কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় হতে গ্র্যাজুয়েশনের পর আপনি কি ধরনের জব করতে চান তা ঠিক করে নেয়া খুবই জরুরী। আপনি অবশ্যই জেনে থাকবেন যে, আমাদের দেশে গ্র্যাজুয়েটদের কাজ করার জন্যে বিভিন্ন ধরণের আর্থিক-অনার্থিক ও অনেক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
আপনি চাইলে প্রতিষ্ঠানসমূহকে বিভিন্ন ভাবে ভাগ করে নিতে পারেন। এই যেমন ধরুন ব্যাংক বা বিভিন্ন আর্থিক সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান, বহুজাতিক টেলি সেবা দাতা প্রতিষ্ঠানসমূহ যাদের আমরা টেলকো বলে সম্বোধন করে থাকি। আছে দেশীয় ও বহুজাতিক-FMCG কোম্পানি সমূহ যারা আমাদের নিত্য-প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি উৎপাদন ও সরবরাহ করে থাকেন এবং আছে বহুজাতিক ও দেশীয়-কনজুমার কোম্পানি। কাজ করার সুযোগ আছে আমাদের দেশে দ্রুত বর্ধনশীল খাত হিসেবে বিবেচিত সিমেন্ট ইন্ডাষ্ট্রিতে।
রয়েছে পৃথিবী বিখ্যাত ও আমাদের দেশের সবচেয়ে বড় আরএমজি সেক্টর। এছাড়াও আছে বৃহৎ এলপিজি গ্যাস সেক্টর যা দিন দিন বড় হচ্ছে। কাজের সুযোগ আছে বাটা, এপেক্স, লোটো, ওয়াকারু, কায়রোস সহ দেশীয় ও বহুজাতিক-ফুটওয়্যার ইন্ডাষ্ট্রিতে। তাছাড়া অসংখ্য বহুজাতিক ও লোকাল -মেডিসিন, পার্সোনাল কেয়ার, ফুড ম্যানুফ্যাকচারিং সহ শত শত ইন্ডাষ্ট্রি যেখানে কাজ করার সুযোগ রয়েছে।
এসবের ক্ষেত্রে আপনি কোথায় কাজ করতে চান, কেন কাজ করতে চান, কাজের ক্ষেত্রইবা কি হবে সেটা কি সেলস, মার্কেটিং, হিসাব বিভাগ, এইচ আর-এডমিন নাকি অন্যকোন বিভাগে সেটা ঠিক করার সঠিক টাইম হল- তৃতীয় বর্ষের শুরুর সময় টা। তার আগে থেকে হলে আরও ভালো। তখন থেকে প্রিপ্রারেশন নেয়া শুরু করলে এমবিএ/ মাস্টার্স শেষ হবার পর খুব বেশি দিন জব এর জন্য অপেক্ষা করতে হবেনা বলে আশা করি। অনেকে অবশ্য গ্র্যাজুয়েশন শেষেই কাঙ্ক্ষিত জবের দেখা পেয়ে যান, সেক্ষেত্রে প্রস্তুতিও সেভাবে নেয়া চায়।
ক্যারিয়ার নির্বাচনের ক্ষেত্রে আপনার বিভাগের শিক্ষকমন্ডলী, এলাইম্নি কিংবা অভিজ্ঞ পেশাজীবিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ গ্রহণ করতে পারেন।
যাইহোক, যেকোন কর্পোরেট জবের জন্য প্রথমতঃ আপনাকে বিভিন্ন ইন্ডাষ্ট্রি সম্পর্কে ভালো ধারণা নিতে হবে। জানতে হবে কোন ইন্ডাষ্ট্রি কিভাবে কাজ করে থাকে। আর জানেনতো, প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানের আলাদা আলাদা বিভাগ রয়েছে সেখানে লোকজন কিভাবে কাজ করে থাকেন সেসব সম্পর্কে ধারণা নিতে পারলে খুব ভালো হয়। আবার ভবিষতে কোন কোন প্রতিষ্ঠান কোন সেক্টরে বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে, কোন সেক্টরে কি রকম কাজের দক্ষতা প্রয়োজন হয় এইসব খুঁটিনাটি সম্পর্কে আগাম ধারণা পেতে চেষ্টা করুন। সেসবের সাথে আপনার নিজের কি কি যোগ্যতা আর দক্ষতা আছে সেসবের একটি তালিকা তৈরী করে নিন, অপরদিকে কোন কোন বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে হবে সেসবের উপর কাজ শুরু করে দিতে পারেন। এখন থেকেই বিজনেস জার্নাল পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। দৈনিক খবরের কাগজের বিজনেস পাতাতে চোখ ভুলিয়ে নিন, বিডি জবস বা LinkedIn এ জব সার্কুলার দেখলেই বিস্তারিত পড়ে সে সম্পর্কে একটি ধারণা নিতে এখন থেকেই সচেষ্ট হোন।
আপনি চাইলে পরিবার, শিক্ষকমন্ডলী, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের এলাইম্নি, পরিচিতজন আর অভিজ্ঞদের সহায়তা নিয়ে ক্যারিয়ার নির্বাচন করে ফেলুন। সম্ভব হলে যে সেক্টরে কাজ করতে আগ্রহী সেই সেক্টরের কিছু প্রতিষ্ঠানের নামের তালিকা তৈরী করে সেখানকার নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পর্কে তাদের ওয়েবসাইট আর ফেসবুক পেইজ থেকে ধারণা নিয়ে রাখতে পারেন; তাতে করে ভবিষ্যতে আপনার জন্য প্রস্তুতি নিতে সুবিধা হবে। এক্ষেত্রে এমন প্রতিষ্ঠান নির্বাচন করুন যেখানে আপনি কাজ করে প্রচুর শেখার পাশাপাশি আনন্দও পাবেন। যদি সম্ভব হয় তবে ক্যারিয়ারের স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদী দু’টো পরিকল্পনা তৈরি করে রাখতে পারেন।
ক্যারিয়ার শুরুর পূর্বে কাঙ্ক্ষিত ইন্ডাষ্ট্রি আর কোম্পানি সম্পর্কে জানা জরুরী। Image source: Google.com
সত্যি বলতে ক্যারিয়ার পরিকল্পনা ও নির্বাচনের ক্ষেত্রে আমাদের দেশের অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা অনেক পিছিয়ে থাকেন। আপনি নিশ্চয় দেখে থাকবেন যে, আপনার পরিচিত অনেকেই বিবিএ/অনার্স শেষ করে কিংবা এমবিএ/মাস্টার্স এর মাঝামাঝি সময়ে মাশা-আল্লাহ্ জব ম্যানেজ করে ফেলেন অথবা এমবিএ/মাস্টার্স শেষ করার পর খুব অল্প সময় জবের জন্যে বসে থাকেন। আবার বেশীরভাগ ক্ষেত্রে অনেকে এমবিএ/ মাস্টার্স শেষ করার পর খোঁজ নিতে শুরু করেন ক্যারিয়ারের জন্য কি করা যায়।
তার মানে অনেকে ক্যারিয়ার প্ল্যানিংটা সঠিক সময়ে না করার ফলে অন্যদের তুলনায় বেশ খানিকটা পিছিয়ে পড়েন। লক্ষ্য করলে হয়তো আপনিও এমন কাউকে পাবেন যে কিনা আপনার দুই-এক সেমিস্টার অথবা এক দুই বছরের জুনিয়র কিন্তু একই পদে ইন্টার্ভিউ দিতে হাজির হয়েছেন।
দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি, অনেকের ক্ষেত্রে এমনও হয়েছে যে পড়াশোনা শেষ করার বছর খানেক পরও কাঙ্ক্ষিত জব পাননি। সেখানে ক্যারিয়ার পরিকল্পনা আর প্রস্তুতির যেমন অভাব ছিলো, তেমনি সৃষ্টি কর্তাকেও ভুলে যাবার কিংবা খুশি করার ব্যাপারেও ঘাটতি ছিল বৈকি। আমরা যে যাই বলিনা কেন, এটা বিশ্বাস করতেই হবে যে আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন আমাদের উত্তম রিজিকদাতা। আর একটি চাকুরি কিংবা কর্ম-সংস্থানের ব্যবস্থা হওয়া মানেই একটি পরিবারের মৌলিক চাহিদা পূরণের পথে অনেক দূর এগিয়ে যাওয়া।
কাজেই, একটু কষ্ট করে আগে থেকেই পরিবার, শিক্ষকমন্ডলী, এলাইম্নি, পরিচিতজন আর অভিজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে ভবিষৎ ক্যারিয়ার পরিকল্পনা করে সামনে অগ্রসর হতে থাকুন; সৃষ্টিকর্তার উপর পূর্ণ আস্থা রাখুন আর সেই সাথে পিতা-মাতা এবং শিক্ষকদের দোয়া আদায় করে নিন। আশা করা যায় সকল অন্ধকার কেটে গিয়ে আলোর দেখা মিলবেই, ইনশা আল্লাহ।
সম্ভব হলে একজন পথ প্রদর্শক বা মেন্টর খুঁজে নিন, যিনি আপনার কাঙ্ক্ষিত সেক্টরে অভিজ্ঞতা সম্পূর্ণ।
এবার ধরুন, আপনি ব্যাংকে জব করবেন বলে ঠিক করেছেন। এক্ষেত্রে পেপার কিংবা বিডিজবস থেকে সার্কুলার দেখে জেনে নিন কোন ব্যাংক কি ধরণের যোগ্যতা, দক্ষতা আর সিজিপিএ চাচ্ছে, কিভাবে আবেদন করতে হবে ইত্যাদি। তারপর প্রস্তুতি নিতে শুরু করে দিতে পারেন। আপনি চাইলে ব্যাংক জবের প্রস্তুতি কোচিং করায় এমন কোচিং সেন্টারের সহায়তা নিতে পারেন। পরিচিত ব্যাংকার ভাইয়াদের সাথে সরাসরি কথা বলার চেষ্টা করতে পারেন। অনেকেই তো আড্ডা দিতে বিভিন্ন জায়গায় যান‚ সেটা নাহয় এখন থেকে ব্যাংকার বড় ভাই আর পরিচিত ব্যাংকারদের সাথে দিন, আড্ডাও হবে পাশাপাশি প্রস্তুতিও চলবে।
এবার ব্যাতিক্রম ধর্মী ও বিশাল এক জব সেক্টরে নিয়ে অল্প আলোকপাত করবো। আপনি যদি খুব সাহসী এক জন হয়ে থাকেন এবং যে কোন চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত থাকেন, পাশাপাশি মানুষকে ইমপ্রেস করতে পারেন, ভালোভাবে নিজেকে উপস্থাপন করতে পারেন, দৌড়-ঝাঁপ ভালোই পারেন এবং ক্রিয়েটিভ কিছু করে দেখাতে সদা প্রস্তুত থাকেন, নতুনত্ব আপনাকে সব সময়ই টানে, গ্রুপে কাজ করতে ভালোবাসেন; তবে আপনি চেষ্টা করে দেখতে পারেন মার্কেটিং, ব্যান্ডিং কিংবা সেলস্ জগতে কাজ করার সুযোগ হয় কিনা !!!
প্রচুর চাহিদা, ফ্লেক্সিবিলিটি, ক্যারিয়ারে দ্রুত উন্নতি, সর্বদা নতুনত্বের শিহরণ আর ভালো ইনকামের কারণে সেলস পেশা বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়। Image:Google.com
অন্যদিকে আপনি যদি এক্সটা-কারিকুলার বা কো-কারিকুলারে পারদর্শী হয়ে থাকেন, বিজনেস কেইস সমাধানে পটু আর ভালো ইংরেজী বলতে পারেন আবার দ্রুত সমস্যা সমাধান কিংবা ভালো যোগাযোগ দক্ষতা আছে, নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে আগ্রহী তবে আপনি চেষ্টা করে দেখুন-সুযোগ পেয়ে যেতে পারেন নামকরা কোন বহুজাতিক কোম্পানিতে।
এটা খুব আশাব্যাঞ্জক যে, বিশাল জনগোষ্ঠী আর দ্রুত অগ্রসরমান অর্থনীতির উপর ভর করে আমাদের এই বাংলাদেশে পৃথিবীর অনেক বড় বড় কোম্পানি আর নামিদামী সব ব্র্যান্ড এখানে ব্যবসা করছে। আপনি চাইলে নিমিষেই নেসলে, ইউনিলিভার, ম্যারিকো, রেকিট বেঙ্কিজার, বিএটিবি, গ্রামীণফোন, এয়ারটেল, রবি‚ সিঙ্গার‚ কোটস বাংলাদেশ, গ্রাস্কোস্মিথলাইন‚ আরলা ফুড‚ নিউজিল্যান্ড ডেইরি‚ হোলসিম সিমেন্ট‚ রুবি সিমেন্ট, ডিএইচএল, বাটা সু, কোকা-কোলা, পেপসি, প্রাণ, স্কয়ার, ওয়ালটন সহ অন্যান্য বহুজাতিক ও দেশীয় কোম্পানির ওয়েবসাইট ঘুরে আসতে পারেন।
সঠিক ক্যারিয়ার পরিকল্পনার মাধ্যমে যথাযথ প্রস্তুতি নিয়ে পথ চললে সুযোগ আসতে পারে বাটা সু এর মতো বহুজাতিক কোম্পানিতে কাজ করার।
দেশে অনেক এইচ.আর. কন্সালটেন্সি ফার্ম আছে যারা আপনাদের মতো গ্র্যাজুয়েটদের নিয়ে কাজ করে থাকেন। অনেক বহুজাতিক ও দেশীয় কোম্পানিই এসব এইচ.আর ফার্মকে কর্মী নিয়োগের দায়িত্ব দিয়ে থাকেন কিংবা ওইসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নতুন কর্মী সংগ্রহ করে থাকেন। এই যেমন ধরুন ফার্স্ট সিলেক্ট বাংলাদেশ, grown excel bd, enroute , ট্যালেন্ট সেন্টিক ,এইচ আর কাইটস, Corporate Career Tips, bcorporate সহ রয়েছে অসংখ্য প্রতিষ্ঠান। তাছাড়া বিডিজবস ডট কম‚ লিঙ্কডইন তো সব সময় আপনার পাশে-ই আছে, রয়েছে বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপ।
আর বিসিএস বা সরকারী অন্যন্য জবের জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির পাশাপাশি নামকরা কোন এক কোচিংয়ের সহায়তা যেমন নিতে পারেন, তেমনি সিনিয়র কারো পরামর্শও নিতে পারেন। আপনি যে সেক্টরে যেতে চান না কেন, পরিচিত-সিনিয়র কিংবা অভিজ্ঞদের পরামর্শে সেভাবেই প্রস্তুতি নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যান।
সবশেষে এটাই বলবো যে-নিজেকে সময় দিন, ভুলেও বিশ্বাস হারাবেন না, সৃষ্টিকর্তার উপর পূর্ণ আস্থা রাখুন, প্রয়োজনে পরিবারের সদস্য, শিক্ষকমোন্ডল এবং অভিজ্ঞদের সাথে আলোচনা করুন আর আস্তে আস্তে সামনের দিকে এগিয়ে যান, সাফল্যের দেখা মিলবেই। আপনার জন্য শুভ কামনা রইলো।
আরো পড়ুনঃ সদ্য গ্র্যাজুয়েটদের দরকারি ৭ পরামর্শ
Follow me on Facebook . Check out my Website .
6 Comments
well written bro
Thank your very much bhaiya! It’s a lot for me.
That was really worthy to read. I didn’t even know some of the company name that are actually multinational. Keep leting us know about the corporate world.
Thank your very much for your feedback bro. Keep me in your prayer please.
very effective writing brother. specially for me or students like me…
thanks elder😍
Thank you.