মৃতিতে জমা করতে থাকুন অসংখ্য মজার সব ঘটনা।

Hossain Joy
Hossain Joy
Hossain Joy is a seasoned professional in the corporate world, bringing a wealth of experience and insights to the table. With a successful career spanning 12 years, he has navigated the intricacies of the corporate landscape with resilience and determination. Hossain Joy is not only an accomplished writer but also a mentor who is passionate about sharing the valuable lessons learned throughout his journey. He has authored the inspiring book "Journey to My First Corporate Job," offering a compelling narrative of his early career experiences, challenges, and triumphs. In addition to his book, Hossain Joy extends his reach through a thought-provoking blog, where he imparts practical advice and wisdom gained from years of corporate life. He aims to guide and inspire young professionals, providing them with the tools to navigate their own paths to success. Whether through the written word or personal mentorship, Hossain Joy remains dedicated to empowering the next generation of professionals, fostering a community of growth, resilience, and achievement. Connect with Hossain Joy on Facebook.com/Hossain.Joy for more insights and updates on his journey and upcoming projects.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *