যেভাবে ক্যারিয়ার নির্বাচন, পরিকল্পনা ও প্রণয়ন প্রস্তুতি গ্রহণ করবেনঃ

গ্র্যাজুয়েটদের চাকুরীর বাজার সম্পর্কে জানাও জরুরী
January 1, 2018
আপনার লিডারশীপ স্টাইল কি ?
January 4, 2018

ক্যারিয়ার নির্বাচন, পরিকল্পনা প্রণয়ন ও প্রস্তুতি গ্রহণ

ক্যারিয়ার গঠনের জন্য বর্তমান সময়ের গ্র্যাজুয়েটদেরকে এক কঠিন প্রতিযোগীতার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। বিশ্বায়ন ও উন্নত প্রযুক্তির এই সময়ে বেড়ে উঠা তরুণ গ্র্যাজুয়েটদের কাছ থেকে নিয়োগকর্তাগণও অধিক দক্ষতা প্রত্যাশা পোষণ করে থাকেন। ফলে তারাও চান কেবল সেরা গ্র্যাজুয়েটদেরই তাদের প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দিতে। যারা আগামীতে নেত্বত্ত্ব দিয়ে প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন।

ক্যারিয়ার নির্বাচনের পূর্বে আপনার নিজের ভ্যালুস, আগ্রহ, দক্ষতা, ট্যালেন্ট কিংবা ব্যাক্তিত্বের ধরণ কেমন তা জানাও জরুরী। এবং এইসব বিবেচনায় নিয়েই ক্যারিয়ার নির্বাচন করা উচিৎ। চাইলে গুগলের মাধ্যমে ‘সেলফ এসেসম্যান্ট টেস্টেও’ অংশ নিতে পারেন যা আপনাকে আপনার সম্পর্কে একটা পরিষ্কার ধারণা দেবে। তবে আমাদের দেশের আর্থ-সামাজিক পেক্ষাপটে অনেক সময় নিজের পছন্দের চেয়ে পারিবারিক চাহিদা কিংবা পরিস্থিতির কারণে অন্য পেশাকেও বেছে নিতে দেখা যায়।

ক্যারিয়ার পরিকল্পনা প্রণয়নের পূর্বে ইন্ডাষ্টি সম্পর্কে ধারণা নিনঃ

প্রথমতঃ আপনাকে বিভিন্ন ইন্ডাষ্টি সম্পর্কে ভালো ধারণা নিতে হবে, জানতে হবে কোন ইন্ডাষ্টি কিভাবে কাজ করে থাকে, প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানের আলাদা আলাদা বিভাগ রয়েছে সেখানে লোকজন কিভাবে কাজ করে থাকেন, কিংবা ভবিষৎে আর কোন কোন প্রতিষ্ঠান কোন সেক্টরে বিনিয়োগ করতে যাচ্ছেন, কোন সেক্টরে কি রকম কাজের দক্ষতা প্রয়োজন এইসব খুঁটিনাটি সম্পর্কে জানার চেষ্টা করুন। সেই সাথে নিজের কি কি দক্ষতা আছে, কোন কোন দক্ষতা অর্জন করতে হবে সেসবের দিকে নজর দিন। তারপর অভিজ্ঞ ও পরিচিতজনের সহায়তা নিয়ে ক্যারিয়ার নির্বাচন করুন, সম্ভব হলে যে সেক্টরে কাজ করতে আগ্রহী সেই সেক্টরের কিছু প্রতিষ্ঠানের নামের তালিকাও লিপিবদ্ধ করে রাখতে পারেন; তাতে আপনার জন্য প্রস্তুতি নিতে সুবিধা হবে। এক্ষেত্রে এমন প্রতিষ্ঠান নির্বাচন করুন যেখানে আপনি কাজ করে প্রচুর শেখার পাশাপাশি আনন্দও পাবেন। যদি সম্ভব হয় তবে ক্যারিয়ারের স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদী দু’টো পরিকল্পনা তৈরি করে রাখুন।


ক্যারিয়ার নির্বাচনের পূর্বে সেক্টর নির্বাচন করুনঃ

ইন্ডাষ্টি সম্পর্কে ধারণা নেবার পর আপনার কাজ হচ্ছে পছন্দমতো একটি নিদিষ্ট সেক্টর বেছে নেওয়া। আর আপনার পরিকল্পনার সুবিধারতে ব্যাংক এবং বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানেকে আপনি একটি সেক্টর ধরতে পারেন। আমাদের দেশে একাধিক মোবাইল ও মোবাইল হ্যান্ডসেট কোম্পানি রয়েছে, সুতারাং টেলিকমিউনিকেশনকে আপনি একটি সেক্টর ধরে এগিয়ে যেতে পারেন। বাংলাদেশে রয়েছে অসংখ্য বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান, এক্ষেত্রে আপনি বহুজাতিক-এফএমসিজি, বহুজাতিক-টোব্যাকো, বহুজাতিক-ফুটওয়্যার , বহুজাতিক-সিমেন্ট, বহুজাতিক- হোম এপ্লাইন্স, বহুজাতিক-কুরিয়ার সারভিস, বহুজাতিক-পেইন্টস এভাবে ভাগ করে নিতে পারেন। আবার রয়েছে শত শত দেশীয় কর্পোরেট হাউজ, গার্মেন্টসসহ অসংখ্য প্রতিষ্ঠান। রয়েছে বিসিএস সহ হাজারো সরকারী ও স্বায়ত্ব শাসিত প্রতিষ্ঠানে কাজের সুযোগ। আপনি আপনার আগ্রহের সেক্টর নির্বাচন করে সামনে এগিয়ে যান।

কাজের ক্ষেত্র সম্পর্কে ধারণা নিনঃ

আবার সেক্টর ঠিক করার পর আপনি প্রতিষ্ঠানের কোন বিভাগে কাজ করতে চান তাও ভেবে রাখতে পারেন যা আপনার জব প্রস্তুতিতে কাজে দেবে। যেমন ধরা যাক আপনি মার্কেটিং নিয়ে পড়াশোনা করছেন সেক্ষেত্রে আপনি এডভারটাইজং, ব্র্যান্ডিং, মার্কেট রিসার্চ, মিডিয়া প্লানিং , পাবলিক রিলেশন, কাস্টমার সার্ভিস কিংবা সেলস এর যে কোন একটিকে কাজের ক্ষেত্র হিসেবে নির্বাচন করতে পারেন। আর এসব ব্যাপার নিয়ে আপনাকে চিন্তা ভাবনা শুরু করতে হবে তৃতীয় বর্ষের শুরুর সময় টা থেকেই , তাহলে আপনি প্রিপারেশন নিতে হাতে বেশ সময় পাবেন এবং জব পেতে এটি আপনাকে অন্যদের থেকে এগিয়ে রাখবে।

জবের জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিন

ক্যারিয়ার নির্বাচনের পর প্রস্তুতি শুরু করে দিনঃ

ক্যারিয়ার নির্বাচনের পর তৃতীয় বর্ষের শুরুর সময় থেকেই আপনি প্রিপারেশন শুরু করে দিন। সত্যি বলছি, এ দিকটাতেই অনেকে পিছিয়ে থাকেন সঠিক ও যথাযথ সময়ে ক্যারিয়ার প্ল্যানিং এর অভাবে। যেখানে অনেকেই বিবিএ/অনার্স ও এমবিএ/মাস্টার্স এর মাঝামাঝি সময়ে জব মানেজ করে ফেলেন, কিংবা এমবিএ/মাস্টারের পর খুব কম সময় বসে থাকেন, সেখানে অনেকে এমবিএ/মাস্টার্স শেষ করার পর সবে মাত্র চাকুরীর খোঁজখবর নিতে শুরু করেন। তার মানে অনেকেই ক্যারিয়ার প্ল্যানিং টা সঠিক সময়ে করছেন না, ফলে ক্যারিয়ারে পিছিয়ে পড়ছেন। লক্ষ্য করলে আপনি এমন কাউকে পেতেও পাবেন যে কিনা আপনার ১/২ বছরের জুনিয়র কিন্তু একই পদে ইন্টার্ভিউ দিতে এসেছেন। এমনও অনেক আছে এমবিএ/মাস্টার্স করার এক থেকে দেড় বছর পরও কাঙ্ক্ষিত জব পায়নি। কারন হচ্ছে সঠিক পরিকল্পনার অভাব কিংবা সে নিজেকে সেভাবে প্রস্তত করেনি জব মার্কেটের জন্যে।

যাহোক, এবার আসল কথায় আসি। অনেকেই বিবিএ/অনার্স শেষ করে সিনিয়র কিংবা পরিচিতদের নক করেন-কি জব করবেন‚ কোথায় জব করবেন‚ কিভাবে জব পাওয়া যায় এসব নিয়ে। অনেকে আবার মাস্টার্স শেষেও ক্যারিয়ার প্ল্যানিং নিয়ে কথা বলার জন্য নক দেন। প্রশ্ন হলোঃ এতোটা দেড়ী করে কেন শুরু করছেন? এখন এই পর্যায়ে এসে কেন পরিকল্পনা করবেন? এটা তো আপনার পরিকল্পনা বাস্তনায়নের সময়। তার মানে আপনি জবের জন্য প্রস্তুত নন? তবে যারা প্রস্তত আছেন, নিশ্চিতভাবেই তারা অনেক এগিয়ে যাবেন। আর যারা প্রস্তত নন, আর এক মুহূর্তও দেড়ী নয় । ঘাবড়ে না গিয়ে বরং আঁটঘাঁট বেঁধে নেমে পড়েন, জয় আপনার হবেই ইন-শা-আল্লাহ্ । তবে মনে রাখা জরুরী যে খুব ভেবে চিনতে সিদ্ধান্ত নিন, যেনতেন একটা জব পেলেন আর পরিকল্পনাবিহীন অমনি ঢুকে গেলেন তা আপনার জন্য মঙ্গল বয়ে আনতে নাও পারে। তারচেয়ে বরং সিনিয়র কিংবা অভিজ্ঞদের পরামর্শ নিন। অহেতুক সময় ক্ষ্যাপন করবেন না। অনেকেই সঠিক প্রস্তুতির অভাবে খেই হারিয়ে পরিকল্পনা বিহীন যে কোন জবে জয়েন করে থাকেন যেখানে হয়তোবা তার মোটেও আগ্রহ ছিলনা। ফলে কিছুদিন কাজ করার পর চ্যালেঞ্জ নিতে না পেরে হাল ছেড়ে দিয়ে নতুন জব খুঁজতে বেড়িয়ে পড়েন।

ধরুন, আপনি ব্যাংক কে জব করবেন বলে ঠিক করেছেন। এক্ষেত্রে সার্কুলার দেখে জেনে নিন কোন ব্যাংক কি ধরণের দক্ষতা আর রেজাল্ট চায়, কিভাবে প্রস্তুতি নিতে হয় ইত্যাদি। আপনি চাইলে ব্যাংক জবের প্রস্তুতি কোচিং করায় এমন কোচিং সেন্টারের সহায়তা নিতে পারেন। পরিচিত ব্যাংককার ভাইদের সাথে সরাসরি কথা বলার চেষ্টা করেন। আপনারা অনেকেই তো আড্ডা মারতে বিভিন্ন জায়গায় যান‚ সেটা নাহয় এখন থেকে ব্যাংকার বড় ভাই আর পরিচিত ব্যাংককারদের সাথে দিন।

সত্যি বলতে আপনি যদি খুব সাহসী এক জন হয়ে থাকেন, যে কোন চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত থাকেন, মানুষ কে ইমপ্রেস করতে পারেন, , ভালোভাবে নিজেকে উপস্থাপন করতে পারেন, দৌড়-ঝাঁপ ভালোই পারেন, ক্রিয়েটিভ কিছু করে দেখাতে চান, সদা নতুনত্ব চান, গ্রুপে কাজ করতে ভালোবাসেন, তবে আপনি চেষ্টা করে দেখতে পারেন মার্কেটিং, ব্যান্ডিং কিংবা সেলস্ জগতে কাজ করার সুযোগ হয় কিনা !!!

আপনার যদি এক্সটা কারিকুলার বা কো-কারিকুলারে পারদর্শী হয়ে থাকেন, বিজনেস কেইস সমাধানে পটু আর ভালো ইংরেজী বলতে পারেন আবার যোগাযোগ দক্ষতা আছে তবে আপনি চেষ্টা করে দেখুন সুযোগ পেয়ে যেতে পারেন নামকরা কোন বহুজাতিক কোম্পানিতেও।

আপনি যে সেক্টরে যেতে চান, পরিচিত আর সিনিয়রদের পরামর্শে সেভাবেই প্রস্তুতি নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যান। আর বিসিএস বা সরকারী অন্যন্য জবের জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির পাশাপাশি নামকরা কোন এক কোচিংয়ের সহায়তা যেমন নিতে পারেন, তেমনি সিনিয়র কারো পরামর্শও নিতে পারেন।


জব সার্কুলার যেভাবে পাবেনঃ

নেসলে, ইউনিলিভার, ম্যারিকো, রেকিট বেঙ্কিজার, বিএটিবি, গ্রামীণফোন, এয়ারটেল, রবি‚ সিঙ্গার‚ কোটস বাংলাদেশ, গ্রাস্কোস্মিথলাইন‚ আরলা ফুড‚ নিউজিল্যান্ড ডেইরীস‚ হোলসিম সিমেন্ট‚ রুবি সিমেন্ট, ডি এইচ এল , বাটা সু , কোকা-কোলা, পেপসি, প্রাণ, স্কয়ার, ওয়ালটন, সহ অন্যান্য বহুজাতিক ও দেশীয় কোম্পানির ওয়েবসাইট ঘুরে আসতে পারেন। দেশে অনেক এইচ.আর. কন্সালটেন্সি ফার্ম আছে যারা আপনাদের নিয়ে কাজ করে থাকে। অনেক বহুজাতিক ও দেশীয় কোম্পানিই এসব এইচ.আর ফার্মকে নতুন লোক নিয়োগের দায়িত্ব দিয়ে থাকে কিংবা ওদেরকে মিডিয়া হিসেবে কাজ দেয়। এই যেমন ধরুন ফার্স্ট সিলেক্ট বাংলাদেশ, গ্রো এন এক্সেল, এনরুট, ট্যালেন্ট সেন্টিক ,এইচ আর কাইটস, কর্পোরেট ক্যারিয়ার টিপস সহ রয়েছে অসংখ্য প্রতিষ্ঠান। তাছাড়া বিডিজবস‚ লিঙ্কডইন তো সব সময় আপনার পাশে-ই আছে, রয়েছে বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপ।

প্রয়োজনে মেন্টরের সহায়তা নিন

মেন্টরের সহায়তা নিন এবং নেটওয়ার্ক গড়ে তুলুনঃ

খুব ভালো হয় যদি আপনার কাঙ্ক্ষিত ক্যারিয়ারের সাথে যুক্ত অভিজ্ঞ কাউকে মেন্টর হিসেবে নির্বাচন করে নিতে পারেন যিনি আপনাকে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দিয়ে পথ দেখাবেন। সেটা সম্ভব না হলে জবের ব্যাপারে খোঁজ নিতে পারেন আপনার বিভাগের আর পরিচিত সিনিয়রদের থেকে। আপনি যেসব কোম্পানিতে কাজ করতে আগ্রহী সেসব কোম্পানির খোঁজ খবর নিতে সর্বদা যোগাযোগ রাখুন ওখানে কর্মরত আপনার পরিচিত জনদের সাথে। সরাসরি কথা বলতে পারলে আরও ভালো হয়। আর চেষ্টা করুন নিজের মতো করে একটা নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে। লিঙ্কডইন এক্ষেত্রে আপনাকে প্রচুর সহায়তা করবে। কর্পোরেট জগতে ভাল করতে হলে নেটওয়ার্ক এর বিকল্প নেই।

অবশেষে সবার জন্য শুভ কামনা রইল।

পড়ুন – বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাসের বাইরে যা করা যেতে পারে!

কর্পোরেট জগতের প্রাথমিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আপনি কতটুকু প্রস্তুত?

Follow me on Facebook . Check out my Website .

 

Hossain Joy
Hossain Joy
Hossain Joy is a seasoned professional in the corporate world, bringing a wealth of experience and insights to the table. With a successful career spanning 12 years, he has navigated the intricacies of the corporate landscape with resilience and determination. Hossain Joy is not only an accomplished writer but also a mentor who is passionate about sharing the valuable lessons learned throughout his journey. He has authored the inspiring book "Journey to My First Corporate Job," offering a compelling narrative of his early career experiences, challenges, and triumphs. In addition to his book, Hossain Joy extends his reach through a thought-provoking blog, where he imparts practical advice and wisdom gained from years of corporate life. He aims to guide and inspire young professionals, providing them with the tools to navigate their own paths to success. Whether through the written word or personal mentorship, Hossain Joy remains dedicated to empowering the next generation of professionals, fostering a community of growth, resilience, and achievement. Connect with Hossain Joy on Facebook.com/Hossain.Joy for more insights and updates on his journey and upcoming projects.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *