তখন ২০১২ সাল। সিলেট-সুনামগঞ্জের পাঠ চুকিয়ে আমি তখন ঢাকায় টেরিটোরি সেলস ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত। সিলেটে থাকাকালীন শুনেছি ঢাকার মার্কেটে কাজ করা অনেক চ্যালেঞ্জিং, তার উপর অধিক ওয়ার্কলোড, অনেক সাহসী আর আপডেটও নাকি হতে হয়। তো এসবের অভিজ্ঞতা নেওয়ার লোভ সামলাতে না পেরে ঢাকায় কাজ করার সুযোগ খুঁজতে ছিলাম; আল্লাহ্ পাক সুযোগ করে দিয়েছিলেন এবং যথারীতি এফএমসিজি ইন্ড্রাস্টিতে।
তাছাড়া শুনেছি ঢাকায় কাজ করলে টপ বসদের সান্নিধ্যে আসা যায়, ক্লোজ মনিটরিংয়ের আওতায় আসা যায় যাতে করে লার্নিংটা খুব ভালো এবং দ্রুত হয়। তো প্রথমে কাজ শুরু করলাম মিরপুর টেরিটোরিতে। এরপর অবশ্য প্রায় পুরো ঢাকার অলিগলিতে, এমনকি পুরাণ ঢাকা আর কেরানীগঞ্জেও কাজ করার সুযোগ হয়েছিলো।
তো সেসময় ঢাকায় কাজ করা বেশ উপভোগ করেছিলাম। ব্যবসায়িক নানা পরিকল্পনায় ডিরেক্ট ফিল্ডের প্রতিনিধি হিসেবে মাঝেমধ্যে হেড অফিসে ডাক পড়তো; টপ বসরা মার্কেটের খুটিনাটি জানতে চাইতেন, আমিও মার্কেটের নানা ইনফরমেশন শেয়ার করতাম; মাঝে মাঝে আমার নিজস্ব মতামতও দিতাম।
তো কাজ করতে এসে দেখা গেল হেড অফিসের অন্যসব বিভাগের সাথেও টুকটাক কাজ করতে হচ্ছে, কাজের পরিধিটাও বাড়ছে। এটা আমার লার্নিংয়ের জন্যে খুব ভালো ব্যাপার ছিলো।
প্রায়শই বসদের অনেক বিজ্ঞ আলোচনা শুনতাম, বোঝার চেষ্টা করতাম কোম্পানি কি চাচ্ছে; আমাদের কি করা উচিৎ ইত্যাদি। মাঝেমধ্যে বসরা মার্কেট ভিজিটে আসতেন, মার্কেটের নানা সমস্যা আর সম্ভাবনা নিয়ে বিস্তর কথা হতো।
তো একদিন সেলস ডিরেক্টর বস আসলেন মার্কেট ভিজিটে, আমি এটাকে লার্নিংয়ের এক বিশাল সুযোগ হিসেবে নিলাম। রুট, টেরিটোরি, ড্রিস্টিবিউটর, পণ্য, মার্কেট রিটার্ন, টিম ইত্যাদি নিয়ে কথা বলা শেষে চলে গেলাম অন্য এক প্রসঙ্গে।
হঠাৎই জিজ্ঞেস করে বসলাম- “স্যার, আপনার মতো করে ন্যাশনাল সেলস লিড দিতে গেলে কত বছর লাগতে পারে আমার?” আমার তখন মনে হয়েছিলো প্রশ্ন শুনে উনি অবাক হননি। আর হলেও সেটা প্রকাশ করেননি। প্রশ্নের উত্তরে খুব নম্রতার সাথে উনি বলেছিলেন “এই পর্যায়ে আসতে আমার ১০ বছর লেগেছে, আপনি যেভাবে কাজ করছেন তাতে করে ৮ বছরেই ন্যাশনালি টিম লিড দেবার সুযোগ পেতে পারেন।”
এর রোডম্যাপ হিসেবে উনি অধিক সংখ্যক জেলা/অঞ্চলে কাজ করে অভিজ্ঞতা অর্জনের উপর গুরুত্বারোপ করেছিলেন; বলেছিলেন দায়িত্বের বাইরেও যথাসম্ভব কাজ করে যেতে।
তো উনার উত্তর শুনে আমি তখন খুব ইন্সপায়ার্ড হয়েছিলাম। এরপর চাকুরী সূত্রে আমরা আলাদা হলেও আল্লাহ্ রহমতে যোগাযোগ বন্ধ হয়নি। ক্যারিয়ারে যেকোন সমস্যা আর পরামর্শের জন্যে বারংবার ছুটে গিয়েছি, ঘন্টার পর ঘন্টা উনি আমাকে সময় দিয়েছেন, দিয়েছেন মূল্যবান সব দিকনির্দেশনা। কর্পোরেটে এমন আরো অনেক পরোপকারী, ভালো মানুষের দেখা পেয়েছি যাদের সান্নিধ্য মাশা আল্লাহ্ আমার দক্ষতাকে শানিত করেছে। এমনসব ভালো মানুষদের প্রতি কৃতজ্ঞতার শেষ নেই।
এখন অনুভব করি, উনাদের মতো এমন ভিশনারী অনেক কর্পোরেট লিডার আমাদের দরকার; যাদের মূল্যবান পরামর্শ আর দিকনির্দেশনায় আরো বহুসংখ্যক কর্পোরেট লিডার উঠে আসবে এবং সেইসাথে আমাদের দেশে ব্যবসা পরিচালনা করার জন্যে পাশ্ববর্তী দুইদেশ থেকে অগণিত জনবল হায়্যার করে আনা কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।
পড়ুন সেলস ক্যারিয়ারের শুরুতে কি করবেন?
পড়ুনঃ রোডম্যাপ টু সেলস প্রফেশন
Follow me on Facebook . Check out my Website .
2 Comments
অভিজ্ঞতা শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ। লাখ টাকার উপদেশ দিলেন স্যাার। সবার শেষ কথাটা বাস্তবায়িত হোক।
[…] সেলস স্মৃতি কথা -২ তে চোখ বুলিয়ে নিন… […]