কর্পোরেট লাইফ আর ইউনিভার্সিটি লাইফ আসলে ভিন্ন দুটি জগৎ। ইউনিভার্সিটি লাইফে প্রচুর স্বাধীনতা থাকে, চাইলেই আপনি স্বাধীনতাটুকু উপভোগ করতে পারেন। মন চাইলো তো ক্লাস করলেন; মন চাইলো তো বন্ধুদের সাথে ঘুরতে বেরিয়ে পড়লেন। কিংবা চাইলে আপনি সেমিস্টার একটা ড্রপই দিয়ে ফেলতে পারেন! এখানে অন্যদের কিংবা অন্য বিভাগের শিক্ষার্থীদের সাথে সম্পর্ক রাখলে ভাল‚ না রাখলেও তেমন কোন অসুবিধা হবে না কারণ আপনার পড়াশোনা তাদের সাথে সম্পর্কিত না।
কিন্তু কর্পোরেট লাইফ! এটা একটু আলাদা জগৎ যা কাজের জায়গা হিসেবে পরিচিত । যেখানে বন্ধু-বান্ধব নয় চারপাশে বরং ভিন্ন বয়সী, ভিন্ন ভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের, ভিন্ন ভিন্ন দক্ষতার, নানান সংস্কৃতির আর বর্ণের লোকজনের দেখা পাবেন। এখানে একটু চিন্তা ভাবনা করে সামনে আগানো ভালো। কর্পোরেটে প্রবেশের সাথে সাথেই কিছু নিয়মের বেড়াজালে আপনি চলে আসবেন। এই যেমন চাইলেই সকাল ১১ টায় ঘুম থেকে উঠতে পারবেন না। অফিস টাইমে বসকে না জানিয়ে হুট করে বন্ধুদের সাথে সিনেমায় যাওয়া হবে না, যখন তখন আগের সেই হৈহোল্লোর আর হয়ে ঊঠবে না। তবে আপনি চাইলে এই কর্পোরেট লাইফকেও বর্ণিল করে তুলতে পারেন আপনার কাজটিকে উপভোগ করার মাধ্যমে।
কর্পোরেট লাইফের শুরুতেই বদলে যায় পোশাক-পরিচ্ছেদ!
লাইফ স্টাইলে পরিবর্তন আনুনঃ
শুরুতেই পোশাক- আকাশের ক্ষেত্রে অধিক ক্যাজুয়ালিটি পরিহার করে ফরমালের দিকে দাবিত হোন। সম্ভব হলে ওয়্যারড্রপ পুরোপুরি পরিবর্তন করে নতুন কাপড়-চোপড়ে ভরিয়ে দিন। সেই সাথে জুতো-মোজা, বেল্ট, হাত ঘড়ি প্রভৃতি দিকেও নজর দিন। ভালো ব্যবহারের পাশাপাশি পোশাক -পরিচ্ছেদও আপনার ব্যাক্তিত্বকে ফুটিয়ে তুলবে আর এটা আপনাকে স্বীকার করতেই হবে। সব সময় পরিপাটি থাকার চেষ্টা করুন যাতে অন্যরা আপনার সম্পর্কে ভালো ধারণা পোষণ করেন।
প্রতিষ্ঠানের কালচার সম্পর্কে জানার চেষ্টা করুনঃ
প্রতিষ্ঠান ভেদে নিয়ম কানুন কিংবা কর্মঘণ্টা একেক রকম হয়ে থাকে। সুতরাং সময় ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে সচেতন হোন। আবার একেক জায়গায় কর্পোরেট কালচার একেক রকম হয়ে থাকে যা একজন ফ্রেশার যে মাত্র ইউনিভার্সিটি থেকে বের হয়ে সদ্য চাকুরীতে যোগদান করেছে তার পক্ষে সবকিছু বুঝে মানিয়ে নেয়া সময় সাপেক্ষে ব্যাপার। সময়টা যেহেতু প্রবেশন পিরিয়ড-তাই সবকিছু বুঝেশুনে চলা ভালো। এক্ষেত্রে লাইন ম্যানেজার আর প্রতিষ্ঠানের কর্মরত সিনিয়র কলিগদের সহায়তা নেয়া যেতে পারে।
প্রবেশনারি সময়টাকে গুরুত্ব সহকারে নিনঃ
প্রতিষ্ঠান ভেদে প্রবেশনারি সময় টা ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। তবে ম্যাক্সিমাম ক্ষেত্রে ৬ মাস হতে দেখা যায় যা একজন সদ্য যোগদান করা চাকুরীজীবীর ক্ষেত্রে খুব গুরুত্ব বহন করে। সময়টা একদিকে যেমন অধিক লার্নিংয়ের এবং অপরদিকে প্রাপ্ত নির্দেশনা গুলো কত দ্রুত‚ নির্ভুল আর সুন্দরভাবে বাস্তবায়ন করে চলেছেন সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। সেক্ষেত্রে ইউনিভার্সিটি লাইফে করা উল্লেখযোগ্য সংখ্যক এসাইনমেন্ট যা আপনাকে ডেডলাইন মিট করতে শিখিয়েছে‚ অসংখ্য প্রেজেন্টেশন‚ ডিবেটিং ‚ অর্গানাইজার হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা ও অন্যসব এক্সট্রা ক্যারিকুলাম এক্টিভিটিস আপনাকে নিশ্চিতভাবেই সহায়তা করবে। আর ইন্টার্নশিপ সময়টাতে করা নানান কাজ আপনাকে প্রবেশনারি সময়টা ভালোভাবে উৎরাতে সাহায্য করবে।
প্রাথমিক চ্যালেঞ্জগুলো কাটিয়ে উঠুনঃ
আবার উল্টোদিকে-প্রতিকূল কর্মপরিবেশ‚ প্রয়োজনীয় সাপোর্টের অভাব‚ অতিরিক্ত কাজের চাপ‚ অধিক কর্মঘণ্টা‚ জব রেসপন্সসিবিলিটি সম্পর্কে সম্যক ধারণা না থাকা‚ অবস্থানগত সমস্যা সহ আপনি বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখিও হতে পারেন। সেক্ষেত্রে খুব ধৈয্য সহকারে ‚ বিচক্ষণতার সহিত অভিজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে চ্যালেঞ্জগুলো আস্তে আস্তে কাটিয়ে উঠতে পারেন।। কিন্তু কোনভাবেই ভেঙ্গে পড়া বা নেগেটিভ মনোভাব প্রকাশ করতে যাবেন না।
পজিটিভ মনোভাব আর দায়িত্ব নিয়ে কাজ করুনঃ
আগেই বলেছি ছাত্রাবস্থায় নিজের মতো করে ইচ্ছেমতো চলাফেরা করা যায়, আর কর্পোরেটে অলওয়েজ পজিটিভ থাকাটাই সবার কাছে যুক্তিযুক্ত। অনেক সময় সরাসরি অনেক কিছু বলা হয়ে উঠে না তার চেয়ে বরং আচরণে অনেক স্ট্র্যাটেজিক হতে হয়। আর কোন কাজই ফেলে না রেখে ঠিক সময়ে ঠিক কাজটি করে ফেলাই ভালো। আবার কাজের ক্ষেত্রে দায়িত্ব নিতে শিখুন, কাজকে কখনো এড়িয়ে যাবেন না।
টিম ওয়ার্ক আর প্রয়োজনীয় যোগাযোগ বজায় রাখুনঃ
আর কর্পোরেটে টিম ওয়ার্কটাও গুরুত্বপূর্ণ। এক একটি কাজে অনেক ডিপার্টমেন্ট তথা বহু লোক জড়িত থাকে। সবার সাথে প্রয়োজনীয় যোগাযোগ আর সুসম্পর্ক বজায় রেখে কাজ করতে পারলে অনেক চ্যালেঞ্জ যেমন সহজে ওভারকাম করা যায়‚ কাজেও সাফল্য আসে আবার ব্যাক্তির পার্ফরমেন্সেও আসে গতি।
সহকর্মীদের সাথে সুসম্পর্ক ও কার্যকর কর্পোরেট নেটওয়ার্ক গড়ে তুলুনঃ
কাজের ক্ষেত্রে সহ কর্মী তথা সিনিয়রদেরকে কোন কিছু জানতে চেয়ে প্রশ্ন করতে দ্বিধা করবেন না, যত বেশী প্রশ্ন করবেন ততই আপনি জানতে ও শিখতে পারবেন। মজার ব্যাপার হলো এই সময়টাতে আপনি প্রতিষ্ঠানের ভেতর ও বাইরে থেকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যাক শুভাকাংখী পেয়ে যাবেন যারা আপনার ক্যারিয়ারকে এগিয়ে নিতে যথাসম্ভব সহায়তা করে যাবেন। আর এভাবেই আপনি একটি কার্যকরী কর্পোরেট নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে পারবেন।
অবকাশ যাপন কিংবা পরিবারের সাথে সময় কাটানোর পরিকল্পনা তৈঁরি করে রাখুনঃ
স্টুডেন্ট লাইফে বছরে আপনি মোটামুটি ১০০ দিনেরও বেশী দিন ছুটি উপভোগ করতে পারেন কিন্তু কর্পোরেটে সর্বসাকুল্যে ২৫-৩০ দিনের ছুটি ধরে রাখতে পারেন। আর এই অল্প সময়কেই সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে কাজে লাগিয়ে নিজেকে রিফ্রেশ করার পাশাপাশি পরিবার–পরিজনকে নিয়েও ঘুরতে বেড়িয়ে পড়তে হবে।
ভালো থাকুন আপনি; বর্ণিল হোক আপনার কর্পোরেট লাইফ।
Follow me on Facebook . Check out my Website .
2 Comments
[…] পড়ুনঃ কর্পোরেট লাইফ এবং ইউনিভার্সিটি… […]
[…] পড়ুনঃ কর্পোরেট লাইফ এবং ইউনিভার্সিটি… […]