আপনি নিশ্চয় লক্ষ্য করে থাকবেন যে- সম্প্রতি সোস্যাল মিডিয়াতে রিপোর্টিং বস ও রিপোর্টির মধ্যকার একটি অনাকাঙ্ক্ষিত, অনভিপ্রেত ও দুঃখজনক ঘটনার ভিডিও ঘুরে বেড়াচ্ছে। কর্মক্ষেত্রে এ ধরনের অবিবেচনা প্রসূত ঘটনা মোটেও কাম্য নয় এবং এর দায়ভারও উভয়ের উপর বর্তায় কারণ রিপোর্টি কেন এমন আক্রমনাত্বক আচরণ করেছেন তার কারণও খতিয়ে দেখতে হবে। ভিডিওটি দেখে ব্যাক্তিগত ভাবে আমার মনে হয়েছে এটা ছিলো বহুদিন পুষে রাখা পুঞ্জিভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ এবং যেভাবে তিনি প্রকাশ ঘটিয়েছেন সেটা শুধু অন্যায় নয়, অপরাধের মধ্যেও পড়ে। কর্পোরেটে এটি নিঃসন্দেহে একটি কলঙ্কজনক ঘটনাও বটে। অনাকাঙিক্ষত এ ঘটনাটির কারণে এটিও প্রতীয়মান হয় যে ভিডিওটিতে উল্লেখিত রিপোর্টিং বস এবং রিপোর্টির সম্পর্ক মোটেও ভালো ছিলোনা।
অথচ রিপোর্টিং বসের সাথে পজিটিভ সম্পর্ক কর্মক্ষেত্রে খুবই কার্যকর ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এক্ষেত্রে উভয় পক্ষকেই কিছু বিষয় মাথায় রেখে চললে সহজেই এমন সব কনফ্লিক্ট যেমন এড়ানো যায়, তেমনি প্রফেশনাল সীমারেখাটাও বজায় থাকে। একসাথে কাজ করবেন, কাজ শেষে কদাচিৎ হ্যাংআউটে যাবেন, চেক ইন দিবেন; সপ্তাহান্তে পার্টিতে দেখা হবে, বসও সব সময় বন্ধুসুলভ আচরণ করার চেষ্টা করবেন আর আপনিও বসের খোঁজ-খবর নেবেন এটাইতো স্বাভাবিক, তাই না?
আর হেলদি সম্পর্কের ক্ষেত্রে শুধু বস কেন, অফিসের সবার সাথেই ভালো সম্পর্ক বজায় রেখে চলা উচিৎ। একজন রিপোর্টিং বস কখনো একজন ভালো মেন্টর, কখনো মোটিভেটর কিংবা কোচ আবার কখনো আপনার জাজ হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি কতক ভালো বস আপনাকে মূল্যবান সব পরামর্শ দিয়ে সামনে এগিয়ে নিতে সহায়তা করবেন। আর তাই কাজের জায়গায় তাকে যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করে পথ চলুন।
অপরদিকে রিপোর্টিং বসেরও রিপোর্টির প্রতি কিছু দায়িত্ব আর দায়বদ্ধতা রয়েছে । এই যেমন সত্যিকার অর্থে টিমের ভালো চাওয়া, টিম মেম্বারদের প্রয়োজনীয় সময় ও সাপোর্ট দেয়া, কাজের ক্ষেত্রে সত্যিকার ফিডব্যাক আদান–প্রদান করা যাতে রিপোর্টি নিজেকে শুধরে নিতে পারেন। খুঁটিনাটি সব বিষয়ে নিজের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা না করে বরং কাজের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় স্বাধীনতা দেয়া এবং নিয়মিত ওয়ান অন ওয়ান সেশনে বসা যাতে করে রিপোর্টি তার ইচ্ছেমতো কথা বলার কিংবা মতামত দেয়ার সুযোগ পায়। আর তাতে করে অনেক কনফ্লিক্টস দূর হয়ে ছোট বড় অনেক সমস্যার সমাধানও চলে আসবে যাতে করে যেকোন অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনভিপ্রেত ঘটনাও এড়ানো সম্ভব হবে।
একজন রিপোর্টি তথা একজন প্রফেশনাল হিসেবে আপনি যে পজিশনেই কাজ করেননা কেন, আপনার উচিৎ হবে অফিসের নিয়ম মেনে সময়মতো অফিসে আসা, ঠিকমতো রিপোর্ট জমা দেয়া, ভুল তথ্য সংবলিত রিপোর্ট প্রদান থেকে বিরত থাকা, তথ্যের গোপনীয়তা বজায় রাখা, আচারণে বিনীত থাকা, প্রথমে বসের বক্তব্য মনোযোগ দিয়ে শুনা তারপর অনুমতি সাপেক্ষে নিজের বক্তব্য পেশ করার অভ্যাস করা, যে কোন ভুলের জন্যে দুঃখ প্রকাশ করা এবং কাজের মাধ্যমে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করে একটি হেলদি রিলেশনশিপ গড়ে তোলার চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া।
বর্ণিত বিষয়াবলীর কথা মাথায় রেখে পথ চললে কর্মক্ষেত্রে অনেক কনফ্লিক্ট কমে আসবে এবং উভয় পক্ষের মাঝেই সুন্দর সম্পর্ক বজায় থাকবে বলে আশা করা যায়। এছাড়া প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানেরই নিজস্ব কিছু নিয়ম -নীতি বা আচরণগত পলিসি থাকে যা সব লাইন ম্যানেজার ও তার টিমে কাজ করা সবাইকেই অপছন্দ হলেও মেনে চলতে হয়, মানিয়ে নিয়েই পথ চলতে হয়।
সুন্দর হোক আপনার ক্যারিয়ারের পথচলা।
পড়ুনঃ কিভাবে দ্রুত টিমের শ্রদ্ধা অর্জন করবেন?
Follow me on Facebook . Check out my Website .