বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারীর মধ্যেও থেমে নেই কট্টর সমালোচকদের নানান বিষয়ে সমালোচনা। অতিরিক্ত সমালোচনার ভীরে সত্যিকারের ভালো কাজগুলো যেন হারিয়ে যেতে বসেছে। যৌক্তিক সমালোচনা অবশ্যই সাধুবাদ পাবার যোগ্য কিন্ত ইদানীংকালে বিশেষতঃ স্যোসাল মিডিয়ায় সমালোচনার নামে যেভাবে ব্যাক্তি আর প্রতিষ্ঠানের নামে পরনিন্দা, পরচর্চা, গীবত আর কাদা ছোড়াছুঁড়ি হচ্ছে, সভ্য সমাজে তা কোন ভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা একবারও ভাবিনা যে- যা আপনার কাছে ‘6’ বলে মনে হচ্ছে তা টেবিলের ঠিক উল্টো পাশে বসা অন্য একজনের কাছে ‘9’ বলেই পরিগণিত হবে।
অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, পৃথিবীতে সবচেয়ে সহজ কাজ বোধহয় কারো সমালোচনা করা, পক্ষান্তরে যা গীবতের সামিল (যেহেতু এসব ব্যাক্তির অগোচরে হয়ে থাকে)। আর দুনিয়ার সবচেয়ে কঠিন কাজ হচ্ছে আত্ন-সমালোচনা। সচরাচর কম বেশী সবাই অন্যের সমালোচনা করতে করতে নিজের ভুল-ত্রুটি আর সীমাবদ্ধতার কথা মনের অজান্তেই বেমালুম ভুলে যায়। আজকের সমাজে নিজেকে আয়নার সামনে দাঁড় করিয়ে আত্ন-সমালোচনার মাধ্যমে আত্নশুদ্ধি অর্জন করা লোকের বড়ই অভাব। চারিদিকে শুধু পাণ্ডিত্য জাহির করাদের আনাগোনা।
বছর খানেক পূর্বের এক ঘটনা শেয়ার করি। গিন্নীকে নিয়ে কুমিল্লায় অবস্থিত বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমী (বার্ড) তে ঘুরতে গিয়েছিলাম। যেহেতু এটি একটি প্রশিক্ষণ, গবেষণা ও প্রায়োগিক গবেষণা পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান, তাই এই প্রতিষ্ঠানের বেশ কিছু স্বতন্ত্ব বৈশিষ্ট রয়েছে যা কখনো বার্ড পরিদর্শনে গেলে খুব সহজেই অনুভব করতে পারবেন। তো প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত বার্ডের বিল্ডিংয়ের দেয়ালে অসংখ্য দেয়ালিকার ভীরে এক জায়গায় গিয়ে চোখ আটকে গেল। ওখানে টানানো এক দেয়ালিকায় লিখা রয়েছে –
জ্ঞানের তিনটি স্তরঃ
এখন চারপাশে সঠিক জ্ঞানের অপ্রতুলতা আর অহেতুক ভাব নেওয়া এতো এতো মানুষের উপস্থিতি যা মাঝেমধ্যে আমাদের অসহায় এক অনুভুতি এনে দেয়। কাউকে নিয়ে গঠনমূলক সমালোচনা করতেও ভয় হয়; এমন অস্থির চারপাশে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলা নিশ্চয় করে কষ্টকর।
অথচ আমাদের প্রত্যেকরই উচিৎ অহেতুক অন্যে কোন ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠানের দোষ-ত্রুটি না খুঁজে, পরনিন্দা বাদ দিয়ে গঠনমূলক সমালোচনা করা যাতে ব্যাক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠান এ থেকে প্রয়োজনীয় শিক্ষা নিতে পারেন। আর আমরা সবাই জানি, যে কোন গঠনমূলক সমালোচনা মানুষকে সামনে এগিয়ে নিতে সহায়তা করে, মানসিক প্রশান্তি এনে দেয়। সমালোচনা যদি করতেই হয় তবে জেনে বুঝে গঠনমূলক সমালোচনা করুন।
গত পরশু রাতে আর জে কিবরিয়ার সঞ্চালনায় জনপ্রিয় লেখক ও কলামিস্ট আনিসুল হকের সাক্ষাৎকার শুনতে ছিলাম। স্যোসাল মিডিয়ায় উনি সহ আরো অনেক বিখ্যাত ব্যাক্তিবর্গকে করা ট্রল নিয়ে উনি একটি মজার কথা বলেছিলেন। একদিকে স্যোসাল মিডিয়ায় উনাকে নিয়ে ট্রল বানিয়ে সস্তা সমালোচনা করছেন, উল্টোদিকে একই ব্যাক্তি উনার সাথে দেখা হলে সেলফি তোলার জন্যে অনুরোধ করছেন। অবাক করার মতো ব্যাপার না? মানব চরিত্রের এই যে বৈপরীত্য, এটাকে আমরা কিভাবে মূল্যায়ন করবো বলুন?
শেষ করবো হযরত হাসান বসরী (রহ.) এর সুন্দর কথামালা দিয়ে। উনি বলেছেন “যখন অন্যের দোষচর্চার কথা মনে পড়বে তখনই নিজের দোষগুলোর কথা চিন্তা করবে। ভাববে, কোনো মানুষই তো দোষমুক্ত নয়। আমার মধ্যেও তো এই দোষ আছে, ওই দোষ আছে… । সুতরাং অন্যের দোষচর্চা আমি কিভাবে করি!”
আর যদি ঘটনাচক্রে কারো গীবত হয়েই যায় তাহলে তার জন্যে কাফফারা দিতে পারেন। কাফফারা হতে পারে যার গীবত করা হয়েছে তার জন্য বেশি বেশি করে দোয়া করা, ইস্তেগফার করা। আল্লাহ্ আমাদের সঠিক বুঝ দান করুন।
দোয়ার দরখাস্ত রইলো।
পড়ে নিনঃ গৃহবন্দী…? নাকি নিজেকে বদলে ফেলার সুযোগ?
Follow me on Facebook Check out my Website