একজন সেলস প্রফেশনাল হিসেবে প্রায়ই আমি মার্কেট ভিজিটে যায়। তবে বছরের শেষ দিকে এসে বাৎসরিক ক্লোজিং উপলক্ষে দেশের সব বিভাগ সমূহ, বড় সব জেলা, ব্যবসায়িকভাবে গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা সমূহ এবং অধিক গুরুত্বপূর্ণ ডিলার এবং হোলসেলারদের সাথে দেখা করার চেষ্টা করি। এই ট্যুর ব্যবসায়িকভাবে বেশ গুরুত্বপূর্ণ।অন্যদিকে এই ট্যুর আমাকে অনেক মার্কেট ইনসাইড এবং অসংখ্য বিষয়ে লার্নিং দেয় যা পরবর্তী বছরে পরিকল্পনা সাজাতে সহায়তা করে। ট্যুর চলাকালীন ইন্ডাস্ট্রির পরিচিত অনেকের সাথে দেখা হয়, কথোপকথন চলে।
তেমনি একদিন ট্যুর চলাকালীন সময়ে ফাহাদ খাঁনের সাথে দেখা। এক সময় আমরা এক সাথে একই কোম্পানিতে কর্মরত ছিলাম। তো কুশলাদি বিনিময়ের পর আশেপাশে এক মিষ্টির দোকানে বসে পড়লাম। শুরুতেই দু’জনে পছন্দমত মিষ্টির স্বাদ নিলাম। চা খাওয়ার নেশা জাগলেও মিষ্টির পর চা পানসে লাগার সম্ভাবনা থাকায় চা পানের ইচ্ছে পরিত্যাগ করলাম।
মিষ্টির দোকানের সামনে পেতে রাখা চেয়ার টেবিলে বসে কথা বলা শুরু নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়, নিজের পারফরম্যান্স, ইন্ড্রাস্ট্রির সার্বিক অবস্থা ইত্যাদি নিয়ে। বহু বছরের পুরোনো স্মৃতি চারণাও চললো কিছুক্ষণ । এরপর হঠাৎ করেই আমাদের পুরাতন সহকর্মী রুপন বিশ্বাসের প্রসঙ্গ আসলো। একসময় রুপনও আমাদের সাথে সেইম প্রতিষ্ঠানের কর্মরত ছিলাম। সেলস রিপ্রেজেন্টেটিভ হিসেবে কর্মজীবন শুরু করা রুপন অত্যাধিক পরিশ্রমী, সদালাপী ও স্বপ্নবাজ হিসেবে আমাদের সবার নিকট পরিচিত ছিলেন।
ফাহাদ খাঁনই রুপন সম্পর্কে বলা শুরু করলেন।
জানেন বস রুপন এখন একটি বহুজাতিক কোম্পানিতে হ্যান্ডসাম সেলারিতে জব করেন। কাঙ্ক্ষিত সিক্স ডিজিটের দেখা নাকি আরো ৪-৫ বছর আগেই পেয়ে গেছেন।
কথাটা শুনে আমার খুব ভালো লাগলো, মনে মনে আলহামদুলিল্লাহ্ বললাম এবং ফাহাদ খানের সামনেই আমি খুব প্রশংসা করলাম। আমার খুব ভালো লাগছিলো রুপনের ভালো করার কথা শুনে।
এবার ফাহাদ খাঁন জানতে চাইলেন বস, আপনি তো জানেন আমি আর রুপন একসাথেই কাজ করতাম, প্রায় একই বেতন পেতাম। আর এখন উনি প্রায় দু’লাখ সেলারি পান আর আমি এখনো ৫০-৫৫ হাজারেই আটকে আছি; আসল ঘটনা কী বস? আমি ফাহাদ মানুষটা অনেক স্টেটকাট, মানুষকে তেল দেয় না তাই কী আমার সেলারি বাড়ে না?
আমি জিজ্ঞেস করলাম তরকারি কি শুধু তেল দিয়ে রান্না করে আমাদের দেশে অন্য সব মসলাও লাগে?
খান সাহেবের উত্তরঃ না বস আরো মসলা লাগে, একেক তরকারিতে একেক রকম মসলা লাগে। বিরিয়ানি রান্না করতে আরো অতিরিক্ত মসলাও লাগে।
আমি বললাম সেমভাবে ক্যারিয়ারে ভালো করতে গেলে শুধু তেল দিতে জানলে চলে না, এর সাথে নানা রকম মসলাও লাগে। বিরানী রান্না করতে যেমন স্পেশাল মসলা লাগে, ক্যারিয়ারে স্পেশাল কিছু করতে গেলেও স্পেশাল কিছু কোয়ালিটি বা দক্ষতার প্রয়োজন পড়ে।
তা বস, কি সব স্পেশাল কোয়ালিটি লাগে একটু যদি খুলে বলতেন। আমিতো মনে করি আমার সব কোয়ালিটিই আছে শুধু তেল দেওয়া ছাড়া।
শুধু কি আপনি মনে করলেই হবে নাকি সবকিছু একত্র করে কিভাবে বিরিয়ানি রান্না করতে হয়, স্পেশাল কোন মসলার যাদুতে এতো স্বাদ হয় সেসবও জানতে হয়? আর সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে যার রিজিক যেটুকু আছে ততটুকু সে পাবেই। এই ধ্রুব সত্যকে আপনার মেনে নিতেই হবে। আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা রেখে আপনাকেও কিছু কাজ করতে হবে, ঠিকঠাক মসলা সম্পর্কে জানতে হবে এবং এই মসলার যথাযথ প্রয়োগ সম্পর্কেও স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে। তবেই না সাফল্য আপনার কাছে ধরা দিবে। কী বলেন খাঁন সাহেব?
খান সাহেব এবার বেশ নড়েচড়ে বসলেন। বললেন, – বস, বলেনতো দেখি কিছু মসলার নাম?
শুনেন খাঁ সাহেব, এতোবছর কর্পোরেটে জব করে মসলা বা দক্ষতা সমূহের নাম আপনার অজানা নয়। তারপরও জানার এবং যথাযথ প্রয়োগের ক্ষেত্রে ঘাটতি থাকতেই পারে। আপনি বরং এক কাজ করুন, এখন বাংলা একাডেমীর আয়োজনে বই মেলা চলছে; অমর একুশে বই মেলা। আপনি সময় করে বই মেলায় চলে যান।
বই মেলায় খুব একটা যাওয়া হয়না বস, বইও খুব একটা পড়ি না।
আচ্ছা, তাহলে কী নিজের উন্নয়নের জন্যে ট্রেনিংয়ে অংশ নেন? প্রতি বছর কয়টা ট্রেনিং করেন খান সাহেব?
বস এমন তো আসলে করি না, কোম্পানিও কোন ট্রেনিং এর আয়োজন করে না।
তাহলে কী কারো কাছ থেকে নিয়মিত পরামর্শ নেন ক্যারিয়ার উন্নয়নের জন্য?
না বস সেরকমও করা হয় না, নিজের কাছে যা ভালো মনে হয় তাই করি।
তো বই পড়বেন না, ট্রেনিংয়ে অংশ নেন না, কারো কাছে পরামর্শ জন্য যান না; তাহলে তো আপনার বেতন আজীবনই ৫০-৬০ হাজারই থেকে যাওয়ার কথা, খান সাহেব।
নিয়মিত বই পড়ার অভ্যাস করুন, নিয়মিত ট্রেনিং অংশগ্রহণ করুন, এবং একজন মেন্টাল খুঁজে নিন। তবেই না আপনি সামনে এগিয়ে যেতে পারবেন।
বস, অনুগ্রহপূর্বক তাহলে ভালো বইয়ের নাম বলেন। কোথায় ট্রেনিং নিব সে সম্পর্কে একটু বলে দেন।
বই মেলায় প্রথমেই ৩৩১ নম্বর স্টল “স্বরে অ” প্রকাশনীতে যাবেন। ওখানে অভিজ্ঞদের লিখা বেশ কিছু আত্ম উন্নয়ন মূলক বইপত্র রয়েছে যা অধিকাংশ আমি নিজেও নানা সময়ে সংগ্রহ করে পড়েছি এবং নতুন করে অনেক কিছু জেনেছি; কর্মক্ষেত্রে প্রয়োগ করেছি।
আচ্ছা বস, আপনি কি আমাকে স্পেসিফিক কিছু বই রেফার করতে পারেন? খাঁন সাহেবের জিজ্ঞাসা।
আপনি ৩৩১ নম্বর স্টলে যাবার পর যা যা ভালো লাগে, কিনে নিয়ে এসে পড়া শুরু করবেন; এরপর আপনার প্রতিদিনকার পড়ার অভ্যাসই আপনাকে পথ দেখিয়ে সামনে নিয়ে যাবে ইন শা আল্লাহ্। আপনি নিজেই আস্তে আস্তে বুঝে যাবেন কি কি বই আপনার পড়া উচিৎ, সামনে এগিয়ে যেতে কি কি ডেভেলমড করা উচিৎ, কিভাবে করা উচিৎ ইত্যাদি।
খাঁন সাহেব, এই সুযোগে আমার নিজের লিখা বইয়ের একটু প্রচারণা চালিয়ে নিই। আপনি ‘জার্নি টু বাই মাই ফার্স্ট কর্পোরেট জব’ নামের বইটিও সংগ্রহ করতে পারেন যাতে করে আপনি নিজেকে কিভাবে শানিত করবেন, কিভাবে হাজারো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে সঠিকভাবে অফিস সামলাবেন, আপনার বসের সাথে কিভাবে কাজ করবেন, আপনার টিমকে কিভাবে লিড করবেন, অফিসের অন্যন্য কলিগদের সাথে কিভাবে সুসম্পর্ক বজায় রেখে কাজ করবেন, কিভাবে আপনি একজন দক্ষ মেন্টর খুঁজে পাবেন যিনি আপনাকে গাইড করে সামনে এগিয়ে যেতে সহায়তা করবেন সেসব এই বইতে আশা করি পেয়ে যাবেন। যা আপনাকে একজন রুপন থেকেও আরো ভালো করতে সহায়তা করবে।
খাঁন সাহেব খুব মনোযোগ দিয়ে আমার কথাগুলো শুনলেন। মনে হলো তাঁর চিন্তার জায়গায় কিছুটা হলেও নাড়া পড়েছে। নিজের ভুলভ্রান্তি শুধরে সামনে এগিয়ে যেতে উনি মনে মনে প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন।
আজকে তাহলে চলেন উঠি খান্ সাহেব, দেখা হবে অন্য কোন দিন। দোয়া করি ভালো থাকেন, সুস্থ্য থাকেন, নিরাপদের থাকেন।
জি বস, আমি আজকে অনেক কিছু জেনেছি, বুঝেছি; এখন প্রয়োগের পালা। ঠিক আছে বস, চলেন উঠি। আল্লাহ্ হাফেজ।
পড়ুন –
কর্পোরেট জগতের প্রাথমিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আপনি কতটুকু প্রস্তুত?
Follow me on Facebook . Check out my Website .