ক্যারিয়ার প্ল্যানিং কিভাবে করবেন?

তরুণ গ্র্যাজুয়েটদের উদ্যোক্তা হতে অনীহা! পেছনের রহস্য কি?
September 2, 2018
বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাসের বাইরে যা করা যেতে পারে!
September 20, 2018

কর্মক্ষেত্রে সাফল্য পেতে সঠিক পরিকল্পনা সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

ক্যারিয়ার পরিকল্পনা আপনাকে একটি দিকনির্দেশনার পাশাপশি ভবিষ্যতে নিজেকে কোথায় দেখতে চান সে সম্পর্কে একটি পরিস্কার ধারণা দেবে। এটি একদিকে যেমন আপনার শক্তিমত্তা আর দূর্বলতা সম্পর্কে জানান দেবে ঠিক তেমনি লক্ষ্য অর্জনে প্রয়োজনীয় দক্ষতা ও নলেজ অর্জনের জন্যেও সচেতন করে তুলবে।

 

সত্যি বলতে – আমরা আমাদের জীবনের বেশ লম্বা একটি সময় ক্যারিয়ারের লক্ষ্য অর্জনের জন্যে ব্যয় করে থাকি। আর তাই এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে ক্যারিয়ার উন্নয়নে আমরা সঠিক পদক্ষেপ নিচ্ছি কিনা‚ ঠিক ভাবে পরিকল্পনামত এগুচ্ছি কিনা।

 

আমাদের চারপাশের খুব কম সংখ্যক লোকই আসলে জীবনের লক্ষ্য সম্পর্কে সচেতন। অন্যদিকে অনেকে জানেইনা জীবন থেকে আসলে তাদের চাওয়া কি কিংবা জীবনের একটি পর্যায়ে এসে নিজেকে ঠিক কোন জায়গায় দেখতে চান। অনেকের জীবন মাঝি-মাল্লা বিহীন স্রোতে ভেসে বেড়ানো নৌকার মতোই‚ দিনের পর দিন যেদিকে খুশী চলছে তো চলছেই। এক্ষেত্রে ক্যারিয়ার পরিকল্পনা আপনাকে সঠিক লক্ষ্যে পৌঁছাতে যেমন সহায়তা করবে তেমনি জীবনের আসল উদ্যেশ্য সমূহ খুঁজে পেতে এবং সেইসব অর্জনেও ভূমিকা রাখবে।

 

ক্যারিয়ার পরিকল্পনা আপনাকে সঠিক লক্ষ্যে পৌঁছাতে সহায়তা করবে। Image Source: Google.com

 

আর আমাদের আর্থ সামাজিক পেক্ষাপট বিবেচনায় ক্যারিয়ার নির্বাচন যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তা বলার অপেক্ষা রাখেনা, যদিওবা ছোট বেলায় আমরা সবাই স্কুলের পরীক্ষায় খাতায় “আমার জীবনের লক্ষ্য” রচনা লিখে লিখে স্বপ্নের জাল বুনে বড় হয়েছি। কিন্তু অনেক সময় বাস্তবতা একটু ভিন্ন রুপে আমাদের কাছে এসে ধরা দেয়। ইতিমধ্যে অনেকেই হয়তো সত্যি সত্যি ছোট বেলার সেই স্বপ্ন পূরণ করেছেন কেউবা স্বপ্ন পুরণে অনেক দূর এগিয়ে গেছেন। আবার কেউ কেউ কাঙ্ক্ষিত স্বপ্নের দেখা পেতে বিশ্ববিদ্যালয়ে জীবনের সুন্দরতম দিনগুলো পার করছেন। আজকের লিখা তাদেরকে নিয়েই এবং বিশেষতঃ বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়াদের ক্যারিয়ার পরিকল্পনা নিয়ে। অন্যসব সফল পরিকল্পনার মতো ক্যারিয়ার পরিকল্পনাও অবশ্যই লিখিত এবং সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্যে নিরলসভাবে কাজ করে যেতে হবে।

 

 

নানা রকম বিজনেস ও ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কে জ্ঞান লাভ, ক্যারিয়ার পরিকল্পনায় সহায়ক ভুমিকা পালন করে। Image Source: Google.com

 

# লক্ষ্য ঠিক করুনঃ
ক্যারিয়ার নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রথমেই নিজেকে জানার জন্যে নিজের সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। অর্থাৎ ভবিষতে আপনি কি করতে চান বা কি হতে হতে চান, কিসে আপনার অধিক আগ্রহ কিংবা আপনার ব্যাক্তিত্বের ধরণ কেমন, কি ধরণের কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন ইত্যাদির উত্তর খুঁজে বের করুন। প্রয়োজনে পরিবারের অন্যন্য সদস্য কিংবা বন্ধুবান্ধবের সাথেও কথা বলে সহায়তা নিতে পারেন। ক্যারিয়ারের পছন্দের ক্ষেত্রে সেলারি বা আর্থিক সুযোগ সুবিধার দিকটাও অনেকে বিবেচনায় নিয়ে থাকেন। অনেকে আবার সেলারির চেয়ে কর্ম–পরিবেশ, ক্যারিয়ার গ্রোথ, সামাজিক মর্যাদা , নিরাপত্তার মতো বিষয় সমূহের উপর গুরুত্বারুপ করে থাকেন। তবে আপনার আগ্রহের বিষয় আর যেখানটায় ক্যারিয়ার গড়তে চান দু’টো যদি একই বিষয় হয় অর্থাৎ প্যাশন ফলো করে যদি ক্যারিয়ার পছন্দ করতে পারেন তবে আপনি কর্মক্ষেত্রে অনেক দ্রুত এগিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি কাজ করেও আনন্দ পাবেন।

 

কি করতে চান সেই লক্ষ্য ঠিক করার পর চাইলে আপনি একে তিন ভাগে ভাগ করে নিতে পারেন যথাঃ স্বল্প মেয়াদী, মধ্য মেয়াধী ও দীর্ঘ মেয়াদী। এটা এমন হতে পারে যে প্রথম দু’বছরে কি অর্জন করতে চান তা নিয়ে পরিকল্পনা তৈরী করুন, এরপর পরবর্তী ৩/৫ বছরের কি কি করতে চান, তারপর নিজেকে আসলে দীর্ঘ মেয়াদে কোথায় দেখতে চান সেসব নিয়ে পরিকল্পনা করে ফেলুন এবং সেই অনু্যায়ী কাজ চালিয়ে যেতে থাকুন।

 

# নিজের দক্ষতার খুঁজ নিনঃ
এর পর দেখে নিতে পারেন বর্তমানে আপনার কি কি দক্ষতা আছে। এটি আসলে নিজেকে জানার একটি সুযোগ তৈরী করে দেয়। একজন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী যে কিনা অল্প কিছু দিনের মধ্যেই যেকোন নামকরা প্রতিষ্ঠানের কর্মী হিসেবে কর্ম জীবনে প্রবেশ করতে যাচ্ছে, ঠিক তার আগ মুহূর্তে কি কি যোগ্যতা আর দক্ষতা সে অর্জন করেছে যা তাকে কাঙ্ক্ষিত জবে পেতে সহায়তা করতে পারে তার একটি সমীক্ষা মাত্র।

 

যেমনঃ মোটামুটি সব জবের ক্ষেত্রেই এক্সেল জানা চাই-ই-চাই, সেক্ষেত্রে আপনি এক্সেলে কতটা পটু সেটা যাচাই করে নিতে পারেন। কিংবা যদি উপস্থাপনার কথা আসি যা আসলে জবের প্রথম দিন আর প্রথম ঘন্টা থেকেই প্রয়োজন পড়ে। জয়েনিং এর প্রথম ঘণ্টাতেই নিজেকে আর সবার সামনে উপস্থাপন করতে হয়, নিজের পরিচয় দিতে হয় যার মাধ্যমে আপনার সম্পর্কে একটি পরিষ্কার ধারণা পেয়ে যান আপনার সহকর্মীরা। আবার যোগাযোগের ক্ষেত্রে আপনি অন্যদের থেকে কতটা এগিয়ে, সসস্যার দ্রুত সমাধানে আপনি কেমন সেইসব একে একে লিপিবদ্ধ করে ফেলুন, নিজেকে জানুন।

 

# দক্ষতা যাচাই করুনঃ
আপনার দক্ষতা নিয়ে অন্যদের ভাবনা আসলে কি? আপনার লিপিবদ্ধ দক্ষতার ব্যাপারে পরিচিত বন্ধুবান্ধব, বিভাগের শিক্ষক কিংবা সিনিয়রদের ভাবনা কি সেটা জেনে নিন। এর মাধ্যমে আপনি আসলে নিজেকে যাচাই করার পাশাপাশি উন্নতির জায়গা খুঁজে নিয়ে আত্মো-উন্নয়নে কাজ করার সুযোগ পাবেন।

 

# নিদিষ্ট জব নির্বাচনঃ
চিন্তা করে দেখুন তো ক্যারিয়ারে আপনি কি করতে চান আর কি করতে চান না! যেমন অনেকেই আছেন বেশ চঞ্চল প্রকৃতির, ঘুরতে পছন্দ করেন যা পক্ষে সারাদিন ডেস্কে বসে কাজ করা সম্ভব না। সুতরাং এমন ক্ষেত্রে ডেস্ক জব নির্বাচন না করে ফিল্ড জব নির্বাচন করা উত্তম। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় – প্রচুর চাহিদা, ফ্লেক্সিবিলিটি, ক্যারিয়ারে দ্রুত উন্নতি, সর্বদা নতুনত্বের শিহরণ আর ভালো ইনকামের কারণে ফিল্ড জব হিসেবে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় সেলস পেশাকে বেছে নেওয়া যেতে পারে।

 

প্রচুর চাহিদা, ফ্লেক্সিবিলিটি, ক্যারিয়ারে দ্রুত উন্নতি, সর্বদা নতুনত্বের শিহরণের কারণে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় সেলস পেশাকে বেছে নিতে পারেন। Image Source: Google.com

 

# কার্যকর নেটওয়ার্ক গড়ে তুলুনঃ
কাঙ্ক্ষিত জব পেতে কে আপনাকে সহায়তা করতে পারে তা খুঁজে বের করুন। অর্থাৎ নেটওয়ার্ক বাড়িয়ে নিন, সিনিয়র আর এলাইম্নিদের সহায়তা নিন। সব চেয়ে ভালো হয় যে ইন্ডাষ্ট্রি বা সেক্টরে কাজ করতে আগ্রহী সেই সেক্টরে কর্মরত লোকজনের সাথে যোগাযোগ বাড়িয়ে তুলুন। পাশাপাশি সেই ইন্ডাষ্ট্রি আর সেক্টর সম্পর্কে বিশদ জ্ঞান আহরণের পাশাপাশি জেনে নিন কিভাবে লোকজন সেখানে কাজ করে থাকেন।

 

# ট্রেনিং এন্ড ডেভেলপমেন্টঃ
কাঙ্ক্ষিত জব পেতে কি ধরণের ট্রেনিং আর ডেভেলপমেন্ট দরকার তা জেনে নিতে সচেষ্ট হোন। কারণ আপনি চাইলেই কাঙ্ক্ষিত চাকুরীটি পাবেন না যদিনা আপনার প্রয়োজনীয় যোগ্যতা আর দক্ষতা না থেকে থাকে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়ঃ কোন প্রতিষ্ঠানের প্রকিউরম্যান্ট বিভাগে কাজ করতে চাইলে আপনাকে ভালো নেগোশিয়েটর হতে হবে, সাপ্লাইয়ারদের সাথে যোগাযোগের ক্ষেত্রেও দক্ষতার পরিচয় দিতে হবে। এমতাবস্থায় আপনার মধ্যে যদি পরিচিত কিংবা অপরিচিতদের সাথে যোগাযোগের ক্ষেত্রে ইতস্ততা বোধ কাজ করে তবে আপনাকে তা কাটিয়ে উঠার জন্যে প্রয়োজনীয় ট্রেনিংয়ের সহায়তা নিতে হবে। বর্তমান দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বের নানান চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রয়োজন নিজেকে অধিক দক্ষ ও যোগ্য হিসেবে গড়ে তুলতে হবে, নিয়মিত নিজের স্কিলস শানিত করতে হবে এবং কর্ম ক্ষেত্রে প্রতিদিনকার কাজ সুষ্টভাবে সম্পাদন করার পাশাপাশি নিজেকে যোগ্য হিসবে প্রতিষ্ঠা করতে হলে নতুন কিছু শিখতে হবে প্রতিনিয়ত।

 

# মেন্টরের সহয়তা নিন
মেন্টরের সহায়তা নিন যিনি অভিজ্ঞতা দিয়ে আপনার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সহায়তা করবেন।
প্রথমে আপনি যে প্রফেশনে আসতে চান সেই প্রফেশনের অভিজ্ঞ কাউকে মেন্টর বানাতে চেষ্টা করুন যিনি আপনার সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা রাখেন এবং তার কাছ থেকে আপনি প্রচুর শিখতে পারবেন। চাইলে পরিচিত নেটওয়ার্ক থেকেও মেন্টর খোঁজে নিতে পারেন আবার মেন্টর নির্বাচনে প্রয়োজনে পরিবার ও বন্ধু-বান্ধবের সহায়তাও নিতে পারেন।

 

একজন ভালো মেন্টর যিনি তার অভিজ্ঞতার ঝুলি থেকে আপনাকে অসংখ্য অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে পারেন, আরো স্ট্যাটেজিক্যালি চিন্তা করতে সহায়তা করতে পারেন এবং আপনার সাফল্যের দরজা খুলে দিতে অসাধারণ সব ভুমিকা রাখতে পারেন। কতক মেন্টর আপনার পুরো ক্যারিয়ারেই অবদান রেখে যেতে পারেন আবার কেউবা নিদিষ্ট সেক্টরের চাকুরীতে মেন্টর হিসেবে ভুমিকা রাখতে পারেন; কেউবা নিদিষ্ট প্রজেক্টে মেন্টর হিসেবে আপনাকে সফলতা পাইয়ে দিতে পারেন।

 

মেন্টরের সহায়তা নিন যিনি অভিজ্ঞতা দিয়ে আপনার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সহায়তা করবেন। Image Source: Google.com

 

# পরিকল্পনা পুনঃ-মূল্যায়ন করুনঃ
প্রতি বছর আপনার পরিকল্পনা পুনঃ-মূল্যায়ন করুন। আপনার তৈরী পরিকল্পনা মোতাবেগ বাস্তবায়ন হচ্ছে কিনা অর্থাৎ আপনি পরিকল্পনা মাফিক এগুচ্ছেন কিনা তা যাচাইয়ের জন্যে বছরান্তে রিভিউর ব্যবস্থা করুন, প্রয়োজনে সংযোজন-বিয়োজন করুন।

 

হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির সম্মানীত একজন প্রফেসরের এক সার্ভেতে দেখা গেছে যে- বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে যারা ক্যারিয়ার নিয়ে লিখিত পরিকল্পনা করে এগিয়েছেন তারা যারা পরিকল্পনা লিখে রাখেননি তাদের থেকে ইনকাম ও পদমর্যাদায় বহুগুণে এগিয়ে ছিলেন। আর যারা ক্যারিয়ার নিয়ে কোনরূপ পরিকল্পনা করেননি তারা পূর্বের দু’দল থেকে অনেক অনেক পিছিয়ে পড়েছিলেন।

 

আর এটা সত্য যে- একটি চাকুরি বা কর্ম-সংস্থানের ব্যবস্থা হওয়া মানেই নিজের পাশাপাশি একটি পরিবারের মৌলিক চাহিদা পূরণের পথে এগিয়ে যাওয়া। কাজেই, বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত অবস্থাতেই পরিবার, শিক্ষক মন্ডলী আর অভিজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে ভবিষৎ ক্যারিয়ার পরিকল্পনা করে ফেলুন; পাশাপাশি আপনার সৃষ্টিকর্তার উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস রেখে প্রয়োজনীয় প্রচেষ্টা চালিয়ে যান সাফল্য ধরা দেবেই।

সদ্য গ্র্যাজুয়েটদের দরকারি ৭ পরামর্শ… 

কোথায় পাবেন কর্পোরেট জব সার্কুলার?

কর্মক্ষেত্রে দক্ষতা সমূহ যা আপনাকে এগিয়ে দেবে…

Follow me on Facebook . Check out my Website .

Hossain Joy
Hossain Joy
Hossain Joy is a seasoned professional in the corporate world, bringing a wealth of experience and insights to the table. With a successful career spanning 12 years, he has navigated the intricacies of the corporate landscape with resilience and determination. Hossain Joy is not only an accomplished writer but also a mentor who is passionate about sharing the valuable lessons learned throughout his journey. He has authored the inspiring book "Journey to My First Corporate Job," offering a compelling narrative of his early career experiences, challenges, and triumphs. In addition to his book, Hossain Joy extends his reach through a thought-provoking blog, where he imparts practical advice and wisdom gained from years of corporate life. He aims to guide and inspire young professionals, providing them with the tools to navigate their own paths to success. Whether through the written word or personal mentorship, Hossain Joy remains dedicated to empowering the next generation of professionals, fostering a community of growth, resilience, and achievement. Connect with Hossain Joy on Facebook.com/Hossain.Joy for more insights and updates on his journey and upcoming projects.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *