ব্রিটিশ স্থাপত্যের আকর্ষণীয় নির্মাণশৈলীর দৃষ্টিনন্দন ক্যাম্পাসে

বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাসের বাইরে যা করা যেতে পারে!
September 20, 2018
স্বপ্নবাজ তারুণ্যের আমন্ত্রণে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে
October 19, 2018

আকর্ষণীয় নির্মাণশৈলীর দৃষ্টিনন্দন রাজশাহী কলেজের প্রশাসনিক ভবন যা ব্রিটিশ ভারতীয় ঔপনিবেশিক স্থাপত্যের উজ্জ্বল উদাহরণ বহন করছে।

এক যুগেরও অধিক সময় পর রাজশাহী কলেজ ক্যারিয়ার ক্লাবের আমন্ত্রণে সিল্ক হেভেন খ্যাত রাজশাহীতে যাওয়ার সুযোগ হয়েছিলো। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে যাওয়ার সময়কার রাজশাহীর সাথে বর্তমান সময়ের শিক্ষা নগরী হিসেবে পরিচিত রাজশাহীর পার্থক্য আসলে আকাশ–পাতালের সমান। অসংখ্য সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আর তারুণ্যের উচ্ছ্বাসের পাশাপাশি ছিমছাম আর অল্প বিস্তর অরণ্যে ঘেরা সুন্দরভাবে সাজানো রাস্তা চোখে পড়ে বৈকি। আর চোখে পড়বে হঠাৎ করেই গড়ে উঠা অসংখ্য ছোট বড় রেস্টুরেন্টের। বাস্তবিক অর্থে নগরায়নের ফলে যেখানে আমাদের দেশের অন্যন্য বিভাগীয় শহর যেভাবে যানজট, জনজট, ধূলো-ময়লা আর আবর্জনায় নোংরা হয়; সেখানে বিখ্যাত পদ্মা পাড়ের শহর রাজশাহী এখনও বেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নই বলা যায়।

 

যদিওবা শিল্পায়নের ছোঁয়া ঠিক সেভাবে লাগেনি এই মহানগরীতে তবুও পৃথিবীর সুখী মানুষের শহরের তালিকায় ঠাই পাওয়া এই রাজশাহীতে এসে শ্রবজীবি আর সাধারণ মানুষের সরলতা, আন্তরিকতা আর হাঁসিমাখা মুখ দেখে আপনার মন যে আনন্দে ভরে উঠবে সেকথা নির্দ্বিধায় বলা যায়। মজার ব্যাপার হচ্ছে ২৫/৩০ টাকায় ডাব পাওয়া মনে শুধু এই শহরেই সম্ভব। রিক্সা ভাড়া থেকে শুরু করে ফলমূল-শাকসবজি আর অন্যন্য জিনিসপত্রের দামও বেশ সস্তা-ই মনে হলো।

 

অন্যদিকে প্রাচীন বাংলার পুন্ড্র সাম্রাজ্যের অংশ হিসেবে রাজশাহীর রয়েছে সুপ্রাচীন ইতিহাস। সাধারণভাবে বলা হয় এই জেলায় বহু রাজা-জমিদারের বসবাস ছিলো যার জন্য এ জেলার নাম হয়েছে রাজশাহী। আর স্বাভাবিকভাবেই আপনি রাজশাহীতে পুঠিয়া রাজবাড়ির মতো জমিদার বাড়ির দেখা পাবেন। দেখতে পাবেন লর্ড কারমাইকেল কর্তৃক নভেম্বর ১৩, ১৯১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশের প্রথম জাদুঘর ‘বরেন্দ্র জাদুঘর’ যা প্রত্নতত্ত্ব সংগ্রহের দিক থেকে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সংগ্রহশালা হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। প্রায় ৯ হাজারেরও অধিক সংগ্রহশালার পাশাপাশি এখানে রয়েছে হাজার বছর আগের সিন্ধু সভ্যতার নিদর্শনও। রয়েছে সুলতান নাসিরউদ্দিন নসরাত শাহ কর্তৃক ১৫২৩ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত ঐতিহাসিক ইসলামিক স্থাপত্য বাঘা মসজিদ সহ অসংখ্য ঐতিহাসিক প্রাচীন স্থাপনা। ব্রিটিশ রাজত্বের সময়ে রাজশাহীকে সে সময়ে রেশম চাষের প্রধান কেন্দ্র হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছিল। তখন রাজশাহীতে একটি সরকারী কলেজ ও রেশম শিল্পের জন্য একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও স্থাপন করা হয়।

 

ফুলার ভবন (নির্মাণকাল ১৯০৯ খ্রিষ্টাব্দ) আর পুকুরের পদ্ম মিলে তৈরী হওয়া এমন মনোরম দৃশ্যের দেখা মেলে রাজশাহী কলেজ ক্যাম্পাসে

 

এবার রাজশাহী সরকারি কলেজ নিয়ে কিছু বলা যাকঃ আকর্ষণীয় নির্মাণশৈলীর দৃষ্টিনন্দন এই কলেজটি ১৮৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এটি ঢাকা কলেজ ও চট্টগ্রাম কলেজ এর পরে বাংলাদেশের ৩য় প্রাচীনতম কলেজ হিসেবে বিবেচিত যেখানে ৩২,০০০ এর অধিক শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে । একজন দক্ষ ইংরেজ প্রকৌশলীর পরিকল্পনায় নির্মিত গাঢ় লাল বর্ণের দোতলা ভবনটি কালের গ্রাস জয় করে নগরীর প্রধান ও প্রাচীনতম সড়কের পাশে আজও মাথা উঁচু করে ঠিক দাঁড়িয়ে আছে; সেই সাথে এটি একটি ব্রিটিশ ভারতীয় ঔপনিবেশিক স্থাপত্যের উজ্জ্বল উদাহরণও বহন করছে। রাজশাহী আগত যে কেউ চাইলে একটু সময় নিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রুটের পাশাপাশি ঘুরে আসতে পারেন আকর্ষণীয় নির্মাণশৈলীর দৃষ্টিনন্দন রাজশাহী কলেজ ক্যাম্পাসও।

 

১৮৮৮ সালে প্রখ্যাত দানবীর হাজী মুহম্মদ মহসীন-এর আর্থিক অনুদানে নির্মিত হাজী মুহম্মদ মহসীন ভবন

 

এগিয়ে চলা রাজশাহী কলেজ আসলে একটি ঝকঝকে চকচকে নয়নাভিরাম ক্যাম্পাস। প্রতিটি বিল্ডিংয়ের সুনিপুণ নির্মাণশৈলীর পাশাপাশি বেশ গাছগাছালিও রয়েছে। এমনকি ময়লা ফেলার জন্যে রয়েছে নিদিষ্ট জায়গা এবং সবাই ক্যাম্পাস পরিষ্কার রাখার স্বার্থে সদা সচেতন। আর এই ক্যাম্পাসের পুকুর পাড়ের সৌন্দর্য যে কাউকে বিমোহিত করবে।

 

এমনকি ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারীর ভাষা আন্দোলনকে উৎসর্গ করে শহীদদের স্মরণে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা তখন একটি শহীদ মিনার নির্মাণ করেন যাকে সম্ভবত দেশের প্রথম শহীদ মিনার মনে করা হয় । অবাক করা তথ্য হচ্ছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরের ৬৮৫টি কলেজের মধ্যে এবছর রাজশাহী কলেজ বাংলাদেশের সেরা কলেজ হিসেবে দ্বিতীয় বারের মত পুরস্কৃত হয়েছে! শুধু তাই নয়, আমাদের বাংলাদেশে এই কলেজ হতেই সর্বপ্রথম মাস্টার্স ডিগ্রি প্রদান করা শুরু হয়।

 

ক্যারিয়ার ক্লাব আয়োজিত ‘Road To Corporate World’ সেমিনার শেষে সম্মানিত শিক্ষকবৃন্দ ও আয়োজকদের সাথে।

 

এতসব ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক এই কলেজটিতে ৩৪টির মতো সামাজিক– সাংস্কৃতিক সংগঠন রয়েছে। রয়েছে ক্যারিয়ার ক্লাব, বিজনেজ ক্লাবের মতো অনেক ক্লাব যারা বর্তমান সময়ে জব ফেয়ার থেকে শুরু করে নানা ওয়ার্কশপ-সেমিনারের আয়োজন করে থাকেন। সবার শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিত্ব অধ্যক্ষ প্রফেসর মহা. হবিবুর রহমান স্যারের যোগ্য নেতৃত্বে আর শ্রদ্ধেয় উপাধ্যক্ষ প্রফেসর আল-ফারুক চৌধুরী স্যার, ড. লুৎফর রহমান আর জাকির আল ফারুকী স্যারের মতো বহু নিবেদিত প্রাণ শিক্ষকবৃন্দের সহযোগীতা, বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ আর ক্লোজ মনিটরিংয়ের কারণে শিক্ষার্থীরা নিজেদের প্রতিভাকে বিকশিত করার যথেষ্ট সুযোগ পাচ্ছেন এই কলেজ ক্যাম্পাসে।

 

বিসিএস আর সরকারি চাকুরীর প্রতি অসম্ভব রকমের দুর্বলতা। অথচ ৮০% চাকুরীর সুযোগ হয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহে। সরকারি চাকুরীতে আসন সংখ্যা সীমিত সেই সাথে আছে বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা কিংবা সমস্যাও। সমাজের কঠিন বাস্তবতা আর আমাদের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেবনায় ক্যারিয়ার নিয়ে নতুন করে ভাবা, আরো অধিক সচেতন হওয়া এবং সব শেষে একটি যৌক্তিক সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া খুব জরুরী।

 

তারুণ্যকে নিজের অভিজ্ঞতা থেকে গাইডলাইন দিয়ে এগিয়ে নেয়াটা বরাবরই আমি উপভোগ করি

 

ক্যারিয়ার ক্লাবের আয়োজনে ‘Road To Corporate World’ নামক সেমিনারে এই কলেজের তরুণ শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে তাদের মেধা, দরকারি সব দক্ষতা আর যোগ্যাতার খুব একটা অভাব পরিলক্ষিত হয়নি। বিভিন্ন ক্লাব আর সংগঠনে যুক্ত থাকা এবং কাজ করার সুবাদে এদের বেশীরভাগেরই সাংগঠনিক দক্ষতা, নেতৃত্বদানের ক্ষমতা, দ্রুত সমস্যা সমাধানের দক্ষতা আর উপস্থাপনা বেশ চমকপ্রদ।

 

দেশীয় ও বহুজাতিক কোম্পনির নিয়োগ প্রক্রিয়া উৎরে যাবার প্রয়োজনীয় মেধা, দক্ষতা আর যোগ্যাতা থাকা সত্বেও, বেসরকারি সেক্টর সম্পর্কে বিশদ জ্ঞান, আগ্রহ আর প্রয়োজনীয় আত্নবিশ্বাসের অভাবের কারণেই আশানুরূপ গ্র্যাজুয়েট কর্পোরেট জগতে নিজেদেরকে সেভাবে মেলে ধরতে পারছেননা।

 

 

শিক্ষার্থীদের অভিজ্ঞ প্যানেলের সামনে ইন্টার্ভিউ দেয়ার পাশাপাশি সুযোগ ছিলো ভয়কে জয় করে অডিয়েন্সের সামনে নিজেকে উপস্থাপন করারও।

 

এই অবস্থা কাটিয়ে ঊঠতে করনীয় হিসেবে এলাইম্নিদের সাথে একটি কার্যকরী নেটওয়ার্ক তথা সেতু বন্ধন গড়ে তোলা যাতে করে তাদের কর্ম জীবনের দক্ষতা আর অভিজ্ঞতার ভান্ডার থেকে শিক্ষার্থীরা চাইলে অনেক কিছু শিখতে পারে যা তাদের গ্র্যাজুয়েশন পরবর্তী সময়ে বেশ কাজে আসবে বলে আশা করা যায়। সব চেয়ে ভালো হয় যে ইন্ডাষ্ট্রি বা সেক্টরে কাজ করতে আগ্রহী সেই সেক্টরে কর্মরত লোকজনের সাথে যোগাযোগ বাড়িয়ে তোলা, প্রয়োজনীয় পরামর্শ নেয়া।

 

আমাদের দেশের বিভিন্ন ইন্ডাষ্ট্রি আর কর্পোরেট জগৎ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ সৃষ্টিতে আরো অধিক পরিমাণে প্রচার প্রচারণার পাশাপাশি নলেজ শেয়ারিং ক্ষেত্র তৈরি করা, কর্পোরেট রিলেটেড সেমিনার–ওয়ার্কশপ আয়োজন তথা ছাত্র-শিক্ষক সমন্বয়ে প্রতি বছর বিভিন্ন ইন্ডাষ্ট্রিয়াল টুরের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। সেই সাথে সম্প্রতি অত্র কলেজের ক্যারিয়ার ক্লাব কর্তৃক আয়োজিত সেমিনারে সম্মানিত শিক্ষকবৃন্দ এবং কর্পোরেট অভিজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত প্যানেল প্রদত্ত গাইডলাইন সমূহ যথাযথ অনুসরণ করে সামনে অগ্রসর হলে আশা করা যায় যে– অচিরেই কর্পোরেট জগতে গ্র্যাজুয়েটরা সাফল্যের দেখা পাবেন।

 

হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা ও একদল উৎসুক-স্বপ্নচারী মুখ। 

 

তবে শিক্ষার্থীদের মনে রাখতে হবে যে- শুধু পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত থাকলে যেমন চলবে না, তেমনি শুধুমাত্র কো-কারিকুলার নিয়ে পড়ে থাকলেও হবেনা বরং এই দু’য়ের মাঝে ব্যালেন্স করেই শিক্ষার্থীদের এগিয়ে যাওয়াই উত্তম। আর ক্লাসে কিংবা ক্লাসের বাইরে যেখানেই হোক না কেন সর্বদা নতুন নতুন জিনিস শেখা তথা নিজের দক্ষতা বৃদ্ধিতে সর্বদা মনোযোগী হওয়া এবং কাঙ্ক্ষিত ইন্ডাষ্ট্রি সম্পর্কে বিশদভাবে জ্ঞান লাভ করা উচিৎ। এমনকি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষ হয়ে গেলেও একটি কার্যকরী নেটওয়ার্কিং আর সেই সাথে লার্নিং প্রসেস যেন বন্ধ না হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখে পথ চললে শিক্ষার্থীদের আগামী সুন্দর বলে আশা করা যায়।

আরো পড়ুন-

স্বপ্নবাজ তারুণ্যের আমন্ত্রণে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে

কর্পোরেট জগতের প্রাথমিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আপনি কতটুকু প্রস্তুত?

Follow me on Facebook . Check out my Website .

Hossain Joy
Hossain Joy
Greetings! I would love to be connected with you for learning and sharing purposes. Personally, I am a Sales & Marketing Professional, continuous learner and an enthusiastic sightseer who loves to take challenges as well. I do believe we should always try to contribute to the society in our own way from our own position to develop the society as a whole. Out of the belief, I initiated a blog (www.hossainjoy.com) in 2017 to share my learnings and experiences with the youngsters who usually are confused about career plan and many a time frightened of the future. In this blog, I am incorporating the articles and case studies reflecting my own experiences that I have gained throughout my career till date. It’s about struggles, failures and successes. I hope this will widen your understanding about the career path, personal development and job market. I also expect it will lead you to a decision point regarding your own career. In case of any related query, I’m readily available to assist you with best of my efforts! So, how may I help you?

3 Comments

  1. Mahabur Rahman Masum says:

    অনেক সুন্দর একটা দিকনির্দেশনা। অনেক ধন্যবাদ ভাই।
    পরবর্তী লেখার জন্য অপেক্ষায় থাকলাম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *