মাহিন, সিফাত ও নাহিদ তিন বন্ধু। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম দিন থেকেই তিন জন এক সাথে ক্লাস করে, ক্যাফেটরিয়ায় নিয়মিত আড্ডা দেয় আর মাঝে মাঝে দূরে কোথাও ঘুরতে যায়। প্রথম দুই বছর এভাবেই কেটে যায় তিন বন্ধুর। তৃতীয় বর্ষের শুরুতেই মাহিনকে আড্ডার বদলে লাইব্রীতে বেশী দেখা যায় কারণ মাহিন বিসিএস প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে। অনুরূপ ভাবে সিফাতও ব্যাংক জবের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে। কিন্তু বিসিএস কিংবা ব্যাংক নয়, নাদিদের পছন্দ নেসলে, রবি কিংবা কোকাকোলার মতো বহুজাতিক কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের চাকুরী । সমস্যা হলো- নাহিদ এসব কোম্পানির নাম জানলেও সে জানেনা কীভাবে এসব প্রতিষ্ঠানে আবেদন করতে হয়, সার্কুলার কোথায় পাওয়া যায় কিংবা কর্পোরেট জবের প্রস্তুতিইবা কীভাবে নিতে হয়? নাহিদের মতো অসংখ্য শিক্ষার্থীদের নিয়েই আজকের আয়োজন।
আসলে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় দক্ষতা সমূহ যেমন- নেতৃত্বদানের ক্ষমতা, দলগতভাবে কাজ করার দক্ষতা,দ্রুত সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা আর যোগাযোগের মতো দক্ষতা সব রকম জব তথা সব কোম্পানিতেই প্রয়োজন পড়ে বলে আমি মনে করি। এর বাইরে প্রযুক্তিগত দক্ষতা,সাবলীল ভাবে নিজেকে উপস্থাপন করতে পারা, ইংরেজী ভাষার উপর ভালো দখল থাকা অনেকাংশেই বাঞ্চনীয়। তাছাড়া নিদিষ্ট ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকা আপনাকে সামান্য হলে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে রাখবে বৈকি।
দরকারি সব জব স্কিলস যেমনঃ নেতৃত্বদানের গুণাবলী, যোগাযোগের দক্ষতা, সমস্যা সমাধানের দক্ষতা, পজিটিভ মনোভাব, সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা ইত্যাদি অর্জন করা চাই।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে ছাত্রাবস্থায় কীভাবে প্রয়োজনীয় দক্ষতা সমূহ অর্জন করবেন?
প্রথমত যেখানেই পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছেন সেখান থেকেই নিজেকে গড়ে তোলার চেষ্টা চালিয়ে যান। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনে নিজেকে জড়িয়ে নিন। শুধুমাত্র কোন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সদস্য হয়ে থাকলে চলবে না‚ সংগঠন চালানোর দায়িত্বে নিজেকে নিয়ে যেতে হবে। সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনে অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে যেয়ে নিজের নেতৃত্বগুণের প্রকাশ ঘটাতে হবে‚ সাংগঠনিক দক্ষতা অর্জন করতে হবে এবং এসব কিছু করতে গিয়ে যেসব সমস্যার সম্মুখীন হবেন সেগুলো সুন্দরভাবে সমাধান করা জানতে হবে, শিখতে হবে। সকল ভয় আর জড়তা পরিহার করে ডিবেট কিংবা ইংলিশ ক্লাবে যোগদান করুন, নিজের উপস্থাপনার দক্ষতা বাড়িয়ে নিন। পার্ট টাইম জবও আপনার দক্ষতা বাঁড়াতে সহায়তা করবে। সেই সাথে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ বাড়াতে সচেষ্ট হোন আপনার শিক্ষক-সিনিয়র-কর্পোরেট সবার সাথে, প্রয়োজনে অভিজ্ঞদের মূল্যবান পরামর্শ নিন।
ছাত্রাবস্থাতেই বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা আপনার শহরে আয়োজিত জব ফেয়ার তথা ক্যারিয়ার রিলেটেড সেমিনার ওয়ার্কশপে অংশ নিন, সুযোগ থাকলে প্রফেশনাল প্রশিক্ষণ গ্রহণ করুন আর এসব আপনার দক্ষতা বাড়ানোর পাশাপাশি আত্নবিশ্বাস বাড়াতে সহায়তা করবে যা ইন্টার্ভিউ জয় করতে কাজে আসবে। এবং গ্র্যাজুয়েশনের পর আপনার সিভিতে এই সকল কার্যক্রম সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলুন যা আপনাকে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ডাক পেতে সহায়তা করবে। উপরে উল্লেখিত দক্ষতা অর্জন ছাড়াও কর্পোরেট জবের জন্যে আরো বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উপর প্রস্তুতি নিতে হবে। এবার চলুন সেসব জেনে নিই-
চাকুরীর আবেদনের জন্যে একটি কার্যকর সিভি / রিজুমি বানিয়ে নিন যাতে আপনার যোগ্যতা আর দক্ষতা সমূহের পূর্ণ প্রতিফলন থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ক্লাস রুমের বাইরের যেসব এক্সট্রা কারিকুলাম বা কো-কারিকুলার কার্যক্রমে জড়িত ছিলেন সেগুলোকে সুন্দর ভাবে সিভিতে ফুটিয়ে তুলবেন যাতে করে নিয়োগকর্তা অন্য আবেদনকারীর মধ্য হতে আপনাকে সহজেই আলাদা করতে পারেন। সিজিপিএ যা-ই হোকনা কেন; তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হবেন না বরং কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে যদি কোন পার্ট-টাইম কিংবা ফুল টাইম কাজের অভিজ্ঞতা থেকে থাকে তবে তাও সিভিতে তুলে ধরবেন। তাতে করে ইন্টার্ভিউতে ডাক পাবার সম্ভবনা অনেকাংশেই বেড়ে যাবে।
আমাদের দেশের সবচেয়ে বড় অনলাইন জব পোর্টাল হচ্ছে এই বিডিজবস ডট কম। সেখানে নিজের একটি একাউন্ট খোলার মাধ্যমে আপনি আপনার যোগ্যতার ভিত্তিতে পছন্দসই জবে আবেদন করার সুযোগ পাবেন।
আমরা সবাই সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকের সাথে খুব পরিচিত। আর লিঙ্কডইন হচ্ছে এমন এক প্রফেশনাল সামাজিক নেটওয়ার্কিং সাইট যেখানে আপনি কর্পোরেট জগতের প্রায় সবাইকেই খুঁজে পাওয়ার পাশাপাশি খুঁজ পেতে পারেন অসংখ্য জব সার্কুলারের। তাই আর দেড়ি না করে আজই প্রোফাইল খুলে ফেলুন গুরত্বপূর্ণ এই সাইটটিতে।
আপনি যে প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত আছেন সেই প্রতিষ্ঠানের অসংখ্য সিনিয়র ভাইয়া -আপুরা কর্পোরেট দুনিয়ার নানা কোম্পানিতে গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত আছেন। আপনি চাইলে উনাদের মাধ্যমেও জব সার্কুলারের খোঁজ খবর নেওয়ার পাশাপাশি নিতে পারেন প্রয়োজনীয় পরামর্শও।
কোন কোন কোম্পানি সরাসরি ইন্টার্ভিউ নেন, কেউবা লিখিত পরীক্ষার আয়োজন করেন এবং লিখিত পরীক্ষায় কৃতকার্যদের নিয়ে ইন্টার্ভিউর আয়োজন করে থাকেন। লিখিত পরীক্ষার ক্ষেত্রে আবেদনকৃত চাকুরীর দায়িত্বসম্পর্কিত বিষয়সমূহের উপরই গুরুত্ব আরোপ করতে দেখা যায়। অনেক প্রতিষ্ঠান আবার লিখিত পরীক্ষার আয়োজন না করে গ্রুপ ডিসকাশনের ব্যবস্থা করে থাকেন যেখানে আপনাকে ৬/৮ জনের একটি নিদিষ্ট গ্রুপে নিদিষ্ট সময়ের মধ্যে একটি কেইস সলভ করতে দিয়ে পাওয়ার পয়েন্টের মাধ্যমে প্রেজেন্টেশান করতেও বলে থাকেন।
ইন্টার্ভিউতে নিদিষ্ট পদের জন্য দরকারি ও উপযুক্ত স্কিলস যেমনঃ নেতৃত্বদানের গুণাবলী, যোগাযোগের দক্ষতা, সমস্যা সমাধানের দক্ষতা, পজিটিভ মনোভাব, সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা ইত্যাদি যাচাই করা হয়ে থাকে। আবার অনেক সিচুয়েশনাল এবং ইন্টারেক্টিভ প্রশ্ন করেও প্রার্থীর নলেজের গভীরতা যাচাই করে থাকেন। আর তাই এর জন্যে যথাযথ প্রস্তুতির পাশাপাশি ইন্টার্ভিউ বোর্ডে আত্নবিশ্বাসী থাকা চাই। আর নিয়োগ প্রক্রিয়ার এই ধাপটি সুন্দর ও সাবলীল ভাবে উৎরাতে পারলেই আপনি আপনার স্বপ্নের চাকুরীর দেখা পেয়ে যাবেন বলে আশা করা যায়।
সবার জন্য শুভ কামনা রইল।
পড়ুন – বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাসের বাইরে যা করা যেতে পারে!
কর্পোরেট জগতের প্রাথমিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আপনি কতটুকু প্রস্তুত?
Follow me on Facebook . Check out my Website .
2 Comments
[…] জেনে নিন কর্পোরেট জবের প্রস্তুতি কীভাবে নেবেন… […]
[…] জেনে নিন কর্পোরেট জবের প্রস্তুতি কীভাবে নেবেন… […]