আকাশ ভরা স্বপ্ন নিয়ে হাজারো গ্র্যাজুয়েটদের মতো সারোয়ার আলমও গত মার্চে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেছেন। বিজনেজ ফ্যাকাল্টিতে ভর্তি হয়ে মেজর হিসেবে বেঁছে নিয়েছিলেন বিপণন কে। ইচ্ছে ছিলো গ্র্যাজুয়েশন শেষ করা মাত্র কর্পোরেট জগতে পা রাখবেন।
আবার তারই বন্ধু আহনাফ আহমেদের শেষ সেমিস্টারের সব কটা পরীক্ষা আটকে গেছে মহামারি করোনার কারণে। ভেবেছিলেন আটঘাট বেঁধে দুই বন্ধু চাকুরী খোঁজা শুরু করবেন। কিন্তু মহামারি করোনায় সব বাঁধা পড়ে গেল।
অন্যদিকে তাদের অন্য বন্ধু তাসরিফ জাকারিয়া যিনি বিসিএস দিয়ে দেশসেবায় নিজেকে নিয়োজিত করার পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছিলেন কিন্ত বিসিএস এর প্রক্রিয়াগত দীর্ঘ সূত্রতা তাকে প্রতিনিয়ত বিচলিল করে তুলছে। ২০১৭ সালের জুন মাসে ৩৮তম বিসিএসের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়েছিলো যার ফাইনাল নিয়োগের অনুরোধ আসে চলতি ২০২০ সালের জুলাই মাসে। এসব ভেবে তিন বন্ধুরই অল্পবিস্তর হতাশার মধ্যে দিয়ে দিন কাটছে। দেশে হাজারো তরুণ গ্র্যাজুয়েটদের বর্তমান অবস্থাও এই তিন বন্ধুর মতোই।
আমি সদ্য গ্র্যাজুয়েট কিংবা যারা গ্র্যাজুয়েশান শেষ করতে যাচ্ছেন তাদের সবাইকে অনুরোধ করবো, অনুগ্রহ করে একটু ভেবে দেখুন তো, করোনা মহামারীর বিষয়টি কি আমাদের নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আছে? মোটেও নেই। কাজেই হঠাৎ পাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত সময়টাকে সুন্দরভাবে কাজে লাগিয়ে আগামীর জন্যে নিজেকে আরো ভালো ভাবে প্রস্তুত করাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
সব চেয়ে ভালো হয় যদি নিজেকে একটি রুটিনের মধ্যে নিয়ে আসতে পারেন। দিনের একটি নিদিষ্ট সময় আগামীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় নিজের উন্নয়নের কাজে ব্যয় করার পরিকল্পনা করতে পারেন।তাতে করে এর সুফল ভবিষতে এর পাবেন।
১। প্রথমেই বলবো একটি জব সেক্টর ঠিক করে নিতে চেষ্টা করুন। তাতে করে জবের জন্যে প্রস্তুতি নিতে সহজ হবে।
২। তারপর শুরু করে দিন ঐ কাঙ্ক্ষিত সেক্টরে কর্মরত মানুষজনের সাথে নেটওয়ার্কিং, যাতে করে আপনি ওই ইন্ড্রাস্টি সম্পর্কে ধারনা নেওয়ার সু্যোগ তৈরি হয়। আশা করি করোনার এই দিনগুলোয় আপনি যে কারো কাছে সময় চেয়ে অন্তত আশাহত হবেন না।
৩। এরপর নিজের একটি সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন রিজুমি বানিয়ে নিন। তাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কো-কারিকুলার এক্টিভিটি গুলো একে একে তুলে ধরুন। প্রয়োজনে অভিজ্ঞদের সহায়তাও নিতে পারেন।
৪। LinkedIn-এ একটি প্রোফাইল খুলুন এবং রিজুমির মতো করে একেও সুন্দর ভাবে সাজিয়ে নিন। নেটওয়ার্ক বাড়ানোর পাশাপাশি LinkedIn এ জব সার্চ করতে থাকুন। ফ্রেশারদের জন্যে পূর্বে প্রকাশিত জব সারকুলারগুলো বিস্তারিত পড়ার চেষ্টা করুন; তাতে করে এক ধরনের আইডিয়া পাবেন, কোথায় কি রকম যোগ্যতা ও দক্ষতা চাওয়া হচ্ছে।
৫। ইন্টার্ভিউ এবং জব Assessment Test এর জন্যে নিজেকে প্রস্তুত করতে পারেন। প্রয়োজনে bcorporate নামক প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন যারা সদ্য গ্র্যাজুয়েটদের নিয়ে কাজ করে থাকে।
৬। ভাষাগত দুর্বলতা থাকলে তা কাটিয়ে উঠতে সচেষ্ট হোন; বাংলা এবং ইংরেজী উভয় ক্ষেত্রে শুদ্ধ উচ্চারণ ও সাবলীল বাচনভঙ্গির উপর জোর দিন। তাতে করে আপনি অনেকের থেকে এগিয়ে থাকবেন বলে আমার বিশ্বাস।
৭। অনলাইনে কোথাও Career Coaching Session হলে তাতে অংশ নিতে পারেন কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত এলাইম্নিদের সাথে যোগাযোগ করেও নিজেকে আপডেট রাখতে পারেন।
মোটামোটি ভাবে ধরে নেন যে, আরো ৬ মাস থেকে ১ বছর জব মার্কেটে মন্দাভাব চলতে পারে। আশাহত হওয়ার কিছু নেই, করোনার আঁধার কেটে আলোর দেখা মিলবেই ইনশা আল্লাহ্। আর তখন যেন নিজেকে মেলে ধরতে পারেন সে জন্যে এখনকার সময়কে কাজে লাগান।আর হ্যাঁ, এখনকার সময়ে কর্পোরেটে কোথাও পার্ট টাইম/ ফুল টাইম যে কোন কাজে সুযোগ পাওয়া মাত্র জয়েন করে অভিজ্ঞতা অর্জনের মাধ্যমে নিজেকে এগিয়ে নিতে পারেন।
সবার জন্য শুভ কামনা রইল।
পড়ুন – বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাসের বাইরে যা করা যেতে পারে!
কর্পোরেট জগতের প্রাথমিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আপনি কতটুকু প্রস্তুত?
Follow me on Facebook . Check out my Website .