সেদিন চট্টগ্রাম থেকে পরিচিত এক ছোট ভাই ফোন করে সালাম ও ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়ের পর আমাকে জিজ্ঞেস করে আচ্ছা ভাইয়া, কোথাও যোগদানের পূর্বে কিভাবে বুঝবো কোম্পানিটি ভালো নাকি সমস্যাযুক্ত?
প্রতি উত্তরে আমি ভালো-খারাপ ডিফাইন না করে ব্যাপারটা ভিন্ন ভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করি যাতে করে সে কাঙ্ক্ষিত প্রতিষ্ঠান খুঁজে নিতে পারে।
আমি তাকে বলি আসলে ভালো কোম্পানির নাম বললেই আমাদের চোখের সামনে ভেসে উঠে এফএমসিতে ইউনিলিভার, রেকিট বেনকিজার, নেসলে, পিএনজি কিংবা ম্যারিকোর বহুজাতিক কোম্পানির নাম। তেমনিভাবে পেইন্টসের জগতে বার্জার, টোব্যাকোতে বিএটি কিংবা ফিলিপ মরিস, ব্যাংক সেক্টরে এইচএসবিসি বা এসসিবি, ফুটওয়্যারে বাটা, টেলকোতে গ্রামীণফোন, মোবাইল মানি ট্রান্সফারে বিকাশ সন্দেহাতীত ভাবে সেরা।
কিন্তু এর বাইরেও দেশে হাজার হাজার কোম্পানি রয়েছে। সব কোম্পানি সম্পর্কে সবার পক্ষে সঠিক তথ্য সংগ্রহ করা কিংবা জানা সম্ভব না। আবার সবার পক্ষে নামকরা সব বহুজাতিক কোম্পানিতে সুযোগ পাওয়াও সম্ভব হয়ে উঠেনা। এই অবস্থায় তাহলে করণীয় কী?
আমি মনে করি, কোথাও ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে যদি দেখেন নির্দিষ্ট সময়ে ইন্টারভিউ শুরু হয়েছে এবং তাঁরা আপনাকে ভিআইপির মত ট্রিট দেওয়ার চেষ্টা করছে, যথাসম্ভব আপ্যায়ন করছে, যথেষ্ট ভদ্রতা আর বিনয়ী আচরণ করছে; প্রাথমিকভাবে ধরে নিন কোম্পানিটির কালচার ভালো।
তবে ফাইনাল সিদ্ধান্ত নেওয়ার পূর্বে নিচের সাতটি বিষয় সম্পর্কে জানতে চেষ্টা করুন যা আপনাকে তুলনামূলক ভালো প্রতিষ্ঠান খোঁজে পেতে সহায়তা করবে।
১। নতুন কর্মী নিয়োগের পর Induction প্রোগ্রাম যথাযথভাবে আয়োজন করা হয় কিনা। জয়েনিংয়ের দিন কর্মীদের ভালভাবে স্বাগত জানানো হয় কিনা, সেটিও বিবেচনায় নিন।
২। যেকোন ভালো কাজের জন্যে কর্মীদের Appreciate করা হয় কিনা।
৩। প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা অফিসের বাইরেও নিজেদের মধ্যে সময় কাটায় কিনা। কারণ ভালো কর্ম পরিবেশের কর্মীরা অফিসের কাজের বাইরে একে অন্যের সাথে টাইম স্পেন্ড করতে পছন্দ করে থাকে।
৩। কর্মীদের দক্ষতা উন্নয়নে ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করে কিনা এবং কর্মীদের গ্রো করার সুযোগ করে দেয় কিনা। । ভালো কোম্পানি মাত্রই কর্মী দেরকে ট্রেনিং ও ডেভেলপমেন্টের জন্য কাজ করে থাকেন।
৪। বিদায়ী কর্মীর সাথে মার্জিত ব্যবহার ও সর্বোত্তম সহযোগীতা নিশ্চিত করা হয় কিনা।
৫। মাসের ৫ তারিখের মধ্যে কর্মীদের স্যালারি পরিশোধ করে কিনা।
৬। “Employee Turnover” কেমন সেটা জানার চেষ্টা করুন যা আপনাকে কোন কোম্পানির অভ্যন্তরীণ সমস্যা, কোম্পানির কর্ম পরিবেশ ও মেধাবী কর্মীকে প্রতিষ্ঠানে ধরে রাখার ক্ষমতা সম্পর্কে বুঝতে সহায়তা করবে। “Employee Turnover” যত কম হবে, কোম্পানির কর্ম পরিবেশ তত ভালো হবে। সুতরাং খোঁজ নিয়ে জেনে নিন “Employee Turnover” রেট কম কিনা।
৭। কোন কোম্পানির সাবেক কর্মীরা পুনঃরায় ঐ কোম্পানিতে ফিরে যেতে আগ্রহ প্রকাশ করে কিনা।
এই সাতটি প্রশ্নের উত্তর যত বেশী হ্যাঁ সূচক হবে, কোম্পানির কর্পোরেট কালচার তথা সার্বিক অবস্থা ততো বেশী ভালো মানের হবে বলে প্রাথমিক ভাবে ধরে নিতে পারেন। সুতরাং কোথাও জয়েন করার পূর্বে অবশ্যই উল্লেক্ষিত বিষয় সমূহ বিবেচনায় রেখে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে ভুল হবার সম্ভাবনা কমে আসবে বলে আশা করা যায়।
আরো পড়ুনঃ কর্পোরেট জগতের প্রাথমিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আপনি কতটুকু প্রস্তুত?
Follow me on Facebook . Check out my Website .