আমরা সবাই জানি যে তরুণদের রয়েছে অসাধ্য সাধন করার অসাধারণ সব দক্ষতা কিন্তু সাম্প্রতিক জরিপ বলছে ভিন্ন কথা। বিখ্যাত আমেরিকান এক্সপ্রেস কোম্পানি আর জরিপ প্রতিষ্ঠান মিলেনিয়াল ব্রান্ডিং কতৃক যৌথভাবে ২০১৩ সালে চালানো এক জরিপে দেখা গেছে যে-নবীন কর্মীদের ক্ষেত্রে সামগ্রিকভাবে অভিজ্ঞ ম্যানেজারগণ নেগেটিভ ধারণা পোষণ করেন এবং কারণ হিসেবে তারা মনে করেন যে সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত তরুণ কর্মীদের সঠিক যোগাযোগের দক্ষতা তথা পারস্পরিক সম্পর্কের ঘাটতি, সময় ব্যবস্থাপনা ও টিম ওয়ার্কের ক্ষেত্রেও যথেষ্ট ঘাটতি আছে। আর আমরা সবাই জানি এসব দক্ষতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসের চেয়ে বরং ক্লাসের বাইরে বিভিন্ন কো-কারিকুলার কার্যক্রমে অংশগ্রহণের মাধ্যমে অর্জিত হয়। আবার গ্র্যাজুয়েশন শেষে একটি ভালো ইন্টার্নশীপও এক্ষেত্রে সহায়ক ভুমিকা পালন করে থাকে।
সাফল্য লাভের জন্য অনেকে তরুণদের মনোভাব এবং আচার-আচরণের উপর গুরত্বারুপ করেছেন। আবার অনেকে প্রফেশনালিজমের কথা বলেছেন। বিশ্বায়ন ও হাইটেকের এই সময়ে বেড়ে উঠা সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত তরুণ গ্র্যাজুয়েটদের কাছ থেকে নিয়োগকর্তা তথা লাইন ম্যানেজারগণ স্বভাবতই অধিক প্রত্যাশা পোষণ করে থাকেন। তাই তরুণ কর্মীদের উল্লেখিত বিষয়সমূহ গুরুত্ব সহকারে নিয়ে কর্মক্ষেত্রে অধিক মনোনিবেশ করা উচিৎ সেই সাথে ক্যারিয়ারকে এগিয়ে নিতে নিম্নোক্ত বিষয় গুলোর উপর নজর দেয়া অত্যাবশ্যাকঃ
এক্সেলঃ
আপনি যে পদেই যোগদান করেন না কেন এক্সেলের উপর দখল থাকা অত্যাবশ্যাক। যে কোন প্রকার রিপোর্ট তৈরিতে এক্সেলের সহয়তা আপনাকে নিতেই হবে। এক্সেলে অধিক দক্ষতা আপনাকে অল্প সময়ে অনেক কাজ করতে সাহায্য করবে। তাই অতি প্রয়োজনীয় এই দক্ষতা যদি না থাকে তবে দ্রুত শিখে নিন।
দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়া পরিহার করাঃ
বলা হয়ে থাকে যে-যিনি দায়িত্ববান তাকেই গুরুত্বপূর্ণ কাজের দায়িত্ব ন্যাস্ত করা হয়ে থাকে। একজন তরুণ কর্মী হিসেবে নিত্য নতুন কাজ শিখতে চেষ্টা করুন, তাতে অন্যদের থেকে অধিক জানার সুযোগ তৈরি হবে যা ক্যারিয়ারে সাফল্য পেতে সহায়তা করবে। কাজেই দায়িত্ব নিতে শিখুন, পরিহার নয়।
নিত্যনতুন শেখার প্রচন্ড আগ্রহঃ
নতুন কিছু জানা এবং শেখার অদম্য আগ্রহই অন্যদের থেকে আপনাকে আলাদা করে তুলবে। সব সময় “আউট অফ দি বক্স” চিন্তা করবেন। নতুন আইডিয়া জেনারেট করে উপস্থাপন করতে চেষ্টা করবেন আর তাতে করে সবার কাছে আপনার গ্রহণ যোগ্যতা বাড়বে।
ভয় ও সংকোচ পরিহার করাঃ
যে কোন কাজে অভিজ্ঞ হতে চাইলে ভয় ও সংকোচ পরিহার করে বস আর সহকর্মীদের কে নানা বিষয় জিজ্ঞেস করতে হবে। মিটিংয়ে সবার সামনে নিজের মতামত তুলে ধরতে কখনো পিছবা হওয়া যাবে না। এমনকি নিজের বিভাগ ছাড়াও অন্যসব বিভাগের সহকর্মীদেরও হাঁসি মুখে কোশলাদি জিজ্ঞেস করার পাশাপাশি দরকারি তথ্য জেনে নিতে পারেন।
অভিজ্ঞদের উপদেশ ও সহায়তা নিনঃ
নবীন কর্মী হিসেবে সমস্যা সমাধানে আপনি যত বেশী সংখ্যাক মানুষের কাছ থেকে পরামর্শ নেবেন ততবেশী জানতে পারবেন। ফলে কাজ করা আপনার জন্য সহজ হয়ে যাবে। প্রয়োজনে আপনার জায়গায় পূর্বে যিনি কাজ করতেন সম্ভব হলে উনার সাথেও কথা বলে নিতে পারেন। সিনিয়রদের প্রয়োজনীয় ও মূল্যবান উপদেশ আপনাকে আত্নবিশ্বাসীও করে তুলবে।
কর্মী হিসেবে প্রয়োজনীয় নির্ভরযোগ্যতা অর্জন করুনঃ
সঠিক সময়ে প্রয়োজনীয় কাজ করুন, নতুন নতুন পদক্ষেপ নিন, যে কোন কাজের কোয়ালিটির দিকে নজর দিন, ভুল ও অসত্য ত্তথ্য পরিহার করুন, অন্যদের প্রয়োজনে নিজে থেকে এগিয়ে আসুন, বস কে তার কাজের সহায়তা করুন আর সকলের আস্থা অর্জন করে সাফল্যের দিকে এগিয়ে যান।
প্রতিষ্ঠানের কালচার জানার চেষ্টা করুনঃ
নতুন কর্মী হিসেবে প্রতিষ্ঠানের নিয়ম–নীতি জেনে কাজ করার চেষ্টা করুন। কোন প্রতিষ্ঠানই বিলম্বে অফিসে পৌঁছানো, অগোছালো থাকা, নানা রকম অজুহাত দাঁড় করানো, কাউকে না জানিয়ে অফিস কামায় দেয়া, টাইম লাইন মিস করা ইত্যাদি পছন্দ করে না। কাজেই এইসব বিষয়ের দিকে খেয়াল রাখুন। অপরদিকে প্রতিষ্ঠান আপনার থেকে কি কি কাজ চায় তাও আপনাকে জানতে হবে।
গসিপ থেকে দূরে থাকুনঃ
সহকর্মী হিসেবে একই টিম বা কোম্পানিতে কাজ করতে গিয়ে একে অন্যের সাথে সম্পর্কের উন্নয়ন হয়, হৃদ্যতা বাড়ে। তাই বলে কখনো অন্য কোন সহকর্মীর দোষ–ত্রুটি খুঁজে বেড়াবেন না। আর কখনোই অন্য সহকর্মীর ব্যাপারে কাউকে নেগেটিভ কিছু বলে কাজের পরিবেশকে নষ্ট করে দেবেন না। নতুন কর্মী হিসেবে কাজের প্রতি অধিক মনোযোগী হবার চেষ্টা করুন।
কর্মক্ষেত্রে সবার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোনঃ
ঊর্ধ্বতন থেকে শুরু করে একদম প্রতিষ্ঠানের শেষ লেয়ারে অবস্থান করা সবাইকেই আপনার যথাযথ সম্মান দেখানো উচিৎ। কোন ভাবেই কাউকে খাটো করে দেখা বা কটু কথা বলা ঠিক নয়। এখানে সবাই আপনার সহকর্মী যাদের আপনি একটি পরিবার হিসেবেও ভাবতে পারেন। কর্মক্ষেত্রে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ উত্তম কর্ম পরিবেশ নিশ্চিত করে।
নবীন কর্মীদেরও অভিজ্ঞদের থেকে বেশ কিছু প্রত্যাশা রয়েছেঃ
অন্যদিকে সদ্য গ্র্যাজুয়েটরা আশা করেন যে কর্মক্ষেত্রে সিনিয়র, অভিজ্ঞজন আর রিপোর্টিং বস তাদের কথা মনযোগ সহকারে শুনবেন, তাদের সমস্যা বোঝার চেষ্টা করবেন, যেকোন প্রয়োজনে সাড়া দেবেন, সহযোগীতা করবেন এবং নির্ভরতা দিয়ে পাশে থাকবেন। সর্বোপরি ভালো কাজের মূল্যায়ন করবেন ও প্রশংসা করবেন। নবীন করমীরা এটাও প্রত্যাশা করে যে সিনিয়রা তাদের কর্মক্ষেত্রের জন্য প্রযোজ্য প্রয়োজনীয় সব কিছু হাতে-কলমে শেখানোর চেষ্টা করবেন এবং ভুল ত্রুটি শুধরে দিয়ে সামনে এগিয়ে নিতে সহায়তা করবেন। আসলে নবীনদের সৃজনশীলতা আর প্রবীনের অভিজ্ঞতা এই দু’য়ের সংমিশ্রণেই একটি দল আর প্রতিষ্ঠান সফলতার দিকে এগিয়ে যেতে পারে।।