সেলফি!
গ্রুপ ফটো!!
রি-ইউনিয়ন!!!
আড্ডা!!!!
তারপর ফেসবুক ভর্তি খানাপিনার ছবি; যার বেশিরভাগই না খেয়ে নষ্ট করছি! অথচ যে রেস্টুরেন্টে ইফতার পার্টি ( ইফতার গ্রহণ করা পার্টি হয় কিভাবে?) করছি তার পাশেই কেউ হয়তোবা অভুক্তই থেকে যাচ্ছে। অমূলক বা অসম্ভব কিছু না। আবার ইফতার পার্টি নিয়ে বিভিন্ন বাহারি নামের ব্যানারে চলছে প্রচার-প্রচারণা! আবার এক রেস্টুরেন্টের পেইজে লাইভ দেখলাম ইফতার পার্টির নাম দিয়ে এক শিল্পী গলা ছেড়ে গান গাইছে আর তাই পাশের জন গিটার বাজাচ্ছে! আফসোস!! আর কতো নিচে নামবো আমরা ? সমাজের অধঃপতন মনে হয় এভাবে আসে। ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের অন্যতম একটি হলো রোজা। এই রোজার সাথে সম্পর্কিত ইফতার আর সেহরির নিশ্চয় কিছু নিয়ম বা আদব রয়েছে যা আমাদের মেনে চলার মাঝেই মঙ্গল নিহিত।
সকালে প্রথম আলোয় পড়ছিলাম ভারতের সাবেক রাস্ট্রপতি কেন ইফতার পার্টির আয়োজন করতেন না। খুব মনে ধরেছিল লিখাটা। আসলেই তো‚ অভুক্তদের ইফতার না করিয়ে আমরা সামর্থবানদেরকেই ইফতার পার্টিতে আমন্ত্রণ জানিয়ে থাকি দু একটি ব্যাতিক্রম ছাড়া। যে সময়টা ইফতার পার্টি নিয়ে রেস্তোরাঁয় আড্ডায় মগ্ন হচ্ছি‚ ঠিক সেই সময়টাতে হয়তোবা আপনার-আমার ” মা ” বাসার রান্না ঘরে দাড়িয়ে কপালের ঘাম মুছছেন কিংবা পরিবারের অন্য সদস্যদের ইফতারের জন্য থালা বাটি পরিস্কার করছেন। কখনো কি মা কে ইফতারের ওই সময়টাতে কোন ভাবে সহায়তা করেছি?
এই যে পার্বত্য জেলায় পাড়ার ধ্বস হচ্ছে‚ অতি বৃষ্টিতে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে যাচ্ছে‚ রাস্তার পাশের কিংবা বস্তিতে বসবাসরত খেয়ে না খেয়েই রোজা রাখছেন এসব নিয়ে কারো ভাবার পর্যন্ত সময় নেই! এর উপর শুরু হয়ে নিতুন ট্রেন্ড “সেহরি পার্টি”! সেহরি খাওয়া সুন্নত বলে জানি অথচ আমরা একে পার্টি নাম দিয়ে নতুন ট্রেন্ড শুরু করলাম। হয়তো অদূর ভবিষ্যতে দেখবো-রেস্টুরেন্টে লাইভ গান চলছে আর আমরা সেখানে বসে লাইভ উপভোগ করছি আর সেহরি খাচ্ছি! পার্টি বলে কথা! দেশ এগুচ্ছে‚ পদ্মা সেতু হচ্ছে‚ ব্যাংকের রিজার্ভ বেড়ে চলছে‚ বাড়ছে উচ্চ শিক্ষিত আর ধনী শ্রেণীর সংখ্যা কিন্তু আমাদের চিন্তা-চেতনার পরিধি বাড়ছে কি? দিন দিন কমছে মায়ের শাড়ির আচল দিয়ে মুখ মুছার হারও। এমনকি কমছে পাশের বাসার লোকজনের সামান্য খোঁজ খবর নেবার সময়ও। জানিনা পরবর্তী প্রজন্ম আর কি কি পার্টির চমক নিয়ে হাজির হবে!
যা বলছিলাম‚ আমাদের পার্টির আয়োজনে ইফতার আর সেহরির আদব থাকছে কি? আপনি ইফতার পার্টি/সেহেরি পার্টি সব করেন কিন্তু ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের কাছে নিজ ধর্মের কি বার্তা দিচ্ছেন তা প্রশ্ন থেকে যায় বটে! রোজা একটি ফরজ ইবাদত বলে জানি অথচ এসব কি করছি আমরা? আজকে এক মসজিদে পূর্বঘোষিত ইফতার আয়োজনে গেলাম ধনী-গরীব‚ উচুঁ-নিচু‚ শিশু-কিশোর‚ যুবক-বৃদ্ধ সবাই একসাথে মিলেমিশে ইফতার করবো বলে; কিন্তু একি! ইফতারের সময় নিচতলা-দুতলা ভর্তি লোকজন; আর ইফতার শেষে মাগরিবের নামাজে দাড়ানোর সময় মসজিদের নিচতলা-ই ফাকাঁ হয়ে গেল; অর্ধেক লোক হাওয়া! এভাবেই চলছি আমরা নিজের খেয়াল খুশীমতো । উপর ওয়ালা আমাদের সবাইকে একটু ভাবার সময় করে দিক যাতে করে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য উত্তম দৃষ্টান্ত রেখে যেতে পারি।