অনেকদিন পর মার্কেট ভিজিটে গিয়ে জীবনের সাথে দেখা। জীবন হচ্ছে আমার সাবেক কলিগ, আমরা এক সময় একই টিমে কাজ করতাম। তো কুশলাদি বিনিময়ের পর আমরা কাছাকাছি একটা চায়ের দোকানে বসে গেলাম। চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে হঠাৎই জীবন বলে উঠলো বস, আর ভালো লাগছে না; সারাবছর জুড়ে টার্গেটের পেছনে ছুটে বেড়ায়, ডিসেম্বর মাস আসলেই বাৎসরিক ক্লোজিং প্যাঁরা আরো বাড়িয়ে দেয়। অন্যদিকে রয়েছে ডিলারের বিভিন্ন রকম প্যাঁরা, প্রতিযোগী কোম্পানিগুলো নানান অফার দিয়ে প্যাঁরার পরিমাণ বাড়িয়ে কাজটাকে আরো কঠিন করে দেয়। এদিকে বসের প্যাঁরাতো লেগেই আছে। সব কাজ শেষ করে সন্ধ্যায় হালকা বাজার সদায় করে বাসায় গিয়ে আর কিছুতেই হিসেব মেলেনা, জীবনের হিসেবতো মেলেই না বস। একটু বুদ্ধি পরামর্শ দিন দেখি, আর পারছিনা। এভাবে আর টেনে নিতে পারছিনা, রাজ্যের চিন্তায় খালি মাথা ঝিমঝিম করে।
একটানা বলে যাওয়ার জীবনের কথাগুলো শুনে আমি একটু নড়েচড়ে বসি। বুঝলাম ও অনেক চাপে আছে, সমস্যা অনেক গভীরে, একটু ভেবে চিন্তে কথা বলতে হবে ওর সাথে। ওকে হাল্কা করার জন্যে আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম, সিগারেট খান? নাকি ছেড়ে দিয়ে আর ধরেননি? উত্তর এলো না বস, ছেড়ে দেওয়ার পর আর খাই নাই। ভালো বেশ ভালো, আমি রিপ্লাই করলাম। এইবার আমি আস্তে আস্তে বলতে শুরু করলাম।
আচ্ছা জীবন, বলুন তো দেখি আপনার গ্রাহক কে কে ?
আপনি আমি যে প্রতিষ্ঠানে কাজ করি সেই প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত পণ্য বা সেবা যিনি ক্রয় করেন তিনিই তো গ্রাহক। জীবনের সহজ ও সাবলীল উত্তর।
দেখুন জীবন, আপাতদৃষ্টিতে তা অবশ্যই ঠিক। সব শ্রেণীর গ্রাহকের মধ্যে উনারাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তবে আরো নানাবিধ গ্রাহক রয়েছেন। এই যেমন ধরেন, আপনার রিপোর্টিং বস। কর্মজীবনে আপনার সফলতা অনেকাংশেই নির্ভর করে এই ভদ্রলোকের উপর। শুধুমাত্র সফলতা না, কর্মক্ষেত্রে মানসিক শান্তিও অনেকটা নির্ভর করে উনার উপর। অথচ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমরা এই বিষয়টি এড়িয়ে যায়। অর্থাৎ আমরা আমাদের প্রধান গ্রাহককে নিয়ে তেমন ভাবিই না। ফলাফল, কর্মক্ষেত্রে ব্যস্ততা আর নানান ঝক্কি ঝামেলা লেগে থাকার পাশাপাশি বসেরও মন পায় না, কাজেও আনন্দ খোঁজে পাইনা। ফলে জীবন হয়ে উঠে প্যাঁরাময়। আপনি বরং আপনার বসের দিকে একটু বেশি নজর দিন। উনার নির্দেশনা মেনে চলার চেষ্টা করুন, যেকোন সমস্যা আর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় উনার সাথে পরামর্শ করুন, প্রয়োজনে কাজের ফাঁকে সময় বের করে উনার সাথে প্রয়োজনীয় আলাপ সেরে নিন; সর্বোপরি উনার সাথে যোগাযোগ বাড়িয়ে দিন। দেখবেন, দৈনন্দিন সমস্যার পরিমাণ কমে আসার পাশাপাশি বসের প্যাঁরাও কমে গেছে।
হ্যাঁ বস, আপনি ঠিক বলেছেন, চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে জীবনের সরল স্বীকারোক্তি ।
জীবন, জি বস।
এর পরের ধাপের গ্রাহক হচ্ছেন আপনাকে যারা রিপোর্ট করেন তারা। এখানে আপনি যেমন তাদের উপর নির্ভরশীল, তারাও আপনার উপর নির্ভরশীল। আপনার অধিনস্থদের অর্জনের সমষ্টিই কিন্তু আপনার অর্জন। কাজেই আপনার টিমের সদস্যদের যৌক্তিক চাওয়া-পাওয়াকে প্রাধান্য দিন। এদেরকে যত বেশি সাপোর্ট দেবেন, দিনশেষে অর্জনের পাল্লা তত বেশি ভারি হবে। আর অর্জন ভালো হলে প্যাঁরার পরিমাণ কিন্তু কমবে।
আপনার বস, আপনার নির্দেশনায় কাজ করা টিম এবং প্রতিষ্ঠানের পণ্য ও সেবা গ্রহীতা ছাড়াও আরো এক গুরুত্বপূর্ণ গ্রাহক শ্রেণী আছেন যারা প্রতিনিয়ত সাপোর্ট দিয়ে আপনার কর্মজীবনকে সহজ করে দেন।
এরা কারা বস? আলাপের এই পর্যায়ে জীবনের জিজ্ঞাসা। এরমধ্যে চায়ের দ্বিতীয় পর্ব চালু হয়ে গেছে। মার্কেট ভিজিটে গিয়ে চা পানের আলাদা মজা আছে।
যাইহোক, আমরা আলাপে ফিরে আসি। আপনার প্রতিষ্ঠানে কর্মরত অন্যান্য বিভাগের সহকর্মীবৃন্দ হচ্ছেন এই শ্রেণীর গ্রাহক। কিছুটা অবাক লাগলেও এটা সত্যি যে, প্রতিষ্ঠানের অন্যসব বিভাগের সহযোগিতা, সুপরামর্শ ও সুষ্ঠ সমন্বয় সাধন ব্যাতি রেখে আপনি-আমি বেশি দূর এগিয়ে যেতে পারবো না। কাজেই গ্রাহক তালিকায় সকল সহকর্মীবৃন্দকে অন্তর্ভুক্ত করে নিন, মাঝে মধ্যে সবার সাথে কথা বলুন, প্রয়োজনের সময়ে সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দিন, খোঁজ খবর নিন; দেখবেন কর্মজীবন কিছুটা হলেও সহজ হয়ে আসবে, অহেতুক প্যাঁরাও কমতে থাকবে।
আসলে যেকোন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের সফলতা অর্জনের জন্যে গ্রাহকদের উত্তম সেবা দেওয়ার যেমন বিকল্প নেই, তেমনি নিত্যদিনের প্যাঁরা কমিয়ে নিজের ক্যারিয়ারে উন্নতির জন্য বর্ণিত সব গ্রাহককুলের সাথে সুসম্পর্ক রাখা, সহযোগীতার আদান-প্রদান তথা যোগাযোগ বৃদ্ধির কোন বিকল্প নেই।
চলেন আজকে তাহলে এখানেই শেষ করি, অন্য একদিন না হয় বাজার-সদাইয়ের ব্যাপার নিয়ে আলাপ হবে।
পড়ে জেনে নিন কর্পোরেট জবের প্রস্তুতি কীভাবে নেবেন …
Follow me on Facebook
Check out my Website