আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে চাকুরীর বাজারের অসামঞ্জস্যতার কারণে গ্র্যাজুয়েট বেকারদের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। অবাক করা ব্যাপার হলো- দেশের প্রায় ৪৭% গ্র্যাজুয়েট তার যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি না পাওয়ায় বেকারত্বের খাতায় নাম লিখিয়েছে (সূত্র : দ্য গার্ডিয়ান)।
আরো অবাক করা বিষয় হলো- প্রতিবছর এইচএসসি পাসকৃতদের মধ্যে থেকে মাত্র ১২% শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পায়। যার ২০% সৌভাগ্যক্রমে পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে (পাবলিক/প্রাইভেট) এবং বাকি ৮০% শিক্ষার্থী জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বিভিন্ন কলেজ থেকে উচ্চশিক্ষা নিয়ে থাকেন।
চিন্তার কারণ হলো- এইচএসসির পর যে ১২% শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা তথা গ্র্যাজুয়েশন শেষ করার সুযোগ পান তার প্রায় ৪৭% বেকার। তার মানে দাঁড়ায়‚ দেশের সবচেয়ে মেধাবীদের প্রায় ৫০ শতাংশকেই আমরা কাজে লাগাতে পারছি না যা অত্যন্ত হতাশাজনক। এই মেধাবীদেরকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পারলে দেশে একটি দক্ষ মানব সম্পদ গড়ে উঠতো। যারা পরবর্তীতে কর্পোরেট তথা দেশকে নেতৃত্ব দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যেতো। উল্টো বিদেশ থেকে এতো অধিকসংখ্যক বিশেষজ্ঞ ম্যানেজার আনতে হতো না।
আবার আমাদের দেশে এন্ট্রি লেভেলে প্রচুর মেধাবী আর ক্রিয়েটিভ ছেলেমেয়ে আছে যা মিড লেভেলে খুব একটা নেই বলে বিশেষজ্ঞরা প্রায়শই মতামত দিয়ে থাকেন। গ্র্যাজুয়েশন শেষ করা মেধাবী বেকারদের যোগ্যতা অনুযায়ী কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা গেলে ভবিষ্যতে এরাই দক্ষ মিড লেভেল ম্যানেজারে পরিণত হতো। যা থেকে দেশের সব ইন্ডাস্ট্রিই কমবেশি উপকৃত হতো।
উচ্চশিক্ষিত-মেধাবী তরুণদের নিয়ে রাষ্ট্রের পাশাপাশি কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানও নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছে। যারমধ্যে রয়েছে জব ফেয়ার‚ জব রিলেটেড সেমিনার আয়োজন আর লেখনীর মাধ্যমে উদ্বুদ্ধকরণ ও দক্ষতা অর্জনের জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রদান।
জব মার্কেট সম্পর্কে জানার পাশাপাশি দরকারি দক্ষতার উন্নয়নও জরুরী।
তবে এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদেরও কিছু দায়বদ্ধতা থেকে যায়। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা তথা পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনায় ছাত্রাবস্থায়ই পড়াশোনার পাশাপাশি চাকরির বাজার সম্পর্কে ধারণা অর্জন করা। প্রয়োজনে বিভিন্ন ইন্ডাষ্টি সম্পর্কে ভালো ধারণা নিতে হবে, জানতে হবে কোন ইন্ডাষ্টি কিভাবে কাজ করে থাকে, প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানের আলাদা আলাদা বিভাগ রয়েছে সেখানে লোকজন কিভাবে কাজ করে থাকেন, কিংবা ভবিষৎে আর কোন কোন প্রতিষ্ঠান কোন সেক্টরে বিনিয়োগ করতে যাচ্ছেন, কোন সেক্টরে কি রকম কাজের দক্ষতা প্রয়োজন এইসব খুঁটিনাটি সম্পর্কে জানার চেষ্টা করতে হবে। সেই সাথে নিজের কি কি দক্ষতা আছে, কোন কোন দক্ষতা অর্জন করতে হবে সেসবের দিকে নজর দিতে হবে। তারপর অভিজ্ঞ ও পরিচিতজনের সহায়তা নিয়ে ক্যারিয়ার নির্বাচন করতে হবে, সম্ভব হলে যে সেক্টরে কাজ করতে আগ্রহী সেই সেক্টরের কিছু প্রতিষ্ঠানের নামের তালিকাও লিপিবদ্ধ করে রাখা যেতে পারে; তাতে চাকুরীর প্রস্তুতি নিতে সুবিধা হবে। এক্ষেত্রে এমন প্রতিষ্ঠান নির্বাচন করতে পারেন যেখানে আপনি কাজ করে প্রচুর শেখার পাশাপাশি আনন্দও পাবেন। যদি সম্ভব হয় তবে ক্যারিয়ারের স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদী দু’টো পরিকল্পনা তৈরি করে করা যেতে পারে।
সর্বোপরি গ্রাজুয়েটদের জানতে হবে কোথায় জব সার্কুলার হয়, কিভাবে আবেদন করতে হয়। আমাদের দেশের প্রায় সব অনলাইন জব পোর্টালে একাউন্ট থাকা চাই, বিভিন্ন জব রিলেটেড আপডেট পেতে ফেসবুকের দরকারি পেইজ আর গ্রুপেও এড থাকা চাই, একাউন্ট সহ এক্টিভ থাকা চাই লিঙ্কডইনেও যাতে করে একটি কর্পোরেট নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা যায়। আর নির্বাচিত চাকুরীতে যে সব প্রয়োজনীয় দক্ষতা চাওয়া হয়ে থাকে, সেই অনুযায়ী নিজের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে পারলে, চাকুরীর বাজার সম্পর্কে প্রয়োজনীয় খোঁজ খবর রাখলে বেকারত্বের হাত থেকে বাঁচা কিছুটা হলেও সম্ভব হবে বলে আশা রাখি।
2 Comments
তথ্যপূর্ণ লিখা। শিক্ষাব্যবস্থায় চাকুরীর বাজার সম্পর্কে জানানোর ব্যবস্থা থাকা দরকার। শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে কিছু লিখবেন।
ধন্যবাদ সামা। হ্যাঁ, শিক্ষা ব্যবস্থায় চাকুরীর বাজার সম্পর্কে জানানোর ব্যবস্থা করা গেলে সত্যিই খুব ভালো হতো।
আশা করছি আমাদের সাথেই থাকবেন।