জেনে নিন যে দক্ষতা গুলো কর্মক্ষেত্রে আপনাকে অন্যদের থেকে এগিয়ে রাখবেঃ

জেনে নিন যে দক্ষতা গুলো কর্মক্ষেত্রে আপনাকে অন্যদের থেকে এগিয়ে রাখবেঃ
January 11, 2018
কিভাবে একজন ইয়ং লিডার হিসেবে দ্রুত টিমের শ্রদ্ধা অর্জন করবেনঃ 
January 12, 2018

জেনে নিন যে দক্ষতা গুলো কর্মক্ষেত্রে আপনাকে অন্যদের থেকে এগিয়ে রাখবে

বর্তমান দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বের নানান চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রয়োজন নিজেকে অধিক দক্ষ ও যোগ্য  হিসেবে গড়ে তোলা। কর্মক্ষেত্রে বিভিন্ন দক্ষতা আর কাজের প্রতি আন্তরিকতা আমাদের অন্যদের থেকে এগিয়ে রাখে, সাফল্য পেতে সহায়তা করে। এছাড়াও এমন কিছু দক্ষতা আছে যা আমাদের চাকুরী প্রাপ্তির পর প্রতিদিনকার কাজ সুষ্টভাবে সম্পাদন করতে এবং নিজেকে যোগ্য হিসবে প্রতিষ্ঠা করতে সহায়তা করে থাকে। সেইসব দক্ষতা সমূহ নিয়ে আজ থাকছে দ্বিতীয় পর্বঃ

 

আত্নবিশ্বাসঃ

কর্মক্ষেত্রে সাফল্যের চাবিকাঠি হচ্ছে আত্নবিশ্বাস। যে কোন ব্যাবসায়ীক সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষেত্রে আত্নবিশ্বাস জরুরী, যেকোন সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে, নতুন আইডিয়া প্রয়োগের ক্ষেত্রে, ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষেত্রে,  নিজেকে এবং নিজের কাজকে কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরতে, নেতৃত্বদানের সময়, ক্রেতা বা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করার সময়,  যে কোন অযৌক্তিক ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলতে চাই প্রচণ্ড আন্তবিশ্বাস, অনেক সময় আমাদের অপ্রাসঙ্গিক ও অপ্রয়োজনীয় বিষয় এড়িয়ে চলতে “ না ”  শব্দটি ব্যবহার করতে হয় যা একজন আত্নবিশ্বাসী লোকের পক্ষেই বলা সম্ভব।  সর্বোপরি আত্নবিশ্বাস আপনাকে সকল ভয় আর জড়তা দূর করে সামনে এগিয়ে যেতে সাহস যোগাবে। নিজেকে বিশ্বাস করুন, নিজের দক্ষতার উপর আস্থা রাখুন, আত্নবিশ্বাসের সাথে পথ চলুন।

 

সমালোচনা সহ্য করার ক্ষমতা এবং তা থেকে শিক্ষা নেওয়াঃ

সচরাচর আমরা নিজেদের ভুল খুব কমই দেখতে পায়, মুহূর্তেই অপরের সমালোচনায় মেতে উঠি কিন্তু অন্যের প্রশংসা করতে আবার কার্পণ্যবোধ করি। আবার কেউ আমাদের সমালোচনা করলে আমরা তাকে এড়িয়ে চলি , এমনকি সম্পর্কও ছিন্ন করি , তার থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করি অথাৎ  সমালোচনা থেকে পালিয়ে বেড়ায় বা সমালোচনা শুনতে পছন্দ করিনা যা মোটেও উচিৎ নয়। যে কোন গঠনমূলক সমালোচনা আপনাকে সামনে এগিয়ে নিতে সহায়তা করবে, মানসিক প্রশান্তি এনে দেবে। আর প্রত্যেকরই উচিৎ অহেতুক অন্যের দোষ – ত্রুটি না খুঁজে কিংবা পরনিন্দা বাদ দিয়ে গঠনমূলক সমালোচনা করা।

আপনি মানুষ হিসেবে আসলে কতটা পরিণত সেটা নির্ভর করছে আপনি সমালোচনাকে কিভাবে নিচ্ছেন এবং সমালোচনা সহ্য করার ক্ষমতাই বা কতটুকু আছে আপনার। সমালোচনায় ভেঙ্গে পড়া দুর্বলতার বহিঃপ্রকাশ যা অন্যেরা জেনে গেলে আপনার বিরুদ্ধে প্রায়শই তা প্রয়োগ করবে; আর তাদের সমালোচনা আপনাকে শেষ করে দেবে, মনোবল ভেঙ্গে দেবে এমনকি মানসিক শান্তিও বিনষ্ট করে দিতে পারে। সুতরাং সাফল্য লাভের জন্য সমালোচনাকে সহ্য করার ক্ষমতা আপনাকে অর্জন করতেই হবে।

এই সমালচনার আসলে ভালো খারাপ দুইটি দিকই আছে যা নির্ভর করছে আপনি একে কিভাবে নিচ্ছেন তার উপর। এক হচ্ছে আমরা খুব দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারি যেটা বেশীরভাগ সময়ই নেগেটিভ ফল বয়ে নিয়ে আসে। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে শান্ত থাকা, সময় নেয়া, ভেবে-চিন্তে উত্তর দেয়া কিংবা সমালোচনা থেকে প্রয়োজনীয় শিক্ষা নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া।

 

কাজের চাপ সামলে নিতে জানতে হবে। Image courtesy : Google.com

 

প্রচণ্ড চাপের মধ্যেও ভালোভাবে কাজ করার ক্ষমতাঃ

অনেক সময় আপনার লাইন ম্যানেজার কোন নিদিষ্ট বিষয়ে আপনার থেকে নতুন কোন আইডিয়া চেয়ে থাকেন, চেয়ে থাকেন ব্যাবসায়ীক নানান প্রস্তাবনাও। আর তাতেই শুরু হয়ে গেল আপনার ব্যাস্ততা। ডুবে গেলেন আইডিয়া জেনারেশন আর প্রেজেন্টেশন তৈরিতে সেই সাথে প্রেজেন্টেশনের ড্রেসআপ আর আনুষঙ্গিক বিষয়াবলীর প্রস্তুতি নিয়ে।

আবার অনেক সময় দেখা যায় কোম্পানিগুলো বিক্রয় বৃদ্ধি কিংবা নিদিষ্ট লক্ষ্য দ্রুত অর্জনের জন্য ইনসেন্টিভ বা অনুপ্রেরণামূলক প্রোগাম ঘোষণা করে থাকে কিছু নিদিষ্ট মেয়াদ আর শর্তের বিনিময়ে। আর এতে অংশগ্রহণ করতে যেয়েই বেড়ে যায় আপনার আমার ব্যাস্ততা।

প্রতিযোগীতা মূলক ব্যবসায় জগৎে প্রতিদিনকার কর্ম সম্পাদন করতে গিয়ে বা নিদিষ্ট প্রজেক্টে কাজ করতে গিয়ে নিজেকে সেরা প্রমাণ করতে চাই এবং অতিরিক্ত কাজের চাপে ডুব দিই আর তাতে এক ধরণের প্রতিযোগীতার সম্মুখীন হই। সুস্থ প্রতিযোগীতা দক্ষতা বৃদ্ধির সহায়ক। কিন্তু মাঝে মাঝে এটা অসুস্থ প্রতিযোগীতা বা প্রতিহিংসায় রুপ নিতে দেখা যায় যা মোটেও উচিৎ নয়। এতে কর্ম পরিবেশ আর মানসিক প্রশান্তি নষ্ট হয়।

দ্রুত পরিবর্তনশীল আর প্রতিযোগীতা মূলক বিজনেজ জগৎে  টিকে থাকতে হলে নিজ নিজ দক্ষতা দিয়ে অতিরিক্ত কাজের চাপেও আপনাকে মাথা ঠান্ডা রেখে ভালো পারফর্ম করে যেতে হবে। প্রতিদিনই নতুন কিছু শিখতে হবে, নিজের দক্ষতা বাড়িয়ে সামনে এগিয়ে যেতে প্রথমতঃ সকল ভয় আর উদ্বিগ্নতা দূর করে আত্নবিশ্বাসী হোন, নিজের দক্ষতা আর সামর্থ্যের উপর পূর্ণ আস্থা রাখু। আত্নবিশ্বাস বাঁড়াতে প্রয়োজনে নিয়মিত ব্যায়াম করুন। দ্বিতীয়তঃ হচ্ছে আপনার নিয়ন্ত্রণাধীন বিষয়াবলীর উপর নজর দিয়ে এগিয়ে যাওয়া। আর যেসব বিষয় আপনার নিজের নিয়ন্ত্রণের বাইরে সেসব নিয়ে মাথা খাটিয়ে আপাতত খুব একটা লাভ হবে না আপনার। তৃতীয়তঃ আপনি চাইলে সব কাজ সুন্দরভাবে সঠিক সময়ে শেষ করার জন্য নিজের মতো করে কাজ গুলোকে কয়েকটি ছোট ছোট ধাপে ভাগ করে নিন, প্রয়োজনে একটি রুটিন তৈরি করে নিতে পারেন বা চাইলে ডেক্সটপে স্টিকি নোটও রাখতে পারেন। চতুর্থতঃ কাজের প্রতিটি মুহূর্তকে উপভোগ করা কারণ যতোটুকু কাজ আপনি শেষ করেছেন সাফল্যের পথে ততটুকু পথ আপনি এগিয়ে গেলেন। কাজেই অহেতুক দুঃচিন্তা না করে কাজের একেকটি ধাপ শেষ করার পর একটু হালকা দম নিন, উঠে দাঁড়ান, একটু হেঁটে আসুন কিংবা প্রিয় কোন মিউজিকে মন ভিজিয়ে আবার কাজ শুরু করুন। সবশেষে যেকোন কাজের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার পূর্বে একটু সময় নিয়ে ভাবুন, প্রয়োজনে ‘টুয়েন্টি ফোর আওউরস রুলস’র সহায়তা নিন এবং পুরো কাজের একটি রিক্যাপ তৈরি করুন তারপর কাজটি শেষ করে দাখিল করুন। আশা করা যায় সাফল্য আপনার ধরা দেবে।

 

বাড়তি দায়িত্ব নেওয়ার মানসিকতাঃ

বাড়তি দায়িত্ব অর্পিত হওয়া মানে আপনি দায়িত্ব নেওয়ার যোগ্যতা রাখেন, দায়িত্ব মানে ব্যাক্তিগত বিশ্বাস, মনোভাব আর মর্যাদা , দায়িত্ব পাওয়া – এটা আসলে  মানসিক দক্ষতা আর বুদ্ধিমত্তার প্রতিফলন যা আপনার ব্যাক্তিগত দক্ষতা বৃদ্ধির সহায়ক। কর্পোরেটে দ্রুত সাফল্যলাভের জন্য আপনাকে দায়িত্বের বাইরেও কাজ করতে জানতে হবে। প্রয়োজনে বস বা অন্য সহকর্মীদের সহযোগীতায় এগিয়ে আসতে হবে; তবেই আপনি কেবল অন্যদের থেকে সহযোগীতা আসা করতে পারেন।

 

কোম্পানির কর্পোরেট কালচার সম্পর্কে জানাও জরুরী Image courtesy : Google.com

 

কোম্পানি কালচার চাহিদা বুঝতে পারাঃ

প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানেরই কিছু নিয়ম-কানুন রয়েছে যা সবাইকে মেনে নিয়েই কাজ করতে হয়। আপনাকে অবশ্যই সেইসব নিয়ম জানতে হবে। সেই সাথে কোম্পানিতে আপনার দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কেও সজাগ থাকতে হবে। প্রতিষ্ঠান আপনার থেকে কি চায় সেটা জানাও আপনার জন্য জরুরী। অন্যদিকে কাউকে অযথা ব্লেইম দেয়া, গসিপে যুক্ত থাকা, অযথা অজুহাত দাঁড় করানো, সময়মতো অফিসে হাজির না হওয়া এইসব ব্যাপারগুলো কোন প্রতিষ্ঠানই পছন্দ করেনা।

 

 

ভাষাজ্ঞান সাবলীল উপস্থাপনাঃ

ব্যবাসায় জগৎে বেশীরভাগ জায়গাতেই ইংরেজী ভাষার প্রাধান্য দেখা যায়। এক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই ইংরেজী বলা ও লিখায় পারদর্শিতা অর্জন করতে হবে। যদি আপনার প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগের ক্ষেত্রে বাংলা ভাষার ব্যবহার বহুল হয়ে থাকে তবে আপনাকে অবশ্যই আঞ্চলিকতা পরিহার করে শুদ্ধ বাংলা বলতে ও লিখতে জানতে হবে।

আবার ভাষাজ্ঞানের পাশাপাশি নিজেকে সুন্দর করে উপস্থাপন করতেও জানতে হবে। তার পাশাপাশি নিজের প্রস্তাবনাসমূহকে সুন্দর ও সাবলীল ভাবে উপস্থাপনের মাধ্যমে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেন।

বিশ্বায়নের প্রভাব আর আধুনিক বিশ্বের স্মার্ট সব প্রযুক্তির কল্যাণে ব্যবসায় দুনিয়ায় এসেছে অভূতপূর্ব পরিবর্তন যার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে স্বভাবতই আপনাকে প্রচুর জানতে হবে, প্রতিযোগীতার ক্ষেত্রে কৌশলী হতে হবে, দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে জানতে হবে, ভবিষৎ সম্পর্কে পূর্বানুমান থাকতে হবে এবং প্রতিনিয়ত নিজেকে ছাড়িয়ে যেতে হবে দক্ষতার উন্নয়নের মাধ্যমে।

পড়ুন-

তরুণ গ্র্যাজুয়েটদের উদ্যোক্তা হতে অনীহা! পেছনের রহস্য কি?

Follow me on Facebook . Check out my Website .

Hossain Joy
Hossain Joy
Hossain Joy is a seasoned professional in the corporate world, bringing a wealth of experience and insights to the table. With a successful career spanning 12 years, he has navigated the intricacies of the corporate landscape with resilience and determination. Hossain Joy is not only an accomplished writer but also a mentor who is passionate about sharing the valuable lessons learned throughout his journey. He has authored the inspiring book "Journey to My First Corporate Job," offering a compelling narrative of his early career experiences, challenges, and triumphs. In addition to his book, Hossain Joy extends his reach through a thought-provoking blog, where he imparts practical advice and wisdom gained from years of corporate life. He aims to guide and inspire young professionals, providing them with the tools to navigate their own paths to success. Whether through the written word or personal mentorship, Hossain Joy remains dedicated to empowering the next generation of professionals, fostering a community of growth, resilience, and achievement. Connect with Hossain Joy on Facebook.com/Hossain.Joy for more insights and updates on his journey and upcoming projects.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *