ছাত্ররাজনীতিঃ মধ্যবিত্তের একান্ত ভাবনা

জীবন ও একজন আলি বানাত
June 23, 2018
যে বৈশিষ্ট্য সমূহ চবি কে অন্যান্য ইউনিভার্সিটি থেকে অনন্য করে তুলেছে
August 3, 2018

মধ্যবিত্তের উচিৎ পরিবারের কথা বিবেচনা করা

জামালপুরের আক্কাস সবেমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে; তাও আবার নামকরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। মাশাআল্লাহ্ ছেলে অনেক মেধাবী আর প্রচন্ড পরিশ্রম করে হাজারো ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের মধ্যে হতে চান্স পেয়ে পিতা-মাতার মুখ উজ্জ্বল করেছে।

ভবিষ্যতে মেধাবী এই ছেলেটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে পরিবারের হাল ধরার পাশাপাশি মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করার মাধ্যমে সমাজে মুখ উজ্জ্বল করবে; বেশিরভাগ পাবলিক ইউনিভার্সিটিতে পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীদের সম্মানিত  অবিভাবকগণের ভাবনা আসলে এমনই।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে দূরদূরান্ত হতে আগত বেশিরভাগই নিম্নবিত্ত-নিম্নমধ্যবিত্ত কিংবা বড়জোর মধ্যবিত্ত পরিবার হতে উঠে আসা মেধাবী তরুণ যারা আগামীর স্বপ্ন পূরণে অনেক ঝড়-ঝাপটা পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙ্গিনায় পা রাখে।

স্বল্প বেতনের চাকুরী কিংবা খেটে খাওয়া পিতা-মাতাও ছেলেকে নিয়ে নানান স্বপ্নে বিভোর থাকেন। আসল সত্যিতা হলো একদিকে নুন আনতে পান্তা ফুরোয় সংসার আর ছেলেমেয়ের শিক্ষার খরচ যোগান দেয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছেলেকে নিয়ে স্বপ্ন দেখা ছাড়া বাবা-মা’র সুখ বলে আর কিছু থাকেনা।

এই স্বপ্ন তখনই ফিকে হতে শুরু করে যখন দেখা যায়- গ্রাম কিংবা মফস্বলের সেই সহজ সরল মেধাবী আক্কাস ইচ্ছেকৃত হোক কিংবা পরিবেশ পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে রাজনৈতিক দলে যোগদান করতঃ রাজনৈতিক দলের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ার পাশাপাশি তথাকথিত বড় ভাইদের সামান্য সুনজরে আসার জন্য বা ক্যাম্পাসে সিনিয়র-জুনিয়র তোয়াক্কা না করে একটু দাপটের সাথে চলাফেরা করার আশায় নিজের আসল দায়িত্বের কথা ভুলে পড়ার টেবিল ছেড়ে দিয়ে হাতে হাতুড়ি আর লাঠি তুলে নিতে দ্বিধাবোধ করেনা। এসব ছাড়া সঙ্গদোষেও  অনেকেই আবার নানা রকম নেশায় আসক্ত হয়ে বিপথে পা বাড়াতে দেখা যায়।

আফসোস হয় কারণ আমাদেরই রয়েছে ছাত্র রাজনীতির এক গৌরবময় অতীত। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ‘৬৯-এর গণআন্দোলন, ‘৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ এবং বিভিন্ন জাতীয় আন্দোলনে তখনকার ছাত্রসমাজ গৌরবময় ভূমিকা রেখেছে কিন্তু সে অবস্থা এখন আর বিন্দুমাত্র অবশিষ্ট নেই। স্বাধীন দেশে আজ  দিকভ্রান্ত হয়ে পড়েছে ছাত্র রাজনীতিতে জড়িত বেশীর ভাগ ছাত্ররা। আমাদের দেশের প্রকৃত অগ্রগতি আর উন্নয়নের জন্যে এটা মোটেও কোন শুভ লক্ষণ নয়।

অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে অনেক শিক্ষার্থীরা জানার সুযোগই পায়না যে – বিশ্ববিদ্যালয় আসলে কত বড় একটি জায়গা যেখানে পর্যাপ্ত সুবিধা না থাকলেও; যে কেউ আন্তরিক ভাবে চাইলে নিজেকে মানুষ রুপে গড়ে তোলার সুযোগ আছে। এখানে হাজারো পরিবার থেকে হাজারো রকম মানুষের আনাগোনা হয়। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় সমূহে দেশের প্রায় সব জেলা থেকে  বৈচিত্র্যময় হাজারো শিক্ষার্থীরা এসে প্রাণের মেলা বসায়; সংস্কৃতির আদান-প্রদান হয়। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের এই প্রাণের মেলাতে ঘুরে নিজেকে জানার পাশাপাশি বিশ্বের নানা জ্ঞান-বিজ্ঞান আর শিল্প-সাহিত্য সম্পর্কে খোঁজ নেয়ার অফুরান সুযোগ তৈরী হয়।

নেতৃত্ব গুণ আর সাংগঠনিক দক্ষতা রপ্ত করতে কিংবা নিজেকে মেলে ধরতে এখন প্রায় সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েই ক্যারিয়ার ক্লাব, বিজনেজ ক্লাব, ডিবেটিং ক্লাব, টুরিস্ট ক্লাব সহ নানান কো-কারিকুলাম কার্যক্রমে যুক্ত হবার সুযোগ আছে যা গ্র্যাজুয়েশন পরবর্তী জীবনেও কাজে আসে। এছাড়াও ব্লাড ডোনেট, আবৃত্তি, বন্ধুসভা সহ নানা সামাজিক–সাংস্কৃতিক সংগঠন তো রয়েছেই।

প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে- এতোসব বাদ দিয়ে কেন একজন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত মেধাবী তরুণকে বতর্মান লেজুরবৃত্তির আর প্রশ্নবিদ্ধ ছাত্র রাজনীতির সাথে জড়িয়ে নিজের আর পরিবারের স্বপ্নকে ধুলোয় মিশিয়ে দিতে হবে?

একদিকে তরুণ আয়মান সাদিক ব্রিটেনের রাণীর হাত থেকে সেরা ইয়ং লিডারের পদক নিচ্ছেন, অন্যদিকে তারই সমবয়সী বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া আরেক তরুণ হাতুড়ি দিয়ে অন্য সহপাঠীর পা গুড়িয়ে দিচ্ছেন। এক দেশে একই সময়ে এমন বৈপরীত্য দেখতে মোটেও কারো ভালো লাগে না। আসলে তারুণ্যের শক্তিকে সঠিক পথে চালনা করতে ব্যর্থ হলে সুন্দর ভবিষ্যতের স্বপ্ন তিমিরেই রয়ে যাবে; এই সাধারণ কথাটা রাষ্ট্রকে বোঝার পাশাপাশি মেনেও চলা চাই। তারুণ্যকে তাদের সুচিন্তিত মতামত প্রদানের সুযোগও রাষ্ট্রকে করে দেওয়া চাই, এইটুকু একজন নাগরিক হিসেবে প্রত্যাশা করতেই পারি।

প্রচলিত ছাত্র রাজনীতি একজন বঙ্গবন্ধু কিংবা একজন শেরেবাংলা- মাওলানা ভাসানী বা একজন জিল্লুর রহমান তৈরী করতে পারবে কিনা তা নিয়ে জনমনে অবশ্যই যথেষ্ট সন্দেহ আছে। তবে নিম্নমধ্যবিত্ত আর নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা মেধাবী তরুণ কোন উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে‚ কেন জড়িয়ে পড়বে এই রাজনীতিতে? নেতৃত্ব গুণ  আর সাংগঠনিক দক্ষতা অর্জনের জন্য রাজনীতি ছাড়াও আরো অনেক নিরাপদ ও সুন্দর উপায় আছে যা পূর্বেই উল্লেখ করেছি।

ছাত্রাবস্থায় রাজনীতিতে জড়িত ভদ্র-অমায়িক-পরোপকারী আর স্বজ্জন ব্যাক্তির দেখাও পেয়েছি তবে সেটা সংখ্যায় খুবই নগন্য। পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে রাজনীতির মাঠ ছেড়ে দিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে আল্লাহর রহমতে তারা বেশ শান্তিতে বসবাস করছেন এবং তাদের ভাগ্যবানই বলতে হবে।

আমার এই লিখার উদ্যেশ্য আসলে ছাত্ররাজনীতির সুফল-কুফল নিয়ে আলোকপাত করা না। আমার চাওয়া সময়ের এই বাস্তবতায় রাজনীতি নিয়ে পড়ে থাকা মেধাবী ছেলেটি নিজেকে নিয়ে, মমতাময়ী ‘মা’, সর্বস্ব উজার করে দেয়া বাবা এবং পরিবারের অন্যন্য সদস্যদেরকে নিয়ে একাকী নির্জনে একটু ভাবুক। এবং অবিভাবকগণও নিয়মিত খোঁজ-খবর নিতে শুরু করুক তার বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছেলেটি /ভাইটি কিভাবে পার করছে তার জীবনের মহামূল্যবান ইউনিভার্সিটির অধ্যয়নের সময়টুকু। তাতে যদি একটি মেধাবী তরুণও বেচেঁ যায় বর্তমানে ভয়াল রুপে ধরা দেয়া ছাত্ররাজনীতির রাহুগ্রাস থেকে তবে মন্দ কি?

ছাত্ররাজনীতিতে জড়িয়ে পড়া তরুণটিকে আরো বুঝতে হবে যে – তার পরিবার তাকে সফল আর আদর্শবান হিসেবে দেখার অপেক্ষায় প্রতিনিয়ত অনেক ত্যাগ স্বীকার করে চলছে। এমনিতেই আমাদের দেশে প্রায় সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ই সেশনজট সহ নানান সমস্যায় জর্জরিত। কোথাও কোথাও অনার্স-মাস্টার্স শেষ করতে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে ২/৩ বছর বেশি লেগে যাচ্ছে। তার উপর আশানুরূপ রেজাল্ট না হলে আর জবের জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির অভাবে পড়াশোনা শেষে বেশিরভাগ তরুণকেই কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হয় এবং তখনই বুঝতে শিখে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে অযথা-অহেতুক মিছিল–মিটিং আর দাঙ্গা-হাঙ্গামা করে কাটানো অসংখ্য সময়ের মূল্য আসলে কত বেশী ছিলো।

দুর্ভাগ্য জনক হলেও এটা সত্যি যে- তখন রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়া ছেলেটির ফিরে আসার সব দরজা প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং প্রায় ক্ষেত্রেই দেখা যায় বৃদ্ধ বাবা চাকুরী হতে অবসরে চলে যান কিংবা পেনশনের টাকা থেকে নিয়মিত পাঠানো আর্থিক সহায়তাও বন্ধ করতে বাধ্য হয়।  এদিকে জব মার্কেটে চাকুরী যোগার করা আরও কঠিন থেকেও কঠিনতর কাজ। ফলাফল- এক সময়ের মেধাবী আর সহজ সরল ছেলেটির কাছে আজ পুরো পৃথিবীই হতাশা আর বিষণ্ণতায় মোড়ানো ঘোরতর অন্ধকারময় মনে হয়। এই কঠিন বাস্তবতায় কত মেধাবী তরুণের স্বপ্নের অপমৃত্য ঘটে তার হিসেব কে রাখে?

জেনে নিন কর্পোরেট জগতের প্রাথমিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আপনি কতটুকু প্রস্তুত?

Follow me on Facebook . Check out my Website .

Hossain Joy
Hossain Joy
Greetings! I would love to be connected with you for learning and sharing purposes. Personally, I am a Sales & Marketing Professional, continuous learner and an enthusiastic sightseer who loves to take challenges as well. I do believe we should always try to contribute to the society in our own way from our own position to develop the society as a whole. Out of the belief, I initiated a blog (www.hossainjoy.com) in 2017 to share my learnings and experiences with the youngsters who usually are confused about career plan and many a time frightened of the future. In this blog, I am incorporating the articles and case studies reflecting my own experiences that I have gained throughout my career till date. It’s about struggles, failures and successes. I hope this will widen your understanding about the career path, personal development and job market. I also expect it will lead you to a decision point regarding your own career. In case of any related query, I’m readily available to assist you with best of my efforts! So, how may I help you?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *