কর্পোরেট জবে আগ্রহী অনেক বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা বহুজাতিক কোম্পানি সম্পর্কে প্রবল আগ্রহ দেখিয়ে থাকেন যাদের অধিকাংশই বহুজাতিক কোম্পানিতে কাজের সুযোগ পেতে কি ধরনের দক্ষতার প্রয়োজন হয় এবং এর নিয়োগ প্রক্রিয়াইবা কি সেসব সম্পর্কে জানতে উৎগ্রীব থাকেন।
একই রকম প্রশ্ন আমাদের দেশীয় কোম্পানিতে কর্মরত আছেন কিন্তু বহুজাতিক কোম্পানিতে কাজ করতে আগ্রহী এমন অনেকের কাজ থেকেও শুনেছি।
আসলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় দক্ষতা যেমন- নেতৃত্বদানের ক্ষমতা, দলগতভাবে কাজ করার দক্ষতা, দ্রুত সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা আর যোগাযোগের মতো দক্ষতা সব রকম জব তথা সব কোম্পানিতেই প্রয়োজন পড়ে বলে আমি মনে করি। এর বাইরে প্রযুক্তিগত দক্ষতা, সাবলীল ভাবে নিজেকে উপস্থাপন করতে পারা, ইংরেজী ভাষার উপর ভালো দখল থাকা অনেকাংশেই বাঞ্চনীয়। তাছাড়া নিদিষ্ট ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকা আপনাকে সামান্য হলে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে রাখবে বৈকি।
আর নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে চাইলে বলা যায় যে- এন্ট্রি লেভেলে কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে দেশী-বিদেশী প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানেরই নিজস্ব বা ইন্টারনাল নিয়োগ প্রক্রিয়া রয়েছে যা অনুসরণ করে কোম্পানিগুলো তাদের প্রয়োজনীয় সংখ্যাক জনবল নিয়োগ করে থাকেন। তবে একটি সিভি কিন্তু লাগবেই লাগবেই! আর তাই নিজেই বানিয়ে নিন আকর্ষণীয় সিভি!!!
কোম্পানি ভেদে নিয়োগ প্রক্রিয়া ভিন্ন হলেও সচারচর আমাদের দেশের অনেক বহুজাতিক ও লিডিং কর্পোরেট হাউজগুলোকে যে প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে দেখা যায় সেসব নিয়ে আলোকপাত করা যাকঃ
গ্র্যাজুয়েশনের পর কাঙ্ক্ষিত জবের খোঁজে পেতে অন-লাইন জব পোর্টাল, ফেসবুক গ্রুপ, লিঙ্কডইন, এলাইম্নি ও পরিচিতদের সহায়তা নিন। Image Source: Google.com
ধাপ-১। জব সার্কুলারঃ
প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানই তাদের প্রয়োজনীয় কর্মী নিয়োগের জন্য জব সার্কুলারের ক্ষেত্রে নিজস্ব কিছু পন্থা অবলম্বন করে থাকে। যেমনঃ কারেন্ট এম্পয়ীদের মাধ্যমে রিক্রুট অর্থাৎ বর্তমান কর্মীদের মাধ্যমে সিভি সংগ্রহ , এইচ.আর. কনসাল্টেন্সি বা থার্ড পার্টির মাধ্যমে জব সার্কুলার প্রকাশ করে প্রয়োজনীয় সিভি সংগ্রহ , অনলাইন জব পোর্টালে জব সার্কুলার প্রকাশ কিংবা নিউজ পেপারেও সার্কুলার প্রকাশ করে প্রয়োজনীয় সিভি সংগ্রহ করে থাকে।
আবার অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের নিজস্ব ওয়েব সাইটেও জব সার্কুলার প্রকাশ করে থাকে। ইদানিং বেশ কিছু ফেসবুক গ্রুপেও আপনি জব সার্কুলার পেতে পারেন। তো আপনি যদি সার্কুলার প্রকাশের সব গুলো মাধ্যমে এক্টিভ থাকেন তবে আপনার জন্য চাকুরী খোঁজ পাবার ব্যাপার টা অনেক সহজ হয়ে যাবে। আরো বিশদ জানতে পড়ুনঃ কোথায় পাবেন কর্পোরেট জব সার্কুলার?
ধাপ- ২। আবেদন পত্র সংগ্রহ ও যাছাই বাছাইকরণঃ
প্রথমে আপনি জব সার্কুলার অনুযায়ী আপনার আবেদন পত্র অর্থাৎ রিজুমি পাঠাবেন যেখানে আপনার একটিভ মেইল ও মোবাইল নাম্বার সহ পার্সোনাল ডিটেইলস উল্লেখ থাকবে। সিভিতে আপনার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের এক্সটা-কারিকুলাম কার্যক্রম গুলো যথাযথভাবে অন্তর্ভুক্ত করবেন, একাডেমিক বা শিক্ষাগত যোগ্যতা সমূহ ক্রমানুসারে অবশ্যই তুলে ধরবেন; আর কাজের অভিজ্ঞতা যদি থাকে সেক্ষেত্রে কোম্পানির নাম, প্রধান প্রধান দায়িত্ব আর অর্জন সমূহ সহ সিভিতে অন্তর্ভুক্ত করা চা-ই চাই।
আর সব শেষে রেফারেন্স হিসেবে আপনার ফ্যাকাল্টির একজন শ্রদ্ধেয় শিক্ষকের নাম দিতে পারেন যিনি আপনাকে খুব ভালোভাবে চিনেন এবং জানেন। আপনি চাইলে কর্পোরেট জগৎ থেকেও আরো একজনের নাম রেফারেন্স হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন যিনি আপনার স্কিলস সম্পর্কে ভালো আইডিয়া রাখেন, তবে অবশ্যই যে কারো নাম অন্তর্ভুক্ত করার পূর্বে তার অনুমতি নেয়া আবশ্যক।
আবেদনপত্র পাওয়ার পর স্বভাবতই কতৃপক্ষ তাদের নিজস্ব আর নির্ধারিত পদের ক্রাইটেরিয়া অনুযায়ী অসংখ্য সিভি থেকে প্রয়োজনীয় সংখ্যাক সিভি বাছাই করে একটি শর্টলিষ্ট করে ফেলেন। আবেদনপত্র যাচাই-বাছাই করে শর্ট লিস্ট তৈরী করার পর পরবর্তী ধাপের কার্যক্রম শুরু হয়।
আবেদনপত্র যাচাই-বাছাই করে শর্ট লিস্ট তৈরী করার পর পরবর্তী ধাপের কার্যক্রম শুরু হয়।
ধাপ- ৩ এসেসম্যান্ট টেস্টে অংশগ্রহণঃ
শর্টলিষ্টেট প্রার্থীদের নিয়েই আয়োজন করা হয় এই জব এসেসম্যান্ট টেস্ট; প্রতিষ্ঠানের প্রথা অনুযায়ী যেখানে চাকুরী প্রার্থীকে দুই বা ততোধিক সেগম্যান্টের মুখমুখি হতে হয়।
লিখিত পরীক্ষা বা গ্রুপ ডিসকাশনঃ
অনেক কোম্পানি শর্টলিষ্টেট ক্যান্ডিডেটদের নিয়ে একটি লিখিত পরীক্ষার আয়োজন করে থাকে এবং এতে অধিকাংশ ক্ষেত্রে আবেদনকৃত চাকুরীর দায়িত্বসম্পর্কিত বিষয়সমূহের উপরই গুরুত্ব আরোপ করতে দেখা যায়।
অনেক প্রতিষ্ঠান লিখিত পরীক্ষার আয়োজন না করে গ্রুপ ডিসকাশনের ব্যবস্থা করে থাকেন যেখানে আপনাকে ৬/৮ জনের একটি নিদিষ্ট গ্রুপে নিদিষ্ট সময়ের মধ্যে একটি কেইস সলভ করতে দেয়া হবে। এর মাধ্যমে আসলে আপনার টিম ওয়ার্ক করার সামর্থ্য, নেতৃত্বদান বা অন্যকে প্রভাবিত করার ক্ষমতা, আপনার ইন্টার পার্সোনাল স্কিলস তথা বিভিন্ন চ্যালেঞ্জিং সিচুয়েশানে আপনি কিভাবে কাজ করেন এসব দেখা হয়ে থাকে। অনেক প্রতিষ্ঠান আবার একেক ক্যান্ডিডেটদেরকে একেক রকম বিজনেস কেইস দিয়ে সলভ করতে বলতে দেখা যায়।
প্রেজেন্টেশানঃ
কেইস সলভিংটা গ্রুপ ডিসকাশনের মাধ্যমেই হোক আর এককভাবেই হোক , আপনাকে প্রদত্ত কেইসের সমাধান নিয়ে প্রেজেন্টেশান দেয়ার জন্য কিন্তু অবশ্যই আপনাকে প্রস্তুত থাকতে হবে। প্রেজেন্টেশান মেটেরিয়ালস কিংবা টেকনিক্যাল সাপোর্ট নিয়ে আপনাকে মোটেও ভাবতে হবেনা যা আপনাকে সরবরাহ করা হবে, আপনি বরং প্রেজেন্টেশানের মাধ্যমে নিজেকে যোগ্য করে উপস্থাপনের দিকে মনোযোগী হবেন।
এ পর্যায়ে এসে নিয়োগকর্তাগণ এসেসম্যান্টের উপর ভিত্তি করে আরো একটি শর্টলিস্ট তেরি করে থাকেন এবং কৃতকার্যদের পরবর্তী ধাপে নিয়ে যান।
ধাপ -৪। স্কিলস যাচাইকরণ ইন্টার্ভিউঃ
এ পর্যায়ে নিদিষ্ট পদের জন্য দরকারি ও উপযুক্ত স্কিলস যেমনঃ নেতৃত্বদানের গুণাবলী, যোগাযোগের দক্ষতা, সমস্যা সমাধানের দক্ষতা, পজিটিভ মনোভাব, সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা ইত্যাদি যাচাই করা হয়ে থাকে। আবার অনেক সিচুয়েশনাল এবং ইন্টারেক্টিভ প্রশ্ন করেও প্রার্থীর নলেজের গভীরতা যাচাই করা হয়ে থাকে যেখানে নিয়োগকর্তাগণ প্রার্থীর পূর্বের কোন অভিজ্ঞতা বা ঘটনার বাস্তব উদাহরণ আশা করে থাকেন।
এই ইন্টার্ভিউর মাধ্যেমে প্রার্থী তার আবেদনকৃত পদের জন্য কতটুকু ফিট তা নিশ্চিত হয়েই ইন্টার্ভিউ বোর্ডের সদস্যগণ পরবর্তী তথা ফাইনাল ইন্টার্ভিউর জন্য আরো একটি শর্ট লিস্ট তৈরি করেন।
ইন্টার্ভিউ বোর্ডে আত্নবিশ্বাস সহকারে সাবলীল ভাবে প্রশ্নের উত্তর দিতে নিজেকে প্রস্তুত করা চাই।
ধাপ – ৫। ফাইনাল ইন্টার্ভিউঃ
নিয়োগ প্রক্রিয়ার অনেকগুলো ধাপ পেরিয়ে এই পর্যায়ে এসে চাকুরী প্রার্থীর কনফিডেন্ট আসলে অনেক বেড়ে যায়; যেখানে বিভাগীয় প্রধান আর নিয়োগ কমিটির উপরস্থঃ কর্মকর্তাগণ প্রতিষ্ঠানের দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা কালচার আর কর্ম-পরিবেশের সাথে প্রার্থী মানিয়ে নিতে পারবে কিনা তা সহ আনুষঙ্গিক কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি পরখ করে দেখে থাকেন।
আর এই ধাপটি সুন্দর ও সাবলীল ভাবে উৎরাতে পারলেই আপনি আপনার স্বপ্নের দেখা পেয়ে যাবেন বলে আশা করা যায়। অনেক সময় এ পর্যায়ে এসে সেলারী বা প্যাকেজ সম্পর্কেও আলোচনার জন্য এইচ.আর. বিভাগের মুখোমুখি হতে হয়। এক্ষেত্রে একজন ফ্রেশ গ্র্যাজুয়েটের জন্যে আমার পরামর্শ হচ্ছে, ক্যারিয়ারের প্রথম কয়েক বছর আসলে ‘Earning’ নয় বরং ‘Learning’ এর সময়। নতুন কিছু শিখতে নিজেকে সদা নিয়োজিত রাখুন, কাজে অধিক মনোযোগী হোন; আরনিং এমনিতেই বেড়ে যাবে।
জেনে রাখা ভালো যে- অনেক প্রতিষ্ঠান নিজেরাই জব এসেসম্যান্ট টেস্টের যাবতীয় কাজ কমপ্লিট করে থাকেন। এক্ষেত্রে বহু প্রতিষ্ঠান আবার স্বনামধন্য কোন এইচ. আর. কনসালটেন্সি ফার্মের সহায়তা নিয়ে থাকে। আবার বহু প্রতিষ্ঠানকে দুইয়ের অধিক ইন্টার্ভিউ নিতেও অনেক সময় দেখা যায়। প্রতিষ্ঠানভেদে কেউ কেউ আবার লিখিত পরীক্ষার পর এক বা একাধিক ইন্টার্ভিউর মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়া কমপ্লিট করে থাকেন। আবারও বলছি, প্রায় সব বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানই কিন্তু সুন্দর-সাবলীল উপস্থাপনা এবং ইংরেজী ভাষার দক্ষতার উপর বেশ জোর দিয়ে থাকেন।
তো এই ফাইনাল ইন্টার্ভিউর পর আবেদনকৃতপদের জন্যে নির্বাচিত হলে অল্প সময়ের মধ্যেই আপনাকে অফার লেটার সংগ্রহের জন্য প্রতিষ্ঠান থেকে যোগাযোগ করা হয়ে থাকে। আর এভাবে তুমুল প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে প্রতিটি ধাপ সফলতার সাথে অতিক্রম করার মাধ্যমেই স্বপ্নের বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে আপনি আপনার কাঙ্খিত ক্যারিরার শুরু করতে পারেন।
জেনে নিন কর্পোরেট জগতের প্রাথমিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আপনি কতটুকু প্রস্তুত?
Follow me on Facebook . Check out my Website .
2 Comments
[…] আগ্রহী নবীণেরা যদি সেলস সেক্টরের বিভিন্ন ইন্ড্রাষ্টি আর কাজ সম্পর্কে সম্যাক ধারণা আর যথাযথ মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে আসতে পারেন তবে তা সাফল্য লাভে আপনার জন্যে সহায়ক ভুমিকা পালন করবে। সদ্য গ্র্যাজুয়েটদের প্রতি আরো পরামর্শ থাকবে আগেভাগে চিন্তা ভাবনা করুন, প্রয়োজনে অভিজ্ঞদের পরামর্শ নিন; তারপর সেলসকে ক্যারিয়ার হিসেবে নির্ধারণ করুন। কারণ যে কাজ করে আপনি আনন্দ পাবেননা সেই কাজে সহজে সাফল্যও ধরা দেবেনা। আর নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে এই আর্টক্যালটি পড়ে দেখতে পারেন ঃ https://hossainjoy.com/2017/11/22/%e0%a6%ac%e0%a6%b9%e0%a7%81%e0%a6%9c%e0%a6%be%e0%a6%a4%e0%a6%bf%e0… […]
[…] […]