ক্রম বর্ধমান বিশ্বে লিডারশিপের সংজ্ঞা যেমন খুব দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে ; পরিবর্তন আসছে একজন লিডারের লিডারশীপ স্টাইলের ক্ষেত্রেও । আর এর উপরই নির্ভর করছে নেতৃত্বের সফলতা তথা প্রতিস্ঠানের সামগ্রিক অর্জন। সেই জন্য একজন সদ্য যোগদান করা কর্মীর ক্ষেত্রে প্রায় সব লাইন ম্যানেজার কিংবা প্রতিষ্ঠানকেই সিচুয়েশনাল লিডারশীপ স্ট্যাইল অনুসরণ করতে দেখা যায়। যেখানে বিভিন্ন অবস্থার মধ্য দিয়ে একজন নবীন কর্মীকে যথযথ নির্দেশনা ও প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের দক্ষ মানব সম্পদে পরিণত করা হয়। আসুন তাহলে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাকঃ
ডিরেকশান লেভেলঃ
স্বাভাবিকভাবে একজন সদ্য গ্র্যাজুয়েট কোথাও জয়েন করলে প্রথমতঃ তার লাইন ম্যানেজার তাকে সরাসরি ডিরেকশান বা নির্দেশনা দেন এবং ক্লোজ মনিটরিংয়ের মাধ্যামে নিদিষ্ট কাজটি আদায় করিয়ে নেন । যেখানে কর্মীর মোটিভেশান উঁচুতে থাকে কিন্তু পারদর্শিতা তেমন থাকেনা। এটিকে বলা হয় ডিরেকশান লেভেল।
কোচিংঃ
এই পর্যায়ে একজন লাইন ম্যানেজার কর্মীকে যথাযথ নির্দেশনা এবং ক্লোজ মনিটরিংয়ের পাশাপাশি কাজটি করার যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করেন সেই সাথে অধীনস্থকে কিছু প্রয়োজনীয় পরামর্শও দিয়ে থাকেন। এই পর্যায়ে এসে কর্মীর মোটিভেশান ও কম্পিটেন্সি উভয়ই কম থাকে। সে তার দায়িত্ব বা কাজসমূহ বুঝতে চেষ্টা শুরু করে মাত্র। এই লেভেলের নাম কোচিং।
সাপোর্টিং লেভেলঃ
এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ পর্যায় যেখানে দলনেতা তার দলের সদস্যকে পুরোপুরি সাপোর্ট প্রদান করে থাকেন নির্দিষ্ট কাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। লাইন ম্যানেজার তার সদস্যের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনেন এবং দৈনন্দিন কাজের খুঁটিনাটি সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে দায়িত্বও দিয়ে দেন। যেখানে কর্মীর মোটিভেশান উঠা-নামা করে আর পারদর্শিতা আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে।
ডেলিগেটিংঃ
এই ধাপে এসে দলনেতা তার অধীনস্থকে তার কাজের সিদ্ধান্ত নেবার ও সমস্যা সমাধানের একক ক্ষমতা অর্পণ করেন। এখানে কর্মী নিজেই নিজের অর্জিত শিক্ষা, অভিজ্ঞতা ও তার লাইন ম্যানেজারের দেখানো পথ এবং কোম্পানির নিদিষ্ট নিয়ম-নীতির আলোকে সিদ্ধান্ত নিয়ে কাজ করে থাকেন। এই পর্যায়ে কর্মীর মোটিভেশান ও কম্পিটেন্সি উভয়ই উঁচুতে থাকে ফলে সে তার কাজকে খুবই উপভোগ করে। এই পর্যায়ে কর্মীকে দক্ষ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়ে থাকে এবং প্রতিষ্ঠানও তার থেকে ভালো ফলফল আশা করে।
এমপাওয়ারম্যান্টঃ
এক পর্যায়ে এসে সচরাচর লিডার তার টিমের অধিক দক্ষতাসম্পূর্ণ কাউকে বিশেষ কর্তৃত্ব অর্পণ করেন যাকে আমরা বলে থাকি এমপাওয়ারম্যান্ট। দলের এমন সদস্যের উপরই কিছু কর্তৃত্ব অর্পণ করা হয় যিনি তার কাজের মাধ্যমে অন্যদেরকে ছাড়িয়ে যান। এমনও হয় যে তখন তার দায়িত্ব পড়ে অন্যকে ভালো করতে উৎসাহ দেয়া কিংবা দলের অন্যদের পারদর্শিতা বাড়াতে সহায়তা করা। একেই আসলে বলা হয় এমপাওয়ারিং লেভেল।
এই এমপাওয়ারিং লেভেলে কেউ এসে গেলে লাইন ম্যানেজার তথা প্রতিষ্ঠানের উচিৎ তাকে একই ভূমিকায় বেশীদিন না রেখে বরং অন্য কোন দায়িত্ব দেয়া কিংবা তাকে প্রমোট করা। সরাসরি যাকে আমরা প্রমোশন বলে থাকি। আর কোন কারণে যদি সেটা করা সম্ভব নাহয়-তাহলে বুঝতে হবে যে, কোম্পানি তার সেরা একজন কর্মীকে যথাযথ মূল্যায়ন করছে না বরং শিগগিরই সেরা একজন কর্মীকে হারাতে বসেছে। অনেক সময় এই পর্যায়ে এসে ঐ কর্মীকে প্রমোট করার সুযোগ না হলে সে তার উৎসাহ হারাতে থাকে এবং সেই সাথে তার পারফর্মেন্স নিচের দিকে নামতে থাকবে। এমতাবস্থায় কিছুদিন অপেক্ষার পর উৎসাহ হারিয়ে নিজে থেকে জব সুইচ করতে দেখা যায়। এই পর্যায়ে এসে কর্মী, দল নেতা আর কোম্পানির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ; সবাই মিলে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে পারফর্মারদের যথাযথ মুল্যায়নের চেষ্টা করি এবং কোম্পানির মানব সম্পদের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করি।
সত্যি বলতে এই লিডারশীপ স্টাইলের ক্ষেত্রে লাইন ম্যানেজারের পাশাপাশি সদ্য যোগদান করা নবীন কর্মীরও দায়িত্ব হচ্ছে তার রিপোর্র্টিং বসকে সহায়তা করে যাওয়া এবং প্রতিদিনই কাজ শেখা আর দায়িত্ববোধ জাগ্রত করার মাধ্যমে নিজেকে যোগ্য ও দক্ষ হিসেবে গড়ে তোলা।
শুভ হোক আপনার ক্যারিয়ারের পথ চলা।