অতি সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্ডিয়ে পেড়িয়ে অনেক সদ্য গ্র্যাজুয়েটই কর্পোরেট দুনিয়াই প্রবেশ করেছেন। আর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পাঠ চুকিয়ে কর্পোরেট জগতে প্রবেশের পর সাবাইকেই বেশ কিছু প্রাথমিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেই সামনে এগিয়ে যেতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্ত আঙ্গিনা ছেড়ে কর্পোরেটের নতুন কর্ম পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নেয়া একটু সময় সাপেক্ষ ব্যাপার তবে কঠিন কিছু নয়। তবে একজন সদ্য গ্র্যাজুয়েটের চাকুরীতে প্রবেশের প্রথমদিককার সময়গুলো বিশেষত প্রবেশনের ছয় মাস আসলেই কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রবেশন সময়টার সর্বোত্তম ব্যবহার নিয়ে অনেক নিউ জয়েনারের আগ্রহের কথা বিবেচনা করেই আজকের এই আয়োজন!
আসলে প্রবেশনের এই সময়টা একদিকে যেমন অধিক লার্নিংয়ের এবং অপরদিকে প্রাপ্ত নির্দেশনা গুলো কত দ্রুত‚ নির্ভুল আর সুন্দরভাবে বাস্তবায়ন করে চলেছেন সেটাও কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ। সেক্ষেত্রে ইউনিভার্সিটি লাইফে করা উল্লেখযোগ্য সংখ্যক এসাইনমেন্টস যা আপনাকে ডেডলাইন মিট করতে শিখিয়েছে‚ অসংখ্য প্রেজেন্টেশন‚ ডিবেটিং, অর্গানাইজার হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা ও অন্যসব এক্সট্রা ক্যারিকুলাম এক্টিভিটিস আপনাকে নিশ্চিতভাবেই সহায়তা করবে বলে আমি বিশ্বাস করি। আর ইন্টার্নশিপ সময়টাতে করা নানান কাজ আপনাকে প্রবেশনারি সময়টা ভালোভাবে উৎরাতে সাহায্য করবে। কাজেই এখন যারা ইন্টার্নশিপে জয়েন করেছেন তাদের কে বলবো- অনুগ্রহ করে সময়টাকে কাজে লাগান, কাজ শিখুন যার ফল পরে ভোগ করতে পারবেন।
আর এটা তো সত্য যে- বিশ্বায়ন ও হাইটেকের এই সময়ে বেড়ে উঠা সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত তরুণ গ্র্যাজুয়েটদের কাছ থেকে নিয়োগকর্তা তথা লাইন ম্যানেজারগণ স্বভাবতই অধিক প্রত্যাশা পোষণ করে থাকেন। আর এটা খুবই স্বাভাবিক এবং যৌক্তিকও বটে। তাই তরুণ কর্মীদেরও উচিৎ সেই প্রত্যাশার কথা মাথায় রেখে কর্মক্ষেত্রে অধিক মনোযোগী হওয়া।
শুরুতেই পোশাক- আকাশের ক্ষেত্রে অধিক ক্যাজুয়ালিটি পরিহার করে ফরমালের দিকে দাবিত হোন। সম্ভব হলে ওয়্যারড্রপ পুরোপুরি পরিবর্তন করে নতুন কাপড়-চোপড়ে ভরিয়ে দিন। সেই সাথে জুতো-মোজা, বেল্ট, হাত ঘড়ি প্রভৃতি দিকেও নজর দিন। ভালো ব্যবহারের পাশাপাশি পোশাক -পরিচ্ছেদও আপনার ব্যাক্তিত্বকে ফুটিয়ে তুলবে আর এটা আপনাকে স্বীকার করতেই হবে। সব সময় পরিপাটি থাকার চেষ্টা করুন যাতে অন্যরা আপনার সম্পর্কে ভালো ধারণা পোষণ করেন।
প্রতিষ্ঠানের নিয়মনীতি তথা কালচার সম্পর্কে জানা জরুরী। একেক জায়গায় কর্পোরেট কালচার একেকরকম হয়ে থাকে তাই আপনার প্রতিষ্ঠানের কালচার সম্পর্কে জানার এবং সেভাবেই কাজ করার চেষ্টা করুন। কোন প্রতিষ্ঠানই বিলম্বে অফিসে পৌঁছানো, অগোছালো থাকা, অহেতুক নানা রকম অজুহাত দাঁড় করানো, কাউকে না জানিয়ে অফিস কামায় দেয়া, টাইম লাইন মিস করা ইত্যাদি পছন্দ করে না। কাজেই এইসব বিষয়ে সতর্ক রাখুন। অপরদিকে প্রতিষ্ঠান আপনার থেকে কি কি কাজ চায় তাও আপনাকে মাথায় রাখা চাই।
আমার ব্যাক্তিগত পরামর্শ হচ্ছে- ক্যারিয়ারের শুরুর প্রথম দিন থেকেই নতুন জিনিস শেখার প্রতি আপনার অদম্য আগ্রহের কথা জানান দিন। ইন্ডাকশন বা অভিষেক প্রোগ্রামে নিজের দায়িত্ব ও কর্তব্য সমূহ ভালোভাবে বোঝে নেয়ার ক্ষেত্রেও প্রয়োজনীয় সংখ্যাক প্রশ্ন করুন।
নিয়োগ প্রাপ্তির প্রথম দিন থেকেই যেকোন কাজে নিজ থেকে অন্যসব সহকর্মীদের প্রতি সহাযোগীতা মূলক মনোভাব দেখান‚ সম্ভব হলে আগেভাগে অফিসে চলে আসুন আর সময়ের দু-চার-পাচ মিনিট পরে অফিস ত্যাগ করুন‚ নিজেকে প্রমাণ করতে দায়িত্বের বাইরেও অতিরিক্ত কাজ করতে শিখুন‚ চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার মানসিকতার তৈরী করুন; প্রয়োজনে নিজে থেকে নতুন নতুন বিজনেস আইডিয়া আর প্রজেক্ট প্রপোজালও দিতে পারেন। এসব কর্তৃপক্ষের কাছে আপনি যে একজন ডেডিকেটেড কর্মী সেই বার্তাই পৌঁছে দেবে যা আপনাকে দ্রুত সাফল্য এনে সহায়তা করবে।
নিজেকে আলাদাভাবে তুলে ধরতে সচেষ্ট হোন, কাজে অধিক মনোযোগী হোন। Image Courtesy: Google
প্রতিযোগীতামূলক এই সময়ে ক্যারিয়ারের শুরুতেই নিজের সম্পর্কে পজিটিভ ইমেজ তৈরীতে মনোযোগী হোন। কাজের প্রতি আপনার অসাধারণ ডেডিকেশন আর কলিগদের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক আপনাকে পরবর্তী ধাপে নিয়ে যেতে নিশ্চিত ভাবেই সহায়তা করবে বলে আমার বিশ্বাস।
কথায় আছে বিশ্বাসে মেলায় বস্তু, তর্কে বহুদূর। নিজ দায়িত্ব পালনে সর্বদা আত্মবিশ্বাসী হোন কারণ উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ সব সময়ই চান যে-কর্মীরা সর্বদা নিজেদের দক্ষতা আর সামর্থ্যের উপর পূর্ণ আস্থা রেখে প্রতিষ্ঠানের উন্নতির জন্যে কাজ করবেন। তবে নবীন কর্মীদের এটাও মনে রাখতে হবে যে-অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস দেখাতে গিয়ে কোথাও যেন দাম্ভিকতা প্রকাশ না পায়। বরঞ্চ বিনয়ী মনোভাব বজায় রেখে কাজ করুন, মানুষ আপনাকে মনে রাখবে।
জানেনতো, যে কোন কাজে অভিজ্ঞ হতে চাইলে ভয় ও সংকোচ পরিহার করে বস আর সহকর্মীদের কে নানা বিষয় জিজ্ঞেস করতে হবে। মিটিংয়ে সবার সামনে নিজের মতামত তুলে ধরতে কখনো পিছবা হওয়া যাবে না। এমনকি নিজের বিভাগ ছাড়াও অন্যসব বিভাগের সহকর্মীদেরও হাঁসি মুখে কোশলাদি জিজ্ঞেস করার পাশাপাশি দরকারি তথ্য জেনে নিতে পারেন।
সহকর্মী হিসেবে একই টিম বা কোম্পানিতে কাজ করতে গিয়ে একে অন্যের সাথে সম্পর্কের উন্নয়ন হয়, হৃদ্যতা বাড়ে। তাই বলে কখনো অন্য কোন সহকর্মীর দোষ–ত্রুটি খুঁজে বেড়াবেন না। আর কখনোই অন্য সহকর্মীর ব্যাপারে কাউকে নেগেটিভ কিছু বলে কাজের পরিবেশকে নষ্ট করে দেবেন না। বরঞ্চ নতুন কর্মী হিসেবে কাজের প্রতি অধিক মনোযোগী হবার চেষ্টা করুন।
ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ থেকে শুরু করে একদম প্রতিষ্ঠানের শেষ লেয়ারে অবস্থান করা সবাইকে যথাযথ সম্মান দেখাতে ভুলবেননা । কোন ভাবেই কাউকে খাটো করে দেখা বা কটু কথা বলার দরকার নেই বরং ভাবেন যে- এখানে সবাই আপনারই সহকর্মী, সবাই মিলে একটি পরিবারের মতো। আসলে ভুলে গেলে চল্বেনা যে- কর্মক্ষেত্রে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ সর্বদা উত্তম কর্ম-পরিবেশ নিশ্চিত করে।
আবার সর্বদা সম্মান দেখাতে যেয়ে কাজের ক্ষেত্রে সহকর্মী তথা সিনিয়রদেরকে কোন কিছু জানতে চেয়ে প্রশ্ন করতে দ্বিধা করবেননা যেন, যত বেশী প্রশ্ন করবেন ততই আপনি জানতে ও শিখতে পারবেন। মজার ব্যাপার হলো এই সময়টাতে আপনি প্রতিষ্ঠানের ভেতর ও বাইরে থেকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যাক শুভাকাঙ্ক্ষী পেয়ে যাবেন যারা আপনার ক্যারিয়ারকে এগিয়ে নিতে যথাসম্ভব সহায়তা করে যাবেন। আর এভাবেই আপনি একটি কার্যকরী কর্পোরেট নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে পারবেন যা কর্মক্ষেত্রের প্রাথমিক চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবেলার পাশাপাশি আপনার লার্নিং তথা পুরো ক্যারিয়ারকে অনেক দূর এগিয়ে নিতে সহায়তা করবে বলে আশা রাখি।
ভালো থাকুন আপনি; বর্ণিল হোক আপনার কর্পোরেট লাইফ।
Follow me on Facebook . Check out my Website .
1 Comment
[…] প্রথমদিককার সময়গুলো বিশেষত প্রবেশনের ছয় মাস খুব গুরুত্বপূর্ণ । এই সময়টা একদিকে যেমন অধিক […]