আসছে নতুন বছর ২০১৯ সাল। স্বাভাবিক ভাবেই ব্যবসা সম্প্রসারণের স্বার্থে কোম্পানিগুলোতে নতুন কর্মী নিয়োগের প্রয়োজন পড়ে। যাদের মধ্যে অনেকেই আবার সদ্য গ্র্যাজুয়েটদেরকেও নিয়োগ দিতে দেখা যায়। যদিওবা নবীনেরা সক্ষমতা কিংবা দক্ষতার দিক দিয়ে অভিজ্ঞ কর্মীদের মতো না ততাপি তারা সর্বদা নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত থাকেন, আর সাথে নতুন কিছু শেখার অদম্য ইচ্ছে শক্তি যা তাদেরকে দ্রুত প্রশিক্ষিত করে তুলে প্রতিষ্ঠানের জন্যে সম্পদে পরিণত করে।
প্রশ্ন হচ্ছে আপনি যদি কোন প্রতিষ্ঠানের যেকোন বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত টিম লিডার হয়ে থাকেন তবে কিভাবে দলের নবীন ও অভিজ্ঞ সদস্যদের পরিচালনা করবেন যাতে করে কর্মক্ষেত্রে কাজের পাশাপাশি লাইন ম্যানেজার এবং অধিনস্তদের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় থাকে? আর এটাও সত্যি যে- আপনার যোগ্য নেতৃত্বের উপরই নির্ভর করছে পুরো টিমের তথা প্রতিষ্ঠানের সফলতা। আসুন তবে অভিজ্ঞতার আলোকে বিস্তারিত আলোকপাত করা যাকঃ
আপনি যদি লোকবল তত্বাবধান করে তবে আপনাকেও কিছু ব্যাপারে সতর্ক থাকতেই হবে যেমনঃ কি বলছেন, কিভাবে বলছেন, নিজেকে কিভাবে টিম ওয়ার্কের সাথে সম্পৃক্ত করছেন এবং দল নেতা হিসেবে আপনার উপস্থিতি কিভাবে টিমের সদস্যদের প্রভাবিত করছে ইত্যাদি। বর্তমানে কর্মক্ষেত্রে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণই সবাই প্রত্যাশা করে থাকে, প্রতিদিনই শুভেচ্ছা বিনিময়ের মাধ্যমে দিনের কার্যাবলী শুরু করতে পারেন। নিজ দলের অন্যন্য সদস্যদের কাজের অগ্রগতি তদারকির পাশাপাশি কিভাবে আপনি সহায়তা করতে পারেন তা জিজ্ঞেস করুন, যেকোন প্রয়োজনে লাইন ম্যানেজার হিসেবে তাদের পাশে এসে দাঁড়ান।
রিপোর্টিং বসের সাথে এমন সুন্দর ও প্রানবন্ত সম্পর্ক সবাই উপভোগ করে. Image Courtesy: Evan Photography
টিম পরিচালনা করতে গিয়ে টিমের সদস্যদের সাথে সরাসারি যোগাযোগের সময় শারীরিক অঙ্গভঙ্গিই আপনার হয়ে অধিক কথা বলবে তাই খুব বেশী নমনীয়তা যেমন পরিহার করবেন আবার কঠোর চাহনীও অবশ্যই পরিত্যাজ্য। তারচেয়ে বরং খোলামেলা আলোচনা করুন, মাঝেমাঝে হেঁসে কথা বলুন এবং কথা বলার সময় সহানুভূতি প্রকাশ করুন। কখনোই নিজকে সব সময় আড়াল করে রাখার চেষ্টা করবেন না তাতে করে কর্মীরা ভাবতে পারেন যে আপনি তাদের প্রয়োজনীয় যত্ন নিচ্ছেন না কিংবা কর্ম ক্ষেত্রে তাদের তোয়াক্কা করছেন না; কাজেই সব সময় সবার সাথে যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করুন।
সচরাচর আমরা লক্ষ্য করি যে কর্মীগণ বসদের থেকে শুধুমাত্র অভিযোগ আর ভুলগুলো শুনতে অভ্যস্ত হয়ে থাকেন কিন্তু বস হিসেবে আপনি যদি অভিযোগ কম করে বেশী করে টিমের সদস্যদের ভালো কাজের প্রশংসা করেন, ধন্যবাদ দেন এবং তাদের অর্জনের যথাযথ কৃতিত্ব দেন তবে তারা সহজেই গঠনমূলক সমালোচনা মেনে নেয়ার পাশাপাশি নতুন কিছু শিখতে চাইবে আপনার থেকে যা তাদের পারফর্মেন্স বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।
কর্মক্ষেত্রে তরূণেদের নেতৃত্বদানের সময় বুঝতে হবেযে আমাদের চারপাশের সবার চিন্তা-চেতনা, পছন্দ-অপছন্দ কিংবা রুচিবোধ এক রকম নয়। কাজেই কারো কাপড়চোপড়, চেহারা বা নাম নিয়ে মন্তব্য কিংবা সমালোচনা করার আগে সতর্ক থাকুন; পুরাতন সব ধ্যান-ধারনা বাদ দিন। আর গসিব বা খোশগল্প যতবেশী এড়িয়ে চলা যায় ততই মঙ্গল। এমনকি বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের ক্ষেত্রেও বেশ সতর্ক থাকুন যদি আপনার অনেক টিম মেম্বার আপনার ‘বন্ধু’বা ‘ফলোয়ার’ হিসেবে আপনার সাথে সংযুক্ত থাকেন। সেক্ষেত্রে প্রফেশনাল রীতিনীতি মেনে চলুন নতুবা সম্মান হারানোর একটা রিস্ক থেকেই যায়।
আবার অনেক সময় ছুটি দেয়া নিয়ে অনেকের মধ্যে এক ধরণের কার্পণ্য দেখা যায়। এ ব্যাপারে দেশের শীর্ষ স্থানীয় বহুজাতিক কোম্পানিতে কর্মরত উম্মে কুলসুম লোভা‘র মতামত জানতে চাইলে তিনি বলেন- “ মানুষ শুধুমাত্র টাকা উপার্জনের জন্যেই কাজ করে না বরং উপার্জিত অর্থ ভালোভাবে ব্যায় করার সময়টাও তাকে দিতে হবে। সবাই কোন না কোন পরিবার থেকে এসেছে যেখানে তার অনেক দায়িত্ব ও কর্তব্য থাকে। আবার সামাজিক জীব হিসেবেও আমাদের অনেক সামাজিকতা পালন করতে হয়। তাছাড়া কর্ম ক্লান্ত জীবনের একটু বিশ্রাম আর চিত্র বিনোদনের ব্যাপারতো আছেই। কাজেই লাইন ম্যানেজার হিসেবে আপনাকে আপনার অধীনস্তদের সেসব দিকেও খেয়াল রাখা চাই। ভুলে গেলে চলবে না যে আপনিও আপনার অধীনস্তদের মতো করে একই প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন, এর বেশী কিছু নয়। ”
কাজের ফাঁকে সদলবলে বেড়িয়ে পড়তে পারেন, এতে করে বোঝাপড়া যেমন বাড়বে, তেমনি সম্পর্কও উন্নয়ন হবে।
অন্যদিকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নর্থ-সাউথ হতে ব্যবসায় প্রশাসনে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করতে যাওয়া সাওবান সাওয়ারি আশা করেন যে – “ রিপোর্টিং বস তাদের কথা মনযোগ সহকারে শুনবেন, তাদের সমস্যা বোঝার চেষ্টা করবেন, যেকোন প্রয়োজনে সাড়া দেবেন, সহযোগীতা করবেন এবং নির্ভরতা দিয়ে পাশে থাকবেন।”
আমার ব্যাক্তিগত ভাবনাও তাই। লাইন ম্যানেজার ভালো কাজের মূল্যায়ন করবেন এবং প্রশংসা করবেন। এটাও প্রত্যাশীত যে রিপোর্টিং বস কর্মক্ষেত্রের জন্য প্রযোজ্য প্রয়োজনীয় সব কিছু হাতে-কলমে শেখানোর চেষ্টা করবেন এবং ক্যারিয়ারের জন্য দীর্ঘ মেয়াদী একটি পরিকল্পনাও বাতলে দেবেন।
মোহাম্মদ মারুফুর রহমান, যিনি দেশের শীর্ষ স্থানীয় Group অফ কোম্পানিতে হেড অফ মার্কেটিং হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তার মতে- “কর্মী হিসেবে যেকোন টিমে কাজ করার সময়ে আপনারও কিছু অবশ্য পালনীয় ব্যাপার থেকেই যায়, যেমনঃ সময়মতো অফিসে আসা, নিদিষ্ট সময়ের মধ্যে রিপোর্ট জমাদান, রিপোর্টিং বসের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা ইত্যাদি।”
সেই সাথে বিশ্বাস যোগ্যতা অর্জন করা, নিয়ম অনুযায়ী প্রাতিষ্ঠানিক গুরুতপূর্ণ তথ্যের গোপনীয়াতা বজায় রাখা, উদ্ধত আচরণ থেকে বিরত থাকা, লাইন ম্যানেজারের কথার মাঝখানে ইন্টারাপ্ট না করা, ভুল হলে সরাসরি সরি বলা আর সর্বদা বিনয়ী থাকা যা আপনাকে রিপোর্টিং বসের সাথে খাপ খাইয়ে চলতে সহায়তা করবে বলে আশা রাখি।
কর্পোরেটে টিম লিডার হিসেবে সফল কারা?
Follow me on Facebook . Check out my Website .
3 Comments
[…] কর্পোরেট নেতৃত্ব , একাল বনাম সেকাল […]
[…] কর্পোরেট নেতৃত্ব , একাল বনাম সেকাল […]
[…] কর্পোরেট নেতৃত্ব , একাল বনাম সেকাল […]