অতি সম্প্রতি একটি বহুজাতিক কোম্পানির এন্ট্রি লেভেলের জব সার্কুলারে ফ্রেশ গ্র্যাজুয়েটদের আবেদন করতে উৎসাহিত করা হয়েছে কিন্তু আবশ্যিক শর্ত হিসেবে নির্দিষ্ট সিজিপিএ’র পাশাপাশি “ইন্টার্নশীপ” সম্পূর্ণ করাকে আবেদনের ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তো আগ্রহী যে কেউ চাইলে জেনে নিতে পারেন কোথায় কাঙ্ক্ষিত ইন্টার্ন করলে অধিক লাভবান হবেন, কোথায়-কিভাবে ইন্টার্নশীপ খুঁজে পাবেন, ইন্টার্নশীপ সময়টাতে কি কি করবেন এবং কেনইবা ইন্টার্নশীপকে গুরুত্বের সাথে নেবেন আর ভবিষ্যতে কি কাজে আসবে আপনার এই ইন্টার্নশীপ। আবার কিভাবে ইন্টার্নশীপের অভিজ্ঞতাকে তুলে ধরে কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে এগিয়ে থেকে ইন্টার্ভিউ বোর্ডে বাজিমাত করবেন, সেইসবের সাথে জেনে নিতে পারেন ইন্টার্নশীপের আদ্যোপান্ত!
ইন্টার্ন হিসেবে যোগদানের মাধ্যামে একজন ফ্রেশার ইন্ডাষ্টি এবং কর্মক্ষেত্র সম্পর্কে সম্যক জ্ঞ্যান লাভের পাশাপাশি নানা রকম কাজ শেখার ও প্রয়োজনীয় নেটওয়ার্ক তৈরির সুযোগ পেয়ে থাকেন যা তাকে ক্যারিয়ারের পরবর্তী ধাপে নিয়ে যেতে সহায়তা করে।
ইন্টার্নশীপ হচ্ছে কোম্পানি বা নিয়োগকর্তা কর্তৃক সম্ভাব্য নবীন কর্মীকে তথা সদ্য গ্র্যাজুয়েটকে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কাজ করার সুযোগ দান কে বুঝিয়ে থাকে। এর মাধ্যমে সদ্য গ্র্যাজুয়েটরা বিভিন্ন ইন্ডাষ্টি এবং চাকুরীর বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জনের সু্যোগ পায়। আমাদের দেশে সাধারণত ইন্টার্নের সময়সীমা দুই মাস থেকে ৬ মাস পর্যন্ত হয়ে থাকে। তবে প্রতিষ্ঠান ভেদে কোথাও কোথাও এর সময়সীমা ১ বছর হতেও দেখা যায়। সচরাচর ইন্টার্নশীপ তিন ধরণের হয়ে থাকে। পেইড ইন্টার্ন, কোথাও আংশিক পেইড আবার কোথাও আন-পেইড ইন্টার্নও দেখা যায়। প্রয়োজন অনুসারে বছরের যে কোন সময় কোম্পানি কর্তৃকপক্ষ চাইলে ইন্টার্ন নিয়োগ দিতে পারে। আমাদের দেশে ফুল টাইম ইন্টার্নই বেশী দেখা যায় যেখানে ইন্টার্নরা অফিসের স্থায়ী কর্মীদের মতো নিয়মিত অফিস করে থাকেন।
আমাদের দেশে অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তিন মাসের ইন্টার্নশীপকে একটি পুরো কোর্সের ক্রেডিট হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে অনেক গ্র্যাজুয়েটই ইন্টার্নশীপকে বেশ হালকাভাবে নিয়ে থাকেন। অনেকে আবার এটাকে ইউনিভার্সিটি কর্তৃক আরোপিত বিষয় হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন যা আসলে মোটেও উচিৎ নয়। অনেকে আরো এক ধাপ এগিয়ে গিয়ে ইন্টার্ন না করেই কপি-পেষ্ট এর মাধ্যমে “ গুগল আর ধার করা তথ্য” নির্ভর ইন্টার্নশীপ রিপোর্ট পর্যন্ত জমা দেয়ার চেষ্টা করেন যা আসলে নিজেই নিজের ক্ষতি করার নামান্তর। কর্ম জীবনে ইন্টার্নশীপের বহুবিধ উপকারিতা রয়েছে। এটি আসলে সাহায্য করে কিভাবে ইউনিভার্সিটির কোর্সের পড়াশোনা বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করা যায়। কিংবা ইন্টার্নশীপকে কর্ম জীবনে প্রবেশের আগে ট্রায়াল হিসেবে নিয়েও এই ব্যাপারে সিরিয়াস হওয়া উচিৎ। তাহলে আসুন জেনে নেওয়া যাক কেন ইন্টার্নশীপ এতটা গুরুত্বপূর্ণঃ
সময় ব্যবস্থাপনা শিক্ষা দেয়ঃ
আমরা সবাই জানি কর্মক্ষেত্রে আমাদেরকে প্রতিনিয়তই নির্দিষ্ট ডেডলাইন মেনে চলতে হয়, সময় মতো অফিসে আসতে হয়, মিটিংয়ে ঠিক সময়ে হাজির হতে হয়, বস কে সময় মতো রিপোর্ট জমা দিতে হয় যা আপনি হয়তোবা ইউনিভার্সিটি লাইফে এভাবে করেননি। ইন্টার্নশীপের সময়টা আপনাকে সময় ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে অধিক সচেতন করে তুলবে।
কর্পোরেট জগৎ সম্পর্কে ধারণা দেয়ঃ
ইউনিভার্সিটি আর কর্পোরেট লাইফ আসলে ভিন্ন দুটি জগৎ। যেখানে বন্ধু-বান্ধব নয় চারপাশে বরং ভিন্ন বয়সী, ভিন্ন ভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের, ভিন্ন ভিন্ন দক্ষতার, নানান সংস্কৃতির আর বর্ণের লোকজনের দেখা পাবেন। এই সময়টাতে চেষ্টা করুন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্সের শিক্ষা আর বাস্তব জীবনের কাজের পার্থক্যে গুলোকে চিহ্নিত করতে। চেষ্টা করুন অফিসে নিয়ম কানুন বা আদব কায়দা, আচার- আচরণ, পোশাক –পরিচ্ছেদ, নিয়মানুবর্তিতা তথা ইন্ডাষ্টি ও বিভিন্ন বিভাগের কাজ ও দায়িত্বসমুহ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিতে।
যোগাযোগ দক্ষতা বৃদ্ধি করেঃ
ইন্টার্ন হিসেবে আপনাকে অনেক মিটিং আর ইভেন্টে যোগ দিতে হতে পারে যেখানে বহু লোকের সাথে মেশার সুযোগ তৈরি হবে। আবার প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বিভাগের অনেকের সাথে কাজ করতে হতে পারে। সেসব ক্ষেত্রে আপনাকে সবার সাথে যোগাযোগের জন্য মেইল কিংবা সরাসরি মোবাইলে কথা বলার মাধ্যমে বার্তা আদান প্রদান করতে হবে যা আপনার যোগাযোগ দক্ষতা বাড়িয়ে তুলবে।
ইন্টার্নশীপের অভিজ্ঞতা সিভিকে ভারি করে তুলেঃ
ইন্টার্ন হিসেবে ইন্ডাষ্টিকে জানার পাশাপাশি আপনি অনেক কাজ করার সুযোগ পাবেন। অর্থাৎ একজন সুপারভাইজরের অধীনে আপনাকে কাজ করতে হবে যাতে সময় মতো কাজ শেষ করে সুপারভাইজরকে রিপোর্ট করতে হবে। এভাবে সপ্তাহান্তে বা মাসের শেষে কাজের ক্ষেত্র আর দায়িত্বও পরিবর্তন হতে পারে। আর এভাবেই আপনি নানান কাজের অভিজ্ঞতা অর্জন করবেন এবং পরবর্তীতে আপনি অভিজ্ঞতা গুলোকে সিভিতে তুলে ধরবেন যা নিয়োগ কর্তাগণের কাছে আপনাকে আকৃষ্ট করে তুলবে।
মেন্টর খুঁজে পেতে সহায়কঃ
এই সময়টাতে কাজ করতে গিয়ে প্রতিষ্ঠানের ভেতরে এবং বাইরে অনেকের সাথেই পরিচিত হবার এবং তাদের সাথে কাজ করার সুযোগ তৈরি হবে। আর এর মাধ্যমে আপনি সহজেই পছন্দমতো যে কাউকে মেন্টর হিসেবে নির্বাচন করে নিতে পারবেন যিনি আপনাকে তার অভিজ্ঞতা থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করবেন।
নেটওয়ার্ক বাড়িয়ে তুলেঃ
ইন্টার্নশীপের সময়টাতে যাদের সাথেই কাজ করবেন, সবার সাথেই হাঁসি মুখে কথা বলুন, ভালো রিলেশন গড়ে তুলুন, সোশ্যাল ও প্রফেশনাল উভয় মিডিয়াতে কানেক্টেড হোন, প্রয়োজনে বিজনেস কার্ড বা মোবাইল নাম্বার চেয়ে রাখতে পারেন।
ইন্টার্নশীপের সময়টাতে আপনার করণীয়ঃ
ইন্টার্নশীপের সময়টাতে অধিক শিখতে চেষ্টা করুন। চাইলে আপনি আপনার কাজ দিয়ে, ডেডিকেশন দিয়ে আপনার পজিশনিং করে নিন। এমনকি ইন্টার্নশীপের সময়কালের শেষে যদি কোম্পানি আপনাকে স্থায়ী কর্মী হিসেবে নিয়োগ নাও দেয় তবু আপনি মন খারাপ করবেন না কিংবা এটাকে আপনার কাজের প্রতিফলন হিসেবে নিবেন না। এখন সুযোগ না হলেও পরবর্তী যে কোন সময় জবের জন্য আবেদন করলে ইন্টার্নশীপের অভিজ্ঞতা আপনাকে অন্যদের থেকে এগিয়ে রাখবে। ভবিষৎ রেফারেন্সের জন্য চাইলে আপনি একটি রিকমেন্ডেশন লেটার চেয়ে নিতে পারেন। ইন্টার্ন শেষ হয়ে গেলেও সুপারভাইজর আর সহকর্মীদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ আপনাকে পরবর্তী জব রেফারেন্স পেতে সহায়তা করবে।
অনেক কোম্পানি তাদের ইন্টার্নশীপ প্রোগ্রাম থেকে বেষ্ট ইন্টার্নকে নিয়োগও দিয়ে থাকে কারণ তাতে প্রতিষ্ঠানের অনেক সময় ও অর্থের সাশ্রয় হয়। ইন্টার্নশীপের সময় কালের মধ্যেই একজন ইন্টার্ন কোম্পানি সম্পর্কে সম্যাক ধারণা লাভ করে, বিভিন্ন পজিজন ও এর কাজ সম্পর্কে আইডিয়া তৈরি হয়ে যায় ফলে ইন্টার্নকে নিয়োগ দিলে পারফর্ম করার জন্য যথেষ্ট সময়েরও প্রয়োজন হয় না।
কোথায় ইন্টার্ন করবেনঃ
আপনার পঠিত বিষয় আর ক্যারিয়ার পরিকল্পনার সাথে সামঞ্জস্য রেখে ইন্টার্নশীপের জন্য প্রতিষ্ঠান নির্বাচন করুন তাহলে আপনি অধিক লাভবান হবেন। অর্থাৎ আপনি যে সেক্টরে ক্যারিয়ার গড়তে চান সেই সব কোম্পানিতে ইন্টার্নশীপের জন্য আবেদন করুন।
যেভাবে ইন্টার্নশীপের খোঁজ খবর পাবেনঃ
অধিকাংশ কোম্পানি তাদের ওয়েবসাইটে ইন্টার্নশীপের জন্য আবেদন আহ্বান করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে থাকে। আপনি চাইলে কোম্পানি ওয়েবসাইটের পাশাপাশি রিক্রুটম্যান্ট ফার্ম, জব ফেয়ার, অন লাইন জব পোর্টাল, লিঙ্কডইন, বিভিন্ন ফেসবুক ভিত্তিক গ্রুপ আর পেইজে ইন্টার্নশীপের সার্কুলার পেতে পারেন। খোঁজ পেতে পারেন আত্নীয়-স্বজন, পরিচিত সিনিয়রদের মাধ্যমেও যারা বিভিন্ন জায়গায় জব করেন।
সুতরাং যারা ইন্টার্নশীপ করতে যাচ্ছেন কিংবা ভবিষতে করবেন, সবারই উচিৎ হবে পরিকল্পনা অনুযায়ী সঠিক সেক্টর নির্বাচন করে ইন্টার্নশীপে যোগদান করা এবং একে সিরিয়াসলি নিয়ে ইন্ডাষ্টি সম্পর্কে জানার পাশাপাশি নিজেকেও সমৃদ্ধ করা যাতে করে পরবর্তীতে জব পেতে সহজ হয়।
Follow me on Facebook . Check out my Website .