উপযুক্ত পরিবেশের অভাবের কারণেই কি তরুণ গ্র্যাজুয়েটরা উদ্যোক্তা না হয়ে চাকুরীর পেছনে ছুটছে‚ ছুটবে?
উদ্যোক্তাদের জন্যে প্রথম সাপোর্টের জায়গা হচ্ছে নিজ পরিবার। প্রতিকূল পরিবেশ আর হাজারো সমস্যা কিংবা প্রতিবন্ধকতার কারণে বেশিরভাগ পরিবারই তাদের সন্তানদের এই অনিশ্চিত পথে যেতে বাঁধা দেন। তারচেয়ে বরং সরকারি-বেসরকারি প্রতিস্ঠানে চাকুরী করাকেই সন্তানের ভবিষ্যতের জন্যে অধিক নিরাপদ মনে করেন। কিন্তু একটি উদ্যোক্তাবান্ধব সংস্কৃতি গড়ে তোলার জন্য পরিবার ও সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন খুব জরুরী বলে আমার মনে হয়। স্বাধীন পেশা নির্বাচনের ক্ষেত্রে আজকের তরুণদেরকে তাদের পরিবার যদি সাপোর্ট না করে তবে দেশে উদ্যোক্তা তৈরী হবে কিভাবে?
তারপর প্রশ্ন আসে – আমাদের আর্থসামাজিক কাঠামো‚ শিক্ষা ব্যবস্থা‚ আইনি কাঠামো বা আর্থিক ব্যবস্থাপনা কি নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টির প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনাদানে যথেষ্ট?
আপনার উত্তরঃ ‘অবশ্যই না’! তবে কেন একটি কার্যকর, বাস্তবমুখী, ও দীর্ঘমেয়াদি উদ্যোক্তা উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং এসবের বাস্তবায়ন হচ্ছেনা?
তরুণদের আরো যে সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় সেটি হলো প্রয়োজনীয় ও সঠিক ধারণা ও তথ্য পাওয়া। নতুন উদ্যোক্তা বা সদ্য গ্র্যাজুয়েটদের জন্য যে কোন ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে গোছানো তথ্যভান্ডার আমাদের নেই বল্লেই চলে। এই যেমন ইন্ড্রাস্টির আয়তন‚ বর্তমান অবস্থা‚ সমস্যা আর ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা ইত্যাদি। এসবের জন্য গুগল নির্ভর হলে আসলে সেই তথ্যগুলো পুঁথিগত বিদ্যারমতো হয়ে যায় যার সাথে বাস্তবের অনেক ফারাক থাকে। আবার প্রথমদিকে ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান শুরুর জন্যে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরী, কর প্রদান, ব্যাংক লোন বা সরকারি সহায়তা পাওয়ার সম্ভাবনা প্রভৃতি নানা বিষয়ে নির্ভুল তথ্য পাওয়ার কোনো প্রতিষ্ঠান পূর্বেও যেমন ছিল না, এখনও তেমন নেই। তবে ইন্টানেট ও যোগাযোগ মাধ্যমের প্রসারের কারণে হয়তোবা কিছুটা হলেও সহজ হয়েছে উদ্যোক্তাদের কার্যক্রম।
বহুজাতিক কোম্পানি আর দেশীয় কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান গুলোর সহায়তায় বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে নানা সময়ে আয়োজিত ‘বিজনেস কম্পিটিশন’ গুলোও এক্ষেত্রে তরুণ গ্র্যাজুয়েটদের আইডিয়া জেনারেট করা সহ অন্যন্য ক্ষেত্রে কাজে আসে। কিন্তু দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে এসবের আয়োজন সম্ভব হয়না।
অতি-সম্প্রতি নতুন উদ্যোগের সাথে জড়িত আছেন এমন অনেকের সাথে কথা বলার সুযোগ হয়েছিলো। যাদের বেশিরভাগ অংশের বক্তব্য হচ্ছে – নতুন কোনো ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রে ব্যাংক ঋণ বা অর্থনৈতিক সহায়তা পাওয়ার জটিল পদ্ধতি ও দীর্ঘ প্রক্রিয়া অনেক সময় অনুপ্রেরণার পথে বাঁধা হয়ে দাড়ায়‚ এমনকি এসময় ছন্দ হারিয়ে হতাশ হয়ে হাল ছেড়ে দেবার চিন্তাও মাথায় ভর করে বসে।
আশা রাখি আপনি এর সাথেও একমত হবেন যে- অবকাঠামো আর আমলাতান্ত্রিক জটিলতা/লাল ফিতার দৌরাত্বকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নতুন উদ্যোক্তাদের পথ দেখানো সাহসী লোকেরও অভাব আছে আমাদের সমাজে। আসলে নতুন উদ্যোক্তা তৈরীর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সরকারি মন্ত্রণালয়-অধিদপ্তর-প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে কাজের সমন্বয় করে ভবিষ্যৎ উদ্যোক্তারা যেন এক জায়গা থেকে সব ধরনের সেবা পেতে পারে সেজন্য উন্নত দেশের আদলে “ওয়ান স্টপ সার্ভিস” আর দরকারী তথ্য ভান্ডারের ব্যবস্থা করা গেলে খুব দ্রুতই নতুন উদ্যোক্তার সংখ্যা বাড়বে বলে আশা করা যায়। সেইসঙ্গে সদ্য গ্র্যাজুয়েট যারা উদ্যোক্তা হতে চায় তাদের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক প্রশিক্ষণ একাডেমী স্থাপন করে দরকারী সব প্রশিক্ষণ আর দিকনির্দেশনার ব্যবস্থা করতে পারলে আমাদের তরুণেরা অবশ্যই অধিক হারে নতুন নতুন উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে অসামান্য অবদান রাখার সুযোগ পেতে পারেন।
বাস্তবে এতোসব সমস্যা আর প্রতিকূলতার মাঝেও এই প্রজন্মের অদম্য তরুণ-তরুণীরা কিন্তু থেমে নেই‚ অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যেও অনেকে নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন এবং কেউ কেউ বেশ সফলতাও অর্জন করেছেন।
সত্যি বলতে অন্য সব ক্ষেত্রের মতো ব্যবসায় জগতেও যুগে যুগে সমস্যা ছিলো‚ এখনো আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে, আর এটাই স্বাভাবিক। এরমধ্যেই যতটুকু সম্ভব মিনিমাইজ করে নিজের মতো করে এগিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ঝুঁকিটুকু নতুন উদ্যোক্তাদের নিতে হবেই। নিজ থেকে উদ্যোগী হয়ে তথ্য-উপাথ্য সংগ্রহ করতে হবে, অভিজ্ঞদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ আর সম্ভব হলে উদ্যোক্তা উন্নয়ন সভা-সেমিনারে অংশগ্রহণ আর যথাযথ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।
আশার কথা হচ্ছে ধীর গতিতে হলেও আমাদের দেশের অবকাঠামোগত পরিবর্তন সাধিত হচ্ছে‚ বিদেশী বিনিয়োগ আস্তে আস্তে বাড়ছে‚ জিডিপি উর্দ্ধমুখী আছে আর সেই সাথে বাড়ছে জনসচেতনতা। আশা করা যায় ভবিষতে স্বচ্ছতা আর জবাবদিহিতার জায়গাও একদিন তৈরী হবে।
এসকল কারণে আপনি স্বপ্ন দেখতেই পারেন যে- আমাদের রাস্ট্রের নীতিনির্ধারকগণ ভবিষ্যৎ উদ্যোক্তাদের নিয়ে আরো অনেক বাস্তবমূখী পরিকল্পনা গ্রহণ করবেন‚ সাহস জুগিয়ে পাশে দাঁড়াবেন‚ উদ্যোক্তা হওয়ার পথে বাঁধা সমূহ দূর করতে আরো অধিক যত্নবান হবেন; আর এভাবেই একদিন আমাদের তরুণ-তরুণীরা নিজেদেরকে উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করবেন‚ নিজের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি অন্যের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে সুনামের সহিত বিশ্বব্যাপী দাপিয়ে বেড়াবেন।
শুভ হোক তরুণ উদ্যোক্তাদের আগামীর পথচলা।
পড়ুন- গ্র্যাজুয়েটদের বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কে জানাও জরুরী
Follow me on Facebook . Check out my Website .
1 Comment
[…] তরুণ গ্র্যাজুয়েটদের উদ্যোক্তা হতে অ… […]