হঠাৎ পাওয়া লম্বা ছুটি, বিশ্বব্যাপী মহামারী করোনার কারণে অনেকটা অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবেই নিজ গৃহে বন্দি হয়ে যাওয়া, উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায় সময় পার করা। এযেন খানিকটা কঠিনই বটে।এরই মধ্যে কাজপাগল অনেকেই ভাবতে শুরু করেছেন কিভাবে সময়টাকে কাজে লাগানো যায়। অভিজ্ঞ ও বিজ্ঞজনেরা অনলাইন কোর্স করা, বই পড়া কিংবা বাসায় যৎসামান্য শারীরিক ব্যায়াম করার মতো নানান কাজের ব্যাপারে মতামত দিচ্ছেন। এক্ষেত্রে আমার ব্যাক্তিগত ভাবনাগুলো একটু ব্যাতিক্রম, বলা যায় গতানুগতিক ধারার বাইরে। আসুন তবে চোখ বুলিয়ে নেয়া যাকঃ
শুরুতেই অনুগ্রহপূর্বক মনে করে দেখুন তো সর্বশেষ কবে আপনার ধর্মের পবিত্র মহা গ্রন্থ খানা পাঠ করেছেন? আরো মনে করার চেষ্টা করুন তো কবে এলার্ম ছাড়া মুয়াজ্জিনের সুমধুর কন্ঠে ভেসে আসা আযানের ধ্বনিতে বিছানা ছেড়ে মহান রাব্বুল আলামিনের দরবারে সিজদা করেছেন, দু’চোখ অস্রুতে ভিজিয়ে প্রভুর কাছে কায়োমনো বাক্যে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন? যদি আপনার উত্তর না হয় তবে একটু আন্তরিকতার সহিত চেষ্টা করে দেখুন তো স্রষ্টার দিকে নিজেকে নিয়োজিত করতে পারেন কিনা?
আচ্ছা, এবার বলুন তো দেখি সকালে কাজে বের হওয়ার পূর্বে সবশেষ কবে গৃহিনী/সঙ্গিনী কিংবা মায়ের নাস্তা তৈরির কাজে সহায়তা করেছেন? এখন কিন্তু আপনার হাতে অফুরান সময়, বাসার কাজে হাত লাগাতেই পারেন।
আসুন একটু ভিন্ন বিষয়ে কথা বলি। স্নেহময়ী বৃদ্ধ মা-বাবার পাশে বসে শেষ কখন জিজ্ঞেস করেছেন “মা/বাবা, বলতো তোমার কি কি খেতে ইচ্ছে করছে আজ সেসবই কিনে আনবো বাজার থেকে”….? এখন কিন্ত একসাথে বসেই উনাদের প্রিয় খাবার খাওয়া আপনিও উপভোগ করতে পারেন।
আপনার আদরের ছেলেমেয়েদের নামকরা কোচিংয়ে দিয়েছেন, ভালো টিউটর দিয়েছেন খুব ভালো কথা কিন্তু এরা আপনার থেকে আসলে কি চায় সেটা কি কখনো জিজ্ঞেস করে দেখেছেন? প্রাণ খুলে এদের নিয়ে সর্বশেষ হুহু করে হেসেছিলেন কবে মনে পড়ে? আশা করি এবার এই সুযোগ হেলায় ফেলবেন না।
যেকোন সমস্যা কিংবা সিদ্ধান্তহীনতায় প্রায়শই আপনি আপনার কোনো একজন শুভাকাঙ্ক্ষীর দ্বারস্থ হোন, তার খোঁজ খবর নেওয়ার জন্যে দু’মিনিট সময় ব্যয় করেছেন কবে? এবার তবে একটু খোঁজ নিতেই পারেন, মনে খুলে মোবাইলে কথাও বলে নিতে পারেন।
সেই প্রাইমারী আর হাই স্কুলের নিঃস্বার্থবান স্কুল শিক্ষকবৃন্দ যিনারা পরম মমতায় আপনার বর্তমান অবস্থানে আসার ভীত গড়ে দিয়েছেন, সর্বশেষ কবে উনাদের খবরাখবর নিয়েছেন শুনি? আশা করছি এইসময়ে আপনার প্রিয় শিক্ষকগণ আপনার থেকে একটা ফোন কল পেতে যাচ্ছেন।
বহু বছর আগে আপনার পরিবারের কঠিন বিপদের সময়ে পাশে এসে দাঁড়ানো সেই নিকটাত্মীয় বৃদ্ধ-বৃদ্ধার খবর জানেন তো? এই রকম খোঁজ খবর নেয়াটাকে নিয়মিত রুটিনে নিয়ে আসতে পারেন। আমি কথা দিচ্ছি-তাতে করে আপনি খুব ভালো অনুভব করবেন, অন্যরকম ভালো লাগায় ভরে উঠবে আপনার মন।
ছোট্ট বেলার বাল্যবন্ধু যাকে ছাড়া স্কুল, আড্ডা, খেলা কিছুই জমতো না, পরবর্তীতে যে কিনা আপনার মতো পজিশনে আসতে পারেনি বটে কিন্তু যোগাযোগ আছে তো সেই প্রিয় বন্ধুটির সাথে? ব্যস্ততায় যোগাযোগ না থাকলেও সমস্যা নেই, আজই একটি ফোন কল দিন; দেখুন আনন্দে চমকে উঠবে উভয়য়ের মন!
এবার কর্পোরেটে চলে আসি। গ্র্যাজুয়েশন শেষে হন্য হয়ে সর্বত্র চাকুরী খুঁজে বেড়িয়েছেন কিন্তু কেউ সাড়া দেয়নি, সবশেষে এগিয়ে এসেছে এমন একজন যার থেকে আপনি হয়তোবা আশাই করেননি কিন্তু চাকুরী নিশ্চিত হবার পর ধন্যবাদ টুকু দিয়েছেন তো? আছে নাকি সেই ভদ্রলোকের কন্টাক্ট নাম্বার? দিননা একটা ফোন, অনেক দিন পরে হলেও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন আর নিজের মাঝে এক প্রকার আনন্দ খুঁজে নিন।
আপনার অফিসে সদা আপনার সেবায় নিয়োজিত অফিস পিয়নের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী অসুস্থ অনুভব করছেন বলে আপনাকে সে চা দেবার ফাঁকে কাপা কন্ঠে বলেছিল, কিন্তু কাজের চাপে আপনি কি আর তাঁর স্ত্রীর খোঁজ নিতে পেরেছিলেন? সম্ভব হলে এক্ষুনি তাকে কল করুন, দেখুন কি রকম সুন্দর প্রতিক্রিয়া হয়!
দিন কয়েক পূর্বে আপনার বাসার নিরাপত্তায় নিয়োজিত দারোয়ান চাচা তাঁর ছোট ছেলের এসএসসি পরীক্ষা উপলক্ষে একখানা নতুন শার্ট চেয়েছিলেন কিন্তু নানা ব্যস্ততায় আপনি শার্ট দেওয়ার কথা ভুলে গিয়েছিলেন আর দারোয়ান চাচাও ভয়ে আর বলেন নি! আজ কি তবে সেই চাচা আর তাঁর ছেলের সামান্য খোঁজ খবর নেয়া যায়?
আচ্ছা, এইবার বলুন তো কে বলেছে মহামারী করোনার ছুটির এই দিনে আপনার কোন কাজ নেই? আমি তো মনে করি আপনার করার আছে অনেক কিছু জনাব!
আর হ্যাঁ, এসবের বাইরে আরো কিছু করার ভাবনা মাথায় এলে কমেন্টের মাধ্যমে শেয়ার করতে ভুলবেননা যেন!!!
ঘরে থাকুন, নিরাপদের থাকুন।
জেনে নিন কর্পোরেট জবের প্রস্তুতি কীভাবে নেবেন …
Follow me on Facebook Check out my Website
3 Comments
[…] পড়ে নিনঃ গৃহবন্দী…? নাকি নিজেকে বদলে ফেলার সু… […]
[…] পড়ে নিনঃ গৃহবন্দী…? নাকি নিজেকে বদলে ফেলার সু… […]
[…] পড়ে নিনঃ গৃহবন্দী…? নাকি নিজেকে বদলে ফেলার সু… […]